৩ বিভাগে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, জাঁকিয়ে নামবে শীত- আবহাওয়া অফিস

দেশের তিন বিভাগে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এর প্রভাবে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

তবে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এতে আরও বলা হয়, আজ মধ্যরাত থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে এবং এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। গতকাল সোমবার (০৬ জানুয়ারি) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো সীতাকুণ্ডে ৩২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের গ্রে’ফতারি পরোয়ানা

আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে গুমের ঘটনায় দলটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রে’ফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৬ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত ১৫ বছরে গুম ও বিচারবহর্ভূত হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

আদালত শুনানি নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এদের মধ্য থেকে যাদের গ্রেফতার করা সম্ভব তাদের ১২ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান আগেই গ্রেফতার হয়েছেন। তাকে ওইদিন আদালতে হাজির করা নির্দেশ দিয়েছেন। একসঙ্গে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

তিনি আরও জানান, জুলাই-আগস্ট গণহ’ত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে গুমের অপরাধে ধরণ ভিন্ন হওয়ায় এই অভিযোগগুলো আলাদা করে শীর্ষ অভিযুক্ত ১২ জনের বিরুদ্ধে আজ গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করা হয়। প্রাথমিক শুনানি শেষে তাদের ১১ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। প্রসিকিউশন জানান গুমের অপরাধ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অপরাধ।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বছরের পর পর বছর শত শত মানুষকে আয়না ঘরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আর গুম করার জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানো, প্রমোশন দেওয়াসহ নানা প্রলোভন দেখানো হতো। এবার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করে বাহিনীগুলোকে দায়মুক্ত করা হবে।

নতুন ৬ দিনের কর্মসূচি দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের দাবিতে দেশব্যাপী যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর বাংলা মটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

তিনি বলেন, প্রোক্লেমেশন অব রিভ্যুলেশনের পক্ষে ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বলেন, আমরা মানুষের কাছে ছুটে যেতে চাই। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, পেশাজীবী মানুষের মাঝে জনসংযোগ চালাব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথভাবে এই কাজটি করবে। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সরকার ঘোষণাপত্র নিয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেয়নি।

অভ্যুত্থানে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। আমাদের আহ্বান থাকবে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার শিগগির কাজ শুরু করবে।

আমরা চাই, সরকারকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ফ্যাসিবাদ সরকার সব মানুষের টুটি চেপে ধরেছিল। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে ছুটে যেতে চাই বলে জানান হাসনাত আবদুল্লাহ।

টিউলিপকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন আ. লীগের ঘনিষ্ঠজন, মিলল পরিচয়ও

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় একটি দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফ্ল্যাটটি উপহার দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালিফ।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথি অনুযায়ী, ওই ফ্ল্যাটের জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি টিউলিপকে। ফ্ল্যাটটি ২০০১ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে কেনা হয়। বর্তমান দাম নথিতে উল্লেখ না থাকলেও একই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাট গত আগস্টে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের মুখপাত্র বলেছেন, এই সম্পত্তি বা অন্য কোনো সম্পত্তির মালিকানার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থনের কোনো সম্পর্ক আছে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালিফ ফিনান্সিয়াল টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি কিংস ক্রসের এই ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন।

তবে এটি টিউলিপের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের দুর্দিনে তাকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা-বাবা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পত্তি’ টিউলিপকে দিয়েছিলেন।

টিউলিপ সিদ্দিককে বিনামূল্যে এই ফ্ল্যাট দেওয়ার খবরটি সামনে এসেছে এমন এক সময়ে, যখন বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তবে টিউলিপ ও তার পরিবার অর্থ আত্মসাতের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তারা দেশের ব্যাংকের অর্থ নিয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে সম্পত্তি কিনেছেন। এ অভিযোগগুলোও অস্বীকার করেছেন তারা।

যুক্তরাজ্যের ভোটার নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, ২০০০ সালের শুরুর দিকে টিউলিপ সিদ্দিক কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। এর পরবর্তী কিছু বছর সেখানে তার ভাই-বোনেরা থাকেন। সংসদ সদস্য হিসেবে টিউলিপের দাখিল করা আর্থিক বিবরণীতে দুটি ফ্ল্যাট থেকে ভাড়া আয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন। ভোটার নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, কিংস ক্রস এলাকার ওই ফ্ল্যাট টিউলিপকে দেওয়ার আগে মঈন গণি নামের এক আইনজীবীকে সেখানে থাকতে দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ। মঈন গণির সঙ্গে শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে।

তবে যোগাযোগ করা হলেও মঈন গণি কোনো মন্তব্য করেননি। দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে আবদুল মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের একজন ব্যক্তি বসবাস করছেন। মজিবুল ইসলামের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। মোতালিফ এবং মজিবুল দুজনই একই ঠিকানায় বসবাস করার কথা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্র অনুযায়ী, টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যে এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগেই কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাটটি পেয়ে ছিলেন। এর মানে হলো, নির্বাচনে দাঁড়ানোর সময় তাকে এই ফ্ল্যাটের বিষয়ে কোনো তথ্য জমা দিতে হয়নি। ২০১৮ সালে, টিউলিপ সিদ্দিক ৯০ হাজার পাউন্ডে কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটটির লিজ বাড়িয়েছিলেন।

এছাড়া, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে মিলে ৮ লাখ ৬৫ হাজার পাউন্ডে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন। ভূমি নিবন্ধন নথি অনুযায়ী, এখন আর কোনো মর্টগেজ নেই এই দুই ফ্ল্যাটে। একটি সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ বছর পর, সিদ্দিকের স্বামী নিজেদের টাকায় তাদের ফ্ল্যাটটির বাকি মর্টগেজ পূর্ণভাবে পরিশোধ করেছিলেন।

পবিত্র ‘শবে মেরাজ’ কবে তারিখ জানা গেল

আজ বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) থেকে পবিত্র রজব মাস গণনা করা হবে। সে হিসাবে আগামী ২৭ জানুয়ারি দিনগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে। বুধবার (০১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়,

আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এতে বলা হয়, এমতাবস্থায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাস গণনা শুরু হবে।

এ ছাড়া আগামী ২৭ জানুয়ারি দিনগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে। উল্লেখ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাতে পবিত্র রজব আজ থেকে শুরু হয়েছে। সেখানে আগামী ২৬ জানুয়ারি (২৬ রজব) দিবাগত রাতে ও ২৭ জানুয়ারি (২৭ রজব) দিনে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে।

শবে মেরাজ মুসলমানদের কাছে বিশেষ মর্যাদার। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে এ মূল্যবান রাত কাটান। এই দিন অনেকে নফল রোজাও রাখেন। ‘শবে মেরাজ’ অর্থ ঊর্ধ্ব গমনের রাত।

মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী, ২৬ রজব দিনগত রাতে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহতায়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। রজব হিজরি সনের বিশেষ ও মহিমান্বিত একটি মাস। এ মাস আসে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে।

তাই এই রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ মাসের বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এ মাস আল্লাহ প্রদত্ত ৪টি সম্মানিত মাসের (আশহুরে হুরুমের) একটি।

সেনাবাহিনীকে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে দেব না, এটা আমার অঙ্গীকার: সেনাপ্রধান

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। তিনি জানান, “সেনাপ্রধান হিসেবে নিজের মেয়াদকালে আমি রাজনীতিতে নাক গলাব না। আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না।”

অতীতে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে খারাপ ফল এসেছে, তাই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতির বিকল্প রাজনীতিবিদরাই, সেনাবাহিনী নয়।”

তিনি বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করছি এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতা প্রদান করতে প্রস্তুত।” সেনাবাহিনী বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থে কাজ করছে, এবং প্রয়োজনে সেনানিবাসে ফিরে যাবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর মাঠে উপস্থিতির বিষয়ে জেনারেল ওয়াকার বলেন, সেনাসদস্যদের দীর্ঘদিন মাঠে থাকার ফলে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের ঝুঁকি থাকে, তবে তিনি নিশ্চিত করেন যে, শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে আশাবাদী এবং বিশ্বাস করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব রয়েছে।

নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশবাসী সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর নির্বাচন চায়।” ভারত সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন, “ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী।

আমরা তাদের থেকে অনেক সুবিধা পাই এবং তারা আমাদের কাছ থেকে পণ্য কেনে। তবে সম্পর্ক ন্যায্যতার ভিত্তিতে বজায় রাখতে হবে, যাতে জনগণ মনে না করে যে, ভারত বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু করছে।”

নতুন বছরে বই উৎসব নিয়ে এনসিটিবির সব পরিকল্পনা ব্যর্থ!

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নতুন বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিন দু-তিনটি বই তুলে দিতে নানা পরিকল্পনা করেছিল এনসিটিবি। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনাও সফল হয়নি। কোন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কবে বই পাবে, তা জানাতে পারছে না স্কুলগুলো। এত দিন বছরের প্রথম দিন বই উৎসব অনেকটা সর্বজনীন উৎসবের মতো ছিল। এ বছর বই ছাপতে দেরি হওয়ায় হচ্ছে না সেই উৎসব।

আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে এনসিটিবি সব বইয়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা শেষ করতে ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করবেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তবে এই অনলাইন বই ডাউনলোড করে শিক্ষার্থীদের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বেশির ভাগ বই এরই মধ্যে ছাপা হয়েছে এবং তা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ফলে এই তিন শ্রেণির বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বছরের প্রথম দিন বই পাবে। তবে অন্যান্য শ্রেণির কত শতাংশ বই ছাপা হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির বই বেশির ভাগ স্কুলই পায়নি। তবে রাজধানী, বিভাগীয় ও জেলা শহরের কিছু স্কুলে কয়েকটি শ্রেণির তিনটি বিষয়ের স্বল্পসংখ্যক বই তারা পেয়েছে। কিন্তু এভাবে বিক্ষিপ্তভাবে পাঠানো বই কিভাবে স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে দেবে, তা তারা বুঝতে পারছে না। তারা আরো বই পাওয়ার অপেক্ষা করছে। মফস্বল ও দূরের স্কুলগুলো চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির কোনো বই পায়নি।

এতে স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের জানাতে পারছে না কবে তারা তাদের হাতে বই তুলে দিতে পারবে। জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ প্রায় শেষ এবং উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেও গেছে। অন্যান্য শ্রেণির কিছু না কিছু বই আমরা প্রতিটি উপজেলায় পাঠাতে চেষ্টা করেছি। ১ জানুয়ারি আমরা ৪৫৫টি বইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করছি। আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে আমরা সব বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।’

সূত্র জানায়, সংগত কারণেই এ বছরের বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়নে দেরি হয়েছে। তারপর আবার দরপত্রসহ নানা প্রক্রিয়া শেষ করতেও দেরি হয়েছে। ফলে আগে থেকে সংশ্লিষ্ট সবাই আশঙ্কা করেন, এবার বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। এ জন্য শিক্ষার্থীরা যাতে অন্তত তিনটি করে বই পায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বলা হয়। কিন্তু এনসিটিবি সেসব কথায় গুরুত্ব না দিয়ে তাদের মতো চলতে থাকে। যদিও শেষের দিকে এসে তিনটি করে বই দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এমনকি প্রেস মালিকদের চাপ দিতে থাকে। কিন্তু বছরের শেষ দিনে এসে এনসিটিবির সব পরিকল্পনাই ব্যর্থ হয়।

শিক্ষকরা বলছেন, গত দুই বছর নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ালেখা করেছে শিক্ষার্থীরা। সেখানে ভিন্নধর্মী পড়ালেখায় শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো চাপ নিতে হয়নি। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যেতে হয়েছে। এতে এমনিতেই বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী তাল মেলাতে পারছে না। তারা এ বছরের বার্ষিক পরীক্ষায় খুব খারাপ করেছে। এখন যদি আবার বই পেতে পেতে আরো দুই মাস চলে যায়, তাহলে বড় ধরনের শিখন ঘাটতিতে পড়বে শিক্ষার্থীরা।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীসংখ্যা চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩। তাদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা ছাপা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ বেশ আগেই শুরু হয়েছে। এই বইয়ের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। এরপর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কার্যাদেশ ও চুক্তিপত্র শেষে দুই সপ্তাহ আগে তা ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। এই বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। গত সপ্তাহের শেষ দিকে চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের ছাপা শুরু হয়েছে। এ সপ্তাহে নবম ও দশম শ্রেণির বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। তবে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এক বছর বই পড়ে এসএসসি পরীক্ষায় বসবে বলে তাদের বইয়ের কাজ আগে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রেস মালিকরা বলছেন, আমাদের প্রেসের প্রতিদিন দুই লাখ বই ছাপার সক্ষমতা। আমরা শত চেষ্টা করেও এর বেশি বই ছাপতে পারব না। কিন্তু এনসিটিবি একসঙ্গে সব বইয়ের কার্যাদেশ দিয়ে সব বইয়ের ছাপার কাজ শেষ করতে বলছে। তারা ব্যাপারটি বুঝেও না বোঝার ভান করছে। আগে প্রতিটি শ্রেণির বইয়ের কার্যাদেশ পর্যায়ক্রমে দেওয়া হতো। এতে একটি শ্রেণির বইয়ের কাজ শেষ করে আরেকটি ধরা যেত। কিন্তু এবার তা না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বই দিতে দেরি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবছর সাধারণত জুলাই-আগস্ট থেকে পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর পরও ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বই দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এনসিটিবিতে অনেক পরিবর্তন আসে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, সদস্য ও অন্য কর্মকর্তারা পরিবর্তন হন। এরপর আবার আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়া হয়। পাঠ্যক্রমেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে পাণ্ডুলিপি পরিমার্জনেও বেশ সময় লাগে। এরপর আবার এনসিটিবির নতুন কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও পরিকল্পনার অভাবে পাঠ্যবইয়ের কাজ বেশ কিছুটা পিছিয়ে যায়।

২২ দিন সব কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ!

সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ১ জানুয়ারি থেকে

আগামী ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যক্তি বা

প্রতিষ্ঠান পরিচালিত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যারা এই সিদ্ধান্ত অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৭ জানুয়ারি (শুক্রবার সকাল ১০টায় শুরু হবে পরীক্ষা) অনুষ্ঠিত হবে। ১৯টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে এ পরীক্ষা।

যেসব পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এবারের নতুন পাঠ্যবই!

শিক্ষাপঞ্জি মেনে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হচ্ছে। এবার ৪০ কোটির বেশি বই ছাপানো হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, নতুন পাঠ্যবইয়ে সাহিত্যের পাশাপাশি ইতিহাস বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষণা, শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানসহ বেশ কিছু বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। জানা গেছে, নতুন ৪০ কোটি বই এর মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৯ কোটি ৬৪ লাখের মতো। আর মাধ্যমিকে (মাদরাসার ইবতেদায়িসহ) মোট বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখের মতো।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকার এক যুগ আগে তৈরি পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে জন্য এনসিটিবি ৪১ বিশেষজ্ঞ দিয়ে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছে। এতে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা। পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ের নতুন বইয়ে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক অধ্যায়ের প্রথম অংশে প্রথমে রয়েছে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি।

পাশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। জাতীয় চার নেতার ছবিও রয়েছে। পুরোনো বইয়ে একই স্থানে শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ছবি ছিল। নতুন বইয়ে একই অধ্যায়ের ‘পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা’ শীর্ষক লেখায় বলা হয়েছে, ‘…পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল “অপারেশন সার্চলাইট”। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। ২৬শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারো স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।’ একই বিষয়ের পুরোনো বইয়ে এই অংশে ছিল, ‘…পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল “অপারেশন সার্চলাইট”।

ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।…’ চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়েও স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি রয়েছে। নতুন বইয়ে এই অধ্যায়ের ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক লেখায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবির পাশাপাশি মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার ছবি স্থান পেয়েছে। এখানে বিষয়বস্তু হিসেবে বলা হয়েছে, ‘…এ রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ২৬শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারো স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’

পুরোনো বইয়ে এ–সংক্রান্ত লেখায় শুধু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি ছিল। আর স্বাধীনতার ঘোষণা–সংক্রান্ত স্থানে লেখা ছিল, ‘এ কালরাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগে অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ওয়্যারলেস বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এর ভিত্তিতে ২৬ মার্চ শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

এছাড়া পাঠ্যবই থেকে ইতিহাসবিষয়ক আরো কিছু বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। এতদিন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও পতাকা নির্মাণের নিয়মাবলি এবং জাতীয় সংগীত বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদের ঠিক পরের পৃষ্ঠায় ছিল। কিন্তু নতুন বাংলা বইয়ে তা পুনর্বিন্যাস করে বইয়ের শেষ প্রচ্ছদের আগের পৃষ্ঠায় নেয়া হয়েছে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ছয়টি প্রবন্ধ, কবিতা বা ছড়া নতুন করে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক প্রবন্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবিসহ এই গণ-অভ্যুত্থানে সব শহিদকে স্মরণ করে লেখা যুক্ত হয়েছে।

এই প্রবন্ধে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহিদ মীর নিসার আলী তিতুমীর থেকে শুরু করে এ বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থান পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শহিদদের স্মরণ করা হয়েছে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তনের বিষয়ে জানান, জুলাই বিপ্লবের পর বিপ্লবের গ্রাফিতিসহ বিষয়গুলোকে স্থান দেওয়ার একটি গণদাবি ছিল। এবার ইতিহাসের বইয়ে না দিয়ে বাংলা–ইংরেজি বইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধে অন্য নায়কদের আগে অবহেলা করা হয়েছে। এবার তাদেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অতিবন্দনা পরিহার করা হয়েছে। পাঠ্যবইকে রাজনৈতিক দলের প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বন্ধ করা হয়েছে। তবে গতবারের মতো এবারো থাকছে পাঠ্যবইয়ের ঘাটতি। বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে ৪০ কোটি ১৬ লাখ পাঠ্যবই প্রয়োজন। ছাপাখানার মালিক, মুদ্রণ শিল্প সমিতি ও এনসিটিবি সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৭ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ কোটি বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানোর জন্য ছাড়পত্র বা পিডিআই হয়েছে। এখনো ৩৩ কোটি বই ছাপানোই বাকি। ফলে এবার নতুন বছরের প্রথম দিনে সারা দেশে সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে না।

ছাপাখানাগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১১৬টি ছাপাখানায় ২৪ ঘণ্টা বিরামহীন পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। তবে ছয় মাসের কাজ এক মাসে শেষ করতে সরগরম ছাপাখানাগুলো। কোনো ফুরসত নেই শ্রমিকদের। মিনিটে মিনিটে বেরিয়ে আসছে ছাপা কাগজ। অন্যপাশে চলছে বাঁধাইয়ের কাজ। ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু হয়েছিল।

তারপরও সবার হাতে সব বই পৌঁছাতে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এবার মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপাতে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ (নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড বা নোয়া) দেওয়া হয় ১০ ডিসেম্বর থেকে। কাগজসংকট না থাকলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০ লাখ কপি পাঠ্যবই পাঠানোর সক্ষমতা আছে ছাপাখানাগুলোর। ছাপাখানার মালিক, মুদ্রণ শিল্প সমিতি ও এনসিটিবি কর্মকর্তারা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জন, আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া, দেরি করে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা, বিলম্বে নোয়া (নোট অব অ্যাওয়ার্ড) দেওয়াসহ ছাপাসংক্রান্ত কাজে বিলম্বের কারণে এবার এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখনো বেশ কিছু পরিমাণ বই ছাপার জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তিপত্র সইয়ের কাজটিও শেষ হয়নি। ফলে আগামী মার্চ মাসের আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছানো কঠিন হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’র গাড়িবহরে হামলা!

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর ইউনিটি’র গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে খুলনা মহানগর থেকে রওনা হওয়া শিক্ষার্থীদের গাড়িবহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, কর্মসূচিতে যোগ দিতে খুলনা থেকে ২৫টি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। বাগেরহাটের মোল্লাহাট মাদরাসাঘাট এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা গাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে

এবং গাড়ি থামিয়ে কয়েকজনকে মারধর করে। পরে শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে মূহুর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত বিশ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কাজ করছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে মোল্লাহাট অতিক্রম করার সময় আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। স্থানীয়রা তাদের সহযোগিতা করে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

থানার সামনে ঘটনা হওয়া স্বত্তেও এ সময় পুলিশ নিরব ভূমিকায় ছিলো বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। ওই এলাকাটি আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা বলেও জানান তারা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন খুলনার সমন্বয়ক জহুরুল তানভীর জানান,

খুলনা থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের বহর ঢাকায় যাচ্ছিলো। পথে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা এই আক্রমণ করেছে বলে জানান তিনি।

আরেক সমন্বয়ক মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ বলেন, পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করা হয়েছে। আমাদের ভাইদের রক্ত ঝরেছে।

এর বিচার অতি দ্রুত করতে হবে, জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর না হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে জড়িতদের খুঁজে বের করবে বলে হুশিয়ারী দেন তিনি।- যমুনা টেলিভিশন।