দু’র্ঘটনা থেকে বাঁচতে অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেছে ‘পেটগো’

প্রায় প্রতিদিনই সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য কুকুর-বিড়াল। আর এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন গাড়ির চালক-আরোহীরাও।

এ ধরণের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেছে অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার প্ল্যাটফর্ম ‘পেটগো’। অন্ধকার রাস্তায় সহজেই প্রাণীদের দৃশ্যমান করতে তাদের গলায় পড়ানো হচ্ছে রিফ্লেক্টিং বেল্ট।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) মোহাম্মদপুর এলাকায় থেকে তাদের এ কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথম দিনে অন্তত ২০০ কুকুরের গলায় এই বেল্ট পড়ানো হয় বলে জানা গেছে।

পেটগোর প্রতিষ্ঠাতা সাকিব মেহেদী বলেন, জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় মানুষের পাশাপাশি সমাজে প্রাণীদেরও জীবনের মূল্য অপরিসীম। আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে, এই প্রাণীদের জন্য আমাদের সমাজকে নিরাপদ আভাসভূমি হিসেবে তৈরী করে দেয়া।

রিফ্লেক্টিং বেল্ট পড়ানোর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এই বেল্ট পড়া থাকলে দূর থেকে গাড়ি বা বাইকের চালক বুঝতে পারবেন সামনে কোনো কুকুর বা বিড়াল আছে। চালক সহজেই তার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন। ফলে এটা উভয়পক্ষের জন্যই কল্যাণকর।

তিনি বলেন, প্রথম দিনে প্রাথমিকভাবে আমরা ২’শর মতো বেল্ট পড়িয়েছি। আমাদের আপাতত লক্ষ্য ঢাকা শহরের সব কুকুরকে এই বেল্ট পড়ানো। আমাদের এ কার্যক্রম চলতে থাকবে।

আদাবরের স্থানীয় বাসিন্দা তমাল আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে রাতে এলাকায় ফিরে দেখলাম প্রায় সব কুকুরের গলায় বেল্ট। আমার বাসার গলির দৃশ্যই যেন বদলে গেছে। আমি প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে জেনে খুব ভালো লেগেছে। তাদের এ ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

পেটগোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোবাশ্শির ফাহাদ বলেন, শুধু গাড়ির দুর্ঘটনা নয়, বেল্ট পড়া কুকুর-বিড়াল দেখলে আমরা ধরে নিই- এই প্রাণী প্রভুহীন নয়।

সেক্ষেত্রে নির্যাতনের পরিবর্তে তাদের সমীহ করি অনেক ক্ষেত্রেই। পেটগোর এই কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজে এ বার্তা দেবে, বেল্ট পড়ানো এ প্রাণীগুলোর দেখভাল করছে কেউ। ফলে সমাজে অ্যানিম্যাল এবিউজ কমবে।

এক সেনা সদস্যকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে জীবন্ত ক’বর!

চুয়াডাঙ্গা শহরের জান্নাতুল মাওলা কবরস্থান থেকে শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় এক সেনা সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। অচেতন অবস্থায় উদ্ধারকৃত সেনা সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া সেনা সদস্যের নাম শরিফুল ইসলাম শান্ত। তিনি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ভিলিজার গ্রামের বাসিন্দা।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ৬ তলার ৬০৫ নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি, ফলে তিনি সেনাবাহিনীর কোন ইউনিটে কর্মরত ছিলেন তা জানা সম্ভব হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান জানিয়েছেন, সেনা সদস্য শরিফুল ইসলাম শান্ত ১৫ দিন আগে ট্রেনিংয়ের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন।

কীভাবে তিনি চুয়াডাঙ্গায় এলেন এবং অচেতন অবস্থায় কবরস্থানে পাওয়া গেল, তা তদন্তের বিষয়। তার গ্রামের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা এলে তার পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। পুলিশের ধারণা, এটি একটি পরিকল্পিত হ’ত্যাচেষ্টা হতে পারে।

তাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার উদ্দেশ্যে হাত-পা ও মুখ বাঁধা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অচেতন অবস্থায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জ্ঞান ফিরলে তার কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ নেওয়া হবে।

এক ওসি পালালেন আর ‘প্রত্যাহার’ হলেন আরেক ওসি!

পুলিশ হেফাজত থেকে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ওসি শাহ আলমের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বর্তমান ওসি মহিবুল্লাহকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তাকে প্রত্যাহার করে সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরা পূর্ব থানা হেফাজত থেকে পালিয়ে যান শাহ আলম, যাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় আগের দিন বুধবার কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এ ঘটনায় দায়িত্বে ‘অবহেলার’ অভিযোগে এএসআই সাজ্জাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। উত্তরা পূর্ব থানা থেকে আদালতে নেওয়ার প্রস্তুতির মধ্যে শাহ আলম পালিয়ে যান বলে জানিয়েছিলেন ওসি মহিবুল্লাহ।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় ওসি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন শাহ আলম। আন্দোলনের সময়কার ভূমিকা নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর উত্তরা পূর্ব থানায় দায়ের হওয়া হ’ত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়।

এবার টিউলিপকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে ‘বিকল্প’ কাউকে খুঁজছে যুক্তরাজ্য সরকার

টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তার দল লেবার পার্টি। বর্তমানে সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্বরত টিউলিপকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিলে কারা সেই পদে দায়িত্ব নিতে পারেন, সেরকম একটি খসড়া তালিকাও নাকি প্রস্তুত করা হয়েছে।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এমন তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছেন, যেখানে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করলে তার স্থলাভিষিক্ত কে হতে পারেন।

সূত্র বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, টিউলিপের বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট নিয়ে ওঠা অভিযোগ ও শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসার পরই এই আলোচনা শুরু হয়।

তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র টিউলিপকে তার পদ থেকে সরিয়ে ওই পদে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরির বিষয়টিকে ‘সম্পূর্ণ অসত্য’ বলে দাবি করেছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারও বলেছেন— তিনি টিউলিপ সিদ্দিকের উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছেন।

তবে সংবাদমাধ্যমটির সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ অনানুষ্ঠানিকভাবেই টিউলিপের উত্তরসূরি খোঁজা শুরু করছেন। গত সপ্তাহেই কিছু কর্মকর্তাকে তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি নির্ধারণে কাজ করতে দেখা গেছে।

এদিকে সোমবার টিউলিপ নিজেই ঘোষণা করেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা পর্যবেক্ষকের কাছে এই বিষয়ে স্বচ্ছতার জন্য নিজেকে উপস্থাপন করবেন। ডাউনিং স্ট্রিটের বিবেচনাধীন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন র‍্যাচেল রিভসের দুই মন্ত্রীর সহকারী এলেস্টেয়ার স্ট্রাথার্ন এবং ইমোজেন ওয়াকার।

অন্য প্রার্থীরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের সংসদীয় ব্যক্তিগত সচিব (পিপিএস) ক্যালাম অ্যান্ডারসন, কনিষ্ক নারায়ণ, পরিবেশ দপ্তরের পিপিএস জশ সাইমন্স এবং রেচেল ব্লেক। অ্যাটর্নি জেনারেল লুসি রিগবি এবং একজন মন্ত্রীর সহকারী ও অর্থনীতিবিদ তোরস্টেন বেল-ও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।

সার্বিক প্রেক্ষাপটের সাথে বর্তমান পরিস্থিতি— সব মিলিয়ে টিউলিপের রাজনৈতিক ভবিষ্যত ও দলে (লেবার পার্টি) তার অবস্থান সম্পর্কেও তৈরি করেছে নতুন জল্পনা-কল্পনা। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে দুর্নীতিবিরোধী নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষ্মতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি।

জুনের মধ্যেই বাস্তবায়ন, সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বড় ‘সুখবর’

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে মূল বেতনের সঙ্গে নির্দিষ্ট শতকরা হারে অতিরিক্ত অর্থ তথা মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত শিগগিরই বাস্তবায়ন করবে সরকার।

আগামী ৩০ জুনের আগেই এটা বাস্তবায়ন হবে। এবার পেনশনভোগীরাও মহার্ঘ ভাতার আওতায় আসছেন। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেসুর রহমান।

তিনি বলেন, মহার্ঘ ভাতা ইস্যুটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের। তবে আমিও একজন মেম্বর। ইতিমধ্যেই দুইটা মিটিং হয়েছে। মহার্ঘ ভাতা খুব শিগগিরিই হবে। তবে এবার ব্যতিক্রম হবে। আগে পেনশনভোগীরা মহার্ঘ ভাতা পেত না, এবার পাবে। একটা রিজেনেবল পাবে। পরের বছর ইনক্রিমেন্টের সময় এই মহার্ঘ ভাতাটা তার বেসিকের সঙ্গে যোগ হবে।

এই বাজেটেই মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বাজেটে মানে ৩০ জুনের মধ্যে, আমি বলব অবশ্যই এর মধ্যে হবে।

তার আগে হবে ইনশাআল্লাহ। মহার্ঘ ভাতায় মূল বেতনের নির্দিষ্ট শতকরা অংশ বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত দেওয়া হয়ে থাকে। এবার সেই শতকরা হার কতটুকু হবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অর্থ উপদেষ্টা বা অর্থসচিব ভালো বলতে পারবেস।

কোন মাস থেকে ধরা হবে সে বিষয়ে সচিব বলেন, অনুমান করে বলা ঠিক হবে না। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থসচিব পরিষ্কার করে বলতে পারবেন।

সিনিয়র সচিব আরও জানান, ‘৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়া ২৬৭ জনের মধ্যে বেশিরভাগই পুনরায় চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন। তাদের পুনর্বিবেচনার আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্ত শেষ। দ্রুত সময়ে এটা করা হবে।

এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় ও রুটিন নিয়ে যা জানা গেলো

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আগামী জুনের শেষ সপ্তাহে শুরু হবে। এ জন্য পরীক্ষার রুটিন প্রস্তুতের কাজ চলছে। মঙ্গলবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার এ তথ্য জানিয়েছেন।

আবুল বাশার বলেন, জুনের শেষ সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য সূচির (রুটিন) খসড়া প্রস্তুতের কাজ চলছে। আশা করছি, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সম্ভাব্য পরীক্ষা সূচি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হবে ২ মার্চ থেকে। আর ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এইচএসসির নির্বাচনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে কলেজগুলোকে। এরপর ফরম পূরণ শুরু হবে।

সাধারণত, এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারির শুরুতে ও এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলের শুরুতে হতো। কিন্তু করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে পুরো শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে।

২০২৪ সালের ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। তবে আন্দোলনের জেরে মাঝপথে এসে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বাকি পরীক্ষাগুলো নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলো না দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করেন পরীক্ষার্থীরা। পরে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার নম্বর বিবেচনায় নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ১৫ অক্টোবর ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে পাস করে ৭৭.৭৮% শিক্ষার্থী।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জয়ের সুযোগ ছিল, তবুও কেন নির্বাচনে অংশ নেননি ‘বাইডেন’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যদি তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনী দৌড়ে থাকতেন, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারতেন এবং নভেম্বরের নির্বাচনে পুনরায় জয়ী হতে পারতেন। তবে তিনি এ-ও বলেছেন, তিনি নিশ্চিত নন যে আরেকবার পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন কিনা। বুধবার প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

আগামী ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব ছাড়তে যাওয়া ৮২ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট নেতাকে ইউএসএ টুডে প্রশ্ন করেছিল, তিনি কি মনে করেন, গত নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া তার জন্য বাস্তবসম্মত ছিল? বাইডেন এর উত্তরে অজ্ঞাত জরিপের উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি মনে করি, হ্যাঁ।


বাইডেন আরো বলেন, ‘আমি সত্যিই মনে করতাম, তার (ডোনাল্ড ট্রাম্প) বিরুদ্ধে জয়ের সবচেয়ে ভালো সুযোগ আমার ছিল। কিন্তু আমি ৮৫ বা ৮৬ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট হতে চাইনি। তাই আমি নেতৃত্বের দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে কথা বলেছিলাম। এখন পর্যন্ত ভালো আছি। তবে কে জানে আমি ৮৬ বছর বয়সে কেমন থাকব?’

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রবীণ প্রেসিডেন্ট বাইডেন বারবার তার মানসিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ ছিল একটি বিতর্ক, যেখানে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার পুনর্নির্বাচনের যুক্তি উপস্থাপনে ব্যর্থ হন। এ ছাড়া বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন অনেক কম সাক্ষাৎকার ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন। রোনাল্ড রিগানের পর থেকে এত কম গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি আর কোনো প্রেসিডেন্ট।

ইউএসএ টুডে ছিল একমাত্র প্রিন্ট মিডিয়া, যারা বিদায়ি প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছে। বাইডেন যখন তার চার বছরের মেয়াদের আফসোস নিয়ে কথা বলেন, তখন তিনি বিতর্কে তার ব্যর্থতা বা এক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার প্রতিশ্রুতি ভাঙার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। বরং তিনি ভুল তথ্য ও ধীরগতির অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলো নিয়ে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, যদি আমরা এসব প্রকল্পে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারতাম, তবে আমরা অনেক ভালো অবস্থানে থাকতাম।’

এদিকে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে, বিশেষ করে তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর যেসব ব্যক্তিকে তার শত্রু মনে হতে পারে, তাদের জন্য আগাম ক্ষমা প্রদানের বিষয়টি। বাইডেন নিশ্চিত করেন, তিনি এই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।

বাইডেন জানান, নির্বাচনের পর ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময় তিনি ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন তিনি প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে বিরত থাকেন। তিনি বলেন, ‘এটি তার নিজের স্বার্থের জন্যও বিপরীতমুখী হবে।’ তবে ট্রাম্প এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।

নিজের উত্তরাধিকারের বিষয়ে বাইডেন জানান, তিনি চান, তাকে এমন একজন নেতা হিসেবে স্মরণ করা হোক, যিনি মহামারি-পরবর্তী অর্থনীতির পুনর্গঠন ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিলেন।

বিদায়ি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটাই ছিল আমার আশা। আমি চাই, ইতিহাসে এটি রেকর্ড হোক, আমি সততা ও নৈতিকতার সঙ্গে (কাজ) করেছি এবং আমার মনের কথা স্পষ্টভাবে বলেছি।’

সচিবালয় গেটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সং’ঘর্ষ, ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

সচিবালয়ের সামনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্সের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগের দিন বাংলাদেশ সচিবালয়ের ১নং গেইটের সামনে পুলিশের সঙ্গে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শতাধিক শিক্ষার্থীর ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।

তবে কী দাবিতে তারা আন্দোলন করেছেন তা এখনও জানা যায়নি। জানা যায়, শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সচিবালয়ে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের পক্ষে ৪ সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল ভেতরে প্রবেশ করে।

শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাক্ষাতের কথা ছিল। এদিকে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন শতাধিক শিক্ষার্থী।

অপেক্ষারত শিক্ষার্থীরাই পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

ভূমিকম্প নিয়ে এবার বাংলাদেশের জন্য এলো বড় ‘দুঃসংবাদ’

চলতি (জানুয়ারি) মাসের প্রথম সাত দিনে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গত দুই বছরে এমন অনেকগুলো ছোটো-মাঝারি ভূমিকম্প দেখেছে বাংলাদেশ। ছোটো ছোটো ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে রয়েছে ঢাকা। অথচ এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি কমাতে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি কোনো সরকার। ভূমিকম্পপ্রবণ বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত তিন মাসে বাংলাদেশের আশপাশে মৃদু ও তীব্র মাত্রার অর্ধশতাধিকের বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। গত ১৫ বছরে ছোটো-বড় ভূমিকম্প হয়েছে দেড় শতাধিকের বেশি, যা আশঙ্কাজনক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃদু মাত্রার এসব ভূমিকম্প ইঙ্গিত দেয়, সামনে বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের চেয়ে সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। সবার আগে ভূমিকম্পে সচেতনতা জরুরি। ঢাকা শহরে বেশিরভাগ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য ভবনগুলো ভূমিকম্প নিরোধক কিংবা মজবুত করা প্রয়োজন। ভূমিকম্পের সময় নিজেকে নিরাপদ রাখার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শুকনো খাবার, পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসাসমগ্রী সংগ্রহ করা দরকার।- ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ৭ জানুয়ারি সকালে অনুভূত হওয়া রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে তিব্বতে নিহত শতাধিক। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের বেশ কিছু অংশেও একই সময় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। প্রধান ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনে অবস্থানের কারণে এ অঞ্চলে ভূমিকম্প বেশ সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৭৫ বছরে বড় ভূমিকম্প হয়নি, শিগগির হওয়ার আশঙ্কা
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ভূকম্পনের সক্রিয় এলাকায় অবস্থিত। দুর্যোগ সূচক অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে রয়েছে ঢাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছোটোখাটো কম্পন দেশের আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা নির্দেশ করে। ঐতিহাসিকভাবে ১৮৬৯ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে রিখটার স্কেলে ৭-এর বেশি মাত্রার পাঁচটি ভূমিকম্পে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৮৮৫ সালের ভূমিকম্প এবং ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্পের প্রতিটিরই কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশের মধ্যে এবং যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছিল। এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্প প্রায় ৭৫ বছর ধরে ঘটেনি, তাই শিগগির একটি বড় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

ছোটো-মাঝারি ভূমিকম্পে তীব্র ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেবার আতঙ্কেই মারা যান ছয়জন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়া ভারত ও মিয়ানমার টেকটোনিক প্লেটে গত শত বছরেও বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। তাই এই প্লেটে সঞ্চিত হয়েছে দীর্ঘদিনের শক্তি। এটি যে কোনো মুহূর্তে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে হাজির হওয়ার আশঙ্কা আছে। এমন মাত্রার ভূমিকম্প হলে সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে না ঢাকা। মৃত্যু হতে পারে কয়েক লাখ মানুষের।

২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল বান্দরবান ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। তখন রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল। এর আগে ২০২৩ সালের ২ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। তখন রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে তিনবার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত। এছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের কাছাড় এলাকা। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে দুই দফায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে একটি অনুভূত হয় ২৯ আগস্ট। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট। এর আগে ১৪ আগস্ট আরেকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। আগস্টের দুটি ভূমিকম্পের উৎসস্থল ডাউকি চ্যুতির মধ্যে ছিল।

২০২৩ সালের গত ৫ জুন ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম লাইভ মিন্ট জানায়, এদিন সকালে বঙ্গোপসাগরে ৩ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের কাছে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে। বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ৮টার দিকে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। বুয়েট ও সরকারের একটি যৌথ সমীক্ষায় দেখা যায়, সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। যেখানে তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ।

টেকটোনিক প্লেট ও ভূমিকম্প
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, প্লেট টেকটোনিক্স (Plate Tectonics) ভূতাত্ত্বিক মতবাদ অনুসারে ভূত্বক প্রধানত সাতটি বড় ও কয়েকটি ক্ষুদ্র গতিশীল কঠিন প্লেট দ্বারা গঠিত, যেগুলো নিম্নস্থ ভ্রাম্যমাণ উষ্ণ গুরুমণ্ডলীয় পদার্থের ওপর ভাসছে। প্লেটের বিচলন (movement) ও পারস্পরিক ক্রিয়া ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, পর্বত সৃষ্টি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ভূতাত্ত্বিক ঘটনাবলির নিয়ন্ত্রক বলে ধারণা করা হয়।

টেকটোনিক প্লেট যেভাবে ভূমিকম্পের অনুঘটক
তিন ধরনের পারস্পরিক প্লেট সীমানার কথা জানা যায়। সমকেন্দ্রাভিমুখী সীমা, অপসারী সীমা ও পরিবর্তক চ্যুতি সীমা। পরিবর্তক চ্যুতি সীমা যখন দুটি প্লেট একে অপরকে অতিক্রম করে যায়, তখন তাকে পরিবর্তক চ্যুতি সীমা বলে। তিন ধরনের প্লেট বিচলনেই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

বঙ্গীয় অববাহিকার অধিকাংশই পড়েছে বাংলাদেশে। ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এর উৎপত্তি। ক্রিটেসিয়াস যুগের পূর্বে (সাড়ে বারো কোটি বছর আগে) বাংলাদেশের অংশবিশেষসহ (বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল) ভারতীয় প্লেট, অ্যান্টার্কটিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত থেকে গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে একটি বৃহৎ মহাদেশ গড়ে তোলে। বাংলাদেশের অবশিষ্টাংশের তখন অস্তিত্ব ছিল না। অতঃপর গন্ডোয়ানাল্যান্ডে ফাটলের ফলে ভারতীয় প্লেটের উত্তরমুখী সঞ্চরণ ও সর্বশেষ এশীয় প্লেটের সঙ্গে এর সংঘর্ষের ফলে হিমালয় পর্বতমালা ও বাংলাদেশের ব-দ্বীপীয় সমভূমির সৃষ্টি হয়।

যখন তখন ভূমিকম্প, বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?
ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যে পর্যায়ক্রমিক সংঘর্ষ ইয়োসিন যুগে (৫ কোটি থেকে সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে) হিমালয়ের প্রারম্ভিক উত্থানের সময় প্রথম সংঘটিত হয়। নবীন ইয়োসিন যুগে (সাড়ে তিন কোটি থেকে ৪ কোটি) ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যবর্তী টেথিস সাগরের সর্বশেষ চিহ্ন সম্ভবত বিলীন হয়ে যায়। এই সময়েই ভারতীয় প্লেটের অভিসরণ দিক দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষসহ উত্তর থেকে উত্তর পূর্ব দিকে পরিবর্তিত হয়ে যায়। ওলিগোসিন যুগ থেকে (সাড়ে তিন কোটি বছর আগে) প্লেট সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে এবং বিশাল নদীমালার জলরাশিতে দক্ষিণে আদি বঙ্গীয় অববাহিকা ভরে উঠলে উত্থিত হিমালয়ের অবক্ষেপ নেমে আসতে শুরু করে। মায়োসিন পরবর্তী সময় থেকে (আড়াই কোটি বছর তৎপরবর্তী) অববাহিকায় দ্রুত অবনমনের সঙ্গে হিমালয় পবর্তমালার দ্রুত উত্থানের ফলে বিপুল অবক্ষেপের সুতপের পাশাপাশি বৃহদাকৃতির বদ্বীপ গড়ে ওঠে।

৭ মাত্রার ভূমিকম্প যদি সীমান্ত এলাকায় হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হবে। ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হবে কারণ ঢাকার ভবনগুলো বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ।-অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ নামের এই সুবৃহৎ বদ্বীপের গঠন প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত আছে। এদিকে ভারতীয় প্লেটের এশীয় প্লেটের নিচে অধোগমন হিমালয়ের উত্তরাঞ্চলে একটি সন্ধি রেখা অঞ্চল সৃষ্টি করেছে। আর পূর্বে ইন্দো-বার্মান পর্বতসারি পূর্বাঞ্চলীয় প্লেট সংঘর্ষের অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। এশীয় প্লেটের সঙ্গে ভারতীয় প্লেটের সংঘর্ষ আজও অব্যাহত আছে। মাঝে মধ্যেই প্লেট সংলগ্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প এ কথাই প্রমাণ করে।

সক্রিয় তিনটি টেকটোনিক প্লেট
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আশপাশ দিয়ে তিনটি টেকটোনিক প্লেট গেছে। এর সংযোগস্থল সীমান্তের আশপাশে। যেমন আমাদের উত্তরে হিমালয় পড়েছে ইউরেশিয়ান প্লেটে। আমাদের অবস্থান ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে। আর আমাদের পূর্বে হচ্ছে মিয়ানমার মাইক্রো প্লেট। এ তিনটি প্লেটই আমাদের কানেক্টেড এবং সক্রিয়। প্লেটগুলোর মুভমেন্ট আছে। এগুলো প্রতি বছর পাঁচ সেন্টিমিটার বা ৫০ মিলিমিটার মুভমেন্ট করে। তার মানে, প্রতি বছর আমরা পাঁচ সেন্টিমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মুভমেন্ট করছি। একইভাবে পুরো পৃথিবীও মুভ করছে।’

অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সরকার ইক্যুইপমেন্টস কিনে দিয়েছে। শুধু ইক্যুইপমেন্টস দিয়ে হবে না। কারণ ভবন মেরামত না করলে ভবন চাপা পড়ে মানুষ মারা যাবেই। ঢাকা শহরে এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের অপরিকল্পিত লাইন ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।’

ঢাকা শহরের বেশিরভাগ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবার আগে ভূমিকম্পে সচেতনতা জরুরি। ঢাকা শহরের বেশিরভাগ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য ভবনগুলো ভূমিকম্প নিরোধক কিংবা মজবুত করা প্রয়োজন। ভূমিকম্পের সময় নিজেকে নিরাপদ রাখার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শুকনো খাবার, পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসাসমগ্রী সংগ্রহ করা দরকার।’

আশপাশে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি দুটি ভূমিকম্পে বাংলাদেশও কেঁপে উঠেছে। এগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল, কারণ প্লেট বাউন্ডারি। প্লেট বাউন্ডারি বরাবর এরকম প্রতিদিনই প্রচুর হয়, যেগুলো ছোটো ছোটো ভূমিকম্প, তবে মাঝে মধ্যে বড় ভূমিকম্পও হয়। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প যদি সীমান্ত এলাকায় হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হবে। ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হবে কারণ ঢাকার ভবনগুলো বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ।’ বাংলাদেশে যত্রতত্র এবং অনুমোদনহীন বহুতল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বৈধ করতে রিয়েল এস্টেটের চাপে সরকার ইতোমধ্যে নমনীয়। ভূমিকম্প হলে যে আশ্রয়স্থলে দাঁড়াবেন সেই জায়গাগুলোতে মেগা প্রকল্প হচ্ছে। দিনশেষে ভূমিকম্পের বিষয়ে ভালো সংবাদ কমই পাচ্ছি আমরা।- আদিল মুহাম্মদ খান

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্লেট বাউন্ডারির কাছাকাছি আছে, আগেও এখানে বড় ভূমিকম্প হয়েছে এবং আগামীতেও হতে পারে। ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ দেশ। সেই ঝুঁকি অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভবনের নকশা করা নেই। পুরাতন ভবনগুলো নাজুক এবং নতুন ভবনগুলো গ্রাউন্ড প্যারামিটার অনুযায়ী করা হয়নি। এ কারণে ঝুঁকি অনেক বেশি। ভূমিকম্প সহায়ক ভবন বাংলাদেশেও করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ উন্নত দেশগুলো করেছে।’

কম্পন অ্যালার্মিং, বিল্ডিং কোড মানতে কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা ভয়ংকর
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প বাংলাদেশের জন্য অ্যালার্মিং। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে কিছু কিছু ভূমিকম্প বেশ কয়েক বছর ধরে হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী যেন ভবনগুলো বানোনো হয়। যে ভবনগুলো বানানো হচ্ছে সেগুলো সঠিক জায়গায় করা। বিল্ডিং কোড মানার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা ভয়ংকার।

সরেজমিনে তদন্ত করার ক্ষেত্রে দক্ষতা ও আগ্রহ কোনোটাই এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেনি তারা। বিপরীতে নিচু ভূমি ও জলাভূমি ভরাট করে বহুতল ভবন বানানোর যে প্রবণতা সেটা ১০ বছরে মহামারি আকারে বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জলাভূমি ভরাট করে ভবন হচ্ছে, যা অধিকাংশ আইন অমান্য করে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। কয়েক বছর পরে যখন মাস্টার সংশোধন হয় তখন বলে যেহেতু হয়ে গেছে তখন অনুমোদন না দিয়ে কী করার…। এই প্রবণতা যদি চলে বড় ভূমিকম্প লাগবে না, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় ৫ কিংবা সাড়ে ৫ মাত্রার হলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হবে।’

‘বাংলাদেশে যত্রতত্র এবং অনুমোদনহীন বহুতল ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো বৈধ করতে রিয়েল এস্টেটের চাপে সরকার ইতোমধ্যে নমনীয়। ভূমিকম্প হলে যে আশ্রয়স্থলে দাঁড়াবেন সেই জায়গাগুলোতে মেগা প্রকল্প হচ্ছে। দিনশেষে ভূমিকম্পের বিষয়ে ভালো সংবাদ কমই পাচ্ছি আমরা।’ কর্তৃপক্ষ বারবার লোকবল কম আছে দোহাই দিয়ে মূল কাজটি পালন করে না উল্লেখ করে অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘এখানে কর্তৃপক্ষ বলতে রাষ্ট্র। কারণ রাষ্ট্রের মন্ত্রণালয়গুলো সঠিক কাজটি করে না। কেউ আইন অমান্য করে সেটা দেখার ক্ষমতায় যদি না থাকে তবে কর্তৃপক্ষের থাকারই দরকার কী! রাষ্ট্রের অনেক সংস্কার হচ্ছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখলাম না কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংস্কার। কর্তৃপক্ষের অনাচারের পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের ধরার ইতিহাস নেই।’

এবার সরকারি কলেজ শিক্ষকদের জন্য বড় ‘সুখবর’

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে বিভিন্ন সরকারি কলেজের শিক্ষকদের বড় একটি সংখ্যার পদোন্নতি হয়েছে। ৭৬৫ জন সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের শিক্ষককে পদোন্নতি দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী পঞ্চম গ্রেডে বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন।

গতকার সোমবার পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এর একটিতে ৭৬৪ জনকে; আরেকটিতে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি হিসাববিজ্ঞানের ৯৪ জন শিক্ষক একযোগে সহযোগী অধ্যাপক হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়া অন্য শিক্ষকদের মধ্যে ৫৬ জন অর্থনীতি বিভাগের, ২৯ জন আরবি ও ইসলাম শিক্ষার, ৪৬ জন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির,

২৬ জন ইংরেজির, ৩১ জন ইতিহাসের, ৪৮ জন উদ্ভিদবিদ্যার ও ৭ জন কৃষিবিজ্ঞানের। অন্যান্য বিভাগের মধ্যে গার্হস্থ্য অর্থনীতির একজন, গণিতের ৮৮ জন, দর্শনের ৩৯ জন, পদার্থবিদ্যার ৬৬ জন, পরিসংখ্যানের ছয়জন, প্রাণিবিদ্যার ৭২ জন, ব্যবস্থাপনার ৫৫ জন ও বাংলা বিভাগের ছয়জন সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি পেয়েছেন।

সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার তালিকায় ভূগোল বিভাগের ২৪ জন, মনোবিজ্ঞানের নয়জন, রসায়নের ২২ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ১৮ জন, সমাজকল্যাণের ১৩ জন, সমাজবিজ্ঞানের একজন, সংস্কৃতির দুজন শিক্ষকের নামও রয়েছে।

এদের বাইরে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) বাংলা বিভাগের দুজন, শিক্ষা বিভাগের একজন ও বিজ্ঞান বিভাগের তিনজন শিক্ষক পদোন্নতি পেয়েছেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত নির্দেশনা অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তরা কাজে যোগ দেবেন। অপরদিকে কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের উচ্চতর পদে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পদায়নের জন্য ‘স্বতঃসিদ্ধভাবে’ অগ্রাধিকার পাবেন বলে আদেশে বলা হয়েছে।