বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন নিয়ে ট্রাম্প মিথ‍্যাচার করেছেন: ড. ইফতেখারুজ্জামান

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালী করতে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান একে মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেছেন।

ট্রাম্পের বক্তব্যে বলা হয়, মাত্র দুই সদস্যের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালী করতে কাজ করেছে এবং তারা ২৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ পেয়েছে। তবে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে ২৯ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

মুর্শেদ হাসিবের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে বিভিন্ন সূত্র খতিয়ে দেখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে স্ট্রেন্থেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (SPL Bangladesh) নামের একটি প্রকল্পের খোঁজ পাওয়া গেছে। এটি ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (DI) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করছে।

২০১৭ সাল থেকে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সাথে সংলাপ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরও ১০ মাস বাড়ানো হয়েছে।

তবে ট্রাম্পের উল্লেখ করা সংস্থাটি ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাংলাদেশে কাজ করা ৭৬টি এনজিওর গত সাত বছরের আর্থিক লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইউএসএআইডির (USAID) মাধ্যমে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার (২৯ মিলিয়ন ডলার) অনুদান ছাড়ের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এনজিও ব্যুরোর এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো সংস্থা বা প্রকল্পের তথ্য নেই, যেখানে ২৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তহবিলের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা অর্থ কড়া নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে ব্যয় করা হয়,

এবং এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধিত কোনো সংস্থার মাধ্যমে এই অর্থের লেনদেন হয়নি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার, অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন। বাংলাদেশে বিদেশি অর্থায়নের প্রতিটি লেনদেন কঠোরভাবে তদারকি করা হয়। মাত্র দুইজন কর্মী থাকা একটি সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার দাবি অবাস্তব এবং অগ্রহণযোগ্য।”

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দক্ষতা বিষয়ক বিভাগ জানায়, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে এবং এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *