মন্ত্রীসভা থেকে ‘পদত্যাগ’ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক!

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (১৪ জানুুয়ারি) রাতে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন সদস্য। তার দল এবার সরকার গঠন করলে তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারেরও (ইকোনমিক সেক্রেটারি) দায়িত্ব পান। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গে তার নাম উঠে আসার প্রেক্ষাপটে তিনি পদত্যাগ করলেন। অভিযোগ ওঠে, তিনি তার খালা শেখ হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে টিউলিপের ভোগ-দখলে থাকা দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য প্রকাশ্যে আসে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককে হুমকি, ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করানোসহ টিউলিপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় দলের ভেতরে-বাইরে চাপে পড়েন তিনি।

গার্ডিয়ানের সূত্র বলছে, কিয়ার স্টারমার টিউলিপ সিদ্দিককে সমর্থন করছিলেন। অভিযোগ ওঠার পরও তিনি তাকে বরখাস্ত না করায় বিরোধী দলও সমালোচনামুখর হয়। এদিকে টিউলিপও নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ রাজনীতিতে আলোড়ন তোলা এ ঘটনায় শেষমেশ কিয়ার স্টারমার সরাসরি টিউলিপের পক্ষ থেকে সরে আসেন।

বাংলাদেশের সাথে শেখ পরিবারের সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টিউলিপকে আরও সচেতন থাকার পরামর্শ দেন স্টারমার। এদিকে পদত্যাগ করলেও টিউলিপ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তিনি তার সব আর্থিক স্বার্থ এবং সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করেন। তবুও বর্তমান পরিস্থিতি সরকারের জন্য বিভ্রান্তিকর হয়ে ওঠায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, টিউলিপ সিদ্দিকের দখলে থাকা আরও দুটি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। প্রথম ফ্ল্যাটটি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পেয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে ওই ব্যবসায়ীর।

খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তবে ওই ফ্ল্যাটের বিনিময়ে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি টিউলিপ সিদ্দিককে। বিনামূল্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের তথ্য ওঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্রে।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিতে বলা হয়েছে, বিনামূল্যে পাওয়া ওই ফ্ল্যাট লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে অবস্থিত। ২০০৪ সালে ফ্ল্যাটটি টিউলিপকে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় যে ফ্ল্যাটের কথা বলা হচ্ছে তাতে টিউলিপ বসবাস করতেন। এটি তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূত্রে পাওয়া। তবে এই ফ্ল্যাটটি সরাসরি টিউলিপকে দেওয়া হয়নি। তার বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তিকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন মঈন গনি নামের একজন বাংলাদেশি আইনজীবী।

তিনি হাসিনা সরকারের লোক বলে পরিচিত। এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিভিন্ন দুর্নীতিতে টিউলিপের সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনাসহ তার দলের নেতাদের বিচার শুরু হলে এ নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *