পাক-ভারত উত্তেজনায় মধ্যস্থতার প্রস্তাব ইরানের

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচি উভয় দেশকে “ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী” হিসেবে উল্লেখ করে এই সংকটময় সময়ে তেহরানের সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান ইরানের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী, যাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শতাব্দীপ্রাচীন সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত বন্ধনে গাঁথা। এই জটিল সময়ে আমরা ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত।”

তিনি বিখ্যাত ফারসি কবি সাদী শিরাজির ১৩ শতকের কবিতা বানী আদম উদ্ধৃত করেন—
“মানবজাতি এক দেহের অঙ্গ,
একই সত্তা, একই আত্মার সঙ্গ,
একজন যদি ব্যথিত হয়,
অন্যজন থাকে না নির্ভার রয়।”

এই কবিতা আগে ২০০৯ সালে ইরানিদের উদ্দেশে এক নববর্ষ বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও উদ্ধৃত করেছিলেন।

এর পাশাপাশি সৌদি আরবও শান্তির আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক ডারের সঙ্গে পৃথকভাবে ফোনে কথা বলেন।

ভারত পাহেলগাম হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান এর সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। হামলার জবাবে ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করেছে, পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে, আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং ১ মে’র মধ্যে সব পাকিস্তানি নাগরিককে দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।

জবাবে পাকিস্তান ভারতের বাণিজ্যিক ফ্লাইটের জন্য আকাশপথ বন্ধ করে এবং সব ধরনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত করেছে।

লাইন অব কন্ট্রোলে (এলওসি) সামরিক উত্তেজনার খবরের মাঝে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানাচ্ছে।

সূত্র: https://www.ndtv.com/world-news/india-pakistan-tensions-pahalgam-terror-attack-irans-mediation-offer-to-india-pakistan-with-a-13th-century-poem-8259590

কাশ্মীরে হামলা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যাচার তথ্য ফাঁস

ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) ভয়াবহ হামলায় নিহত নৌ কর্মকর্তার একটি ছবি ও ভিডিও নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। পুরনো এক দম্পতির ছবি ভারতীয় গণমাধ্যমে ওই নৌ কর্মকর্তার ছবি বলে প্রচার করা হয়েছে বলে

পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম জিও নিউজের খবরে বলা হয়েছে। জিও নিউজের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, পেহেলগামে মঙ্গলবারের হামলার পর যে ছবিটি নিহত নৌ কর্মকর্তার বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটি আসলে ওই দম্পতির নয়।

মূল ছবি যাদের, সেই দম্পতি এক ভিডিওতে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, “আমরা বেঁচে আছি। আমি জানি না কেন আমাদের ছবিগুলো

গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। ভারতীয় ওই দম্পতি তাদের বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের ছবিকে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বলে দেখানো হচ্ছে, যা বোধগম্য নয়।”

সূত্রঃ https://youtu.be/-h1W1CBvRpE?si=0d9-EcJb74D1kaXJ

সুশান্তের মৃ’ত্যু’র র’হস্য জানা গেল!

হত্যা না আত্মহত্যা— সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে চলছিল নানা গুঞ্জন ও ধোঁয়াশা। দীর্ঘ তদন্ত শেষে, একাধিক বলিউড তারকার নাম উঠে এসেছিল। অভিনেতার বোনসহ তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা দাবি করেছিলেন,

তাকে হত্যা করা হয়েছিল। তবে এবার সিবিআইয়ের তদন্তে রহস্যের জট খুলে গেছে। সিবিআই জানিয়েছে, সুশান্ত সিং রাজপুতকে হত্যা করা হয়নি, বরং তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ মার্চ শনিবার মুম্বাইয়ের আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুশান্তের পরিবারের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সিবিআই জানায়, সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন, এবং তারা এ বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছে।

প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার সময় অভিনেতার বোন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এ আগে, অভিনেতা সোমি ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, “সুশান্ত সিং রাজপুতকে খুন করা হয়েছে,

তিনি আত্মহত্যা করেননি। তার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বদলে ফেলা হয়েছিল, এবং এতে সহায়তা করেছিলেন এমসের ময়নাতদন্ত বিভাগের সভাপতি সুধীর গুপ্ত।

স্মরণীয়, ২০২০ সালের ১৪ জুন বান্দ্রার একটি ফ্ল্যাট থেকে সুশান্ত সিং রাজপুতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যা বলেই জানানো হয়েছিল, কিন্তু তার পরিবারের অভিযোগের পর সিবিআই পুনরায় তদন্ত শুরু করেছিল। তবে সিবিআইয়ের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে যে, অভিনেতা আত্মহত্যা করেছিলেন।

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় বেশির ভাগ মুসলিম দেশ

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্বের ৪৩টি দেশের নাগরিকদের ওপর নানা মাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এই তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছেন। তবে চূড়ান্ত প্রস্তাবে আরো কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা একটি লাল তালিকা প্রস্তাব করেছেন। এই তালিকায় থাকা ১১টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হবে। এই দেশগুলো হলো—আফগানিস্তান, ভুটান, কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং ইয়েমেন।

এ ছাড়া, একটি ‘কমলা’ তালিকাও আছে।

এই তালিকায় থাকা ১০টি দেশের নাগরিকদের আংশিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হবে। এ ক্ষেত্রে দেশগুলোর ধনী ব্যবসায়ীরা প্রবেশ করতে পারলেও অভিবাসী বা পর্যটন ভিসায় আসা ব্যক্তিরা পারবেন না। এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো হলো—বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান এবং তুর্কমিনিস্তান।
প্রস্তাবে একটি খসড়া ‘হলুদ’ তালিকাও অন্তর্ভুক্ত আছে।

যেখানে ২২টি দেশকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রাপ্ত তথ্যগত ঘাটতি দূর করার জন্য বলা হয়েছে, যদি তারা তা না করতে পারে তবে তারা অন্য কোনো তালিকায় স্থানান্তরিত হতে পারে। এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো হলো—অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, কেপ ভার্দে, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডোমিনিকা, ইকুয়াটোরিয়াল গিনি, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া, মালি, মৌরিতানিয়া, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সাও টোমে ও প্রিন্সিপে, ভানুয়াতু এবং জিম্বাবুয়ে।

এর আগে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেই একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে। সেই আদেশে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে কোন কোন দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন বা সীমিত করা প্রয়োজন তা চিহ্নিত করতে বলা হয়। তিনি ৬০ দিনের মধ্যে হোয়াইট হাউসে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলেছিলেন।

অর্থাৎ, আগামী সপ্তাহেই জমা দিতে হবে এই প্রতিবেদন।

মোড়লগিরি হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্ব নেতৃত্বে হ-য-ব-র-ল

বিশ্বের ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। কারণ একসময় যেসব স্থিতিশীলতা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করেছিল, সেগুলো এখন বড় ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে, যুক্তরাষ্ট্র ছিল আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গঠন, মুক্ত বাণিজ্য প্রচার ও নিরাপত্তা জোট রক্ষা করার ক্ষেত্রে প্রধান শক্তি। তবে সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন- বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে এ ব্যবস্থা কতটা টিকবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। চীন, রাশিয়া ও বহুপাক্ষিকতাবাদের উত্থানে বৈশ্বিক ব্যবস্থা এখন দুর্বল হয়ে পড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের পতন এবং ট্রাম্পের প্রভাব

বিশ্বের ২০তম শতাব্দীর অধিকাংশ সময় যুক্তরাষ্ট্র ছিল বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও সামরিক জোট ন্যাটো গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখা গেছে। তবে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি থেকে মার্কিন নীতি একটি বদলে গেছে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে দুর্বল করেছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে সরে আসা, ন্যাটোকে দুর্বল করা ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপ করার মতো সিদ্ধান্তগুলো বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা নড়েচড়ে দিয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষপাত বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসী পদক্ষেপের দৃঢ় নিন্দা না করা ও ন্যাটোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সংশয় প্রকাশ পশ্চিমা ঐক্যকে দুর্বল করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে।

চীনের উত্থান

যখন যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক নেতৃত্বের ভূমিকা থেকে পিছিয়ে আসছে, চীন ধীরে ধীরে একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করছে। কয়েক শতাব্দী পশ্চিমা ঔপনিবেশিকতার পর, চীন আবারও একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে উঠছে। শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের’ (বিআরআই) মাধ্যমে চীন এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন অংশে তার প্রভাব বিস্তার করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ, নৌবাহিনী আধুনিকায়ন ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে চীন পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা করেছে। একইসঙ্গে চীন একটি বিকল্প শাসন ব্যবস্থা প্রচার করছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বৈরাচারী স্থিতিশীলতা প্রাধান্য পায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের উদার গণতান্ত্রিক আদর্শের বিপরীত।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিযোগিতা শুধু সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তির প্রতিযোগিতা নয়, এটি আন্তর্জাতিক আদর্শের প্রতিযোগিতাও। চীন যদি তার উত্থান অব্যাহত রাখে, তাহলে বৈশ্বিক নীতিমালা পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অব্যাহত হস্তক্ষেপের পরিবর্তে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রাধান্য পাবে না।

রাশিয়ার কৌশলগত লাভ

এদিকে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার সুবিধা নিয়ে রাশিয়া তার প্রভাব বিস্তার করছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ ও ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া পরবর্তী যুদ্ধোত্তর ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। মস্কো একটি হাইব্রিড যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করেছে, যেখানে প্রচলিত সামরিক কৌশলের চেয়ে সাইবার আক্রমণ, মিথ্যা তথ্য প্রচার ও রাজনৈতিক চক্রান্তের মাধ্যমে পশ্চিমা ঐক্যকে দুর্বল করা হচ্ছে। ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রতি মনোভাব বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। ন্যাটো সম্পর্কে ট্রাম্পের সংশয় পুতিনকে উত্সাহিত করেছে, যা পশ্চিমা প্রতিরোধের শক্তি কমিয়েছে। এর ফলে এখন ইউরোপকে তার নিরাপত্তা কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে হয়েছে।

বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা

বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান যেমন জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ঐতিহাসিকভাবে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছিল। তবে এখন সেগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। সিরিয়া যুদ্ধ ও রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ। মূলত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের ভেটো শক্তির কারণে ব্যর্থ হয় সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে ডব্লিউটিও। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকও এখন চাপে, কারণ উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও বেশি প্রভাব চায়। যুক্তরাষ্ট্রের কম প্রতিশ্রুতি এবং চীন ও রাশিয়ার চাপের ফলে বহুপাক্ষিক শাসনের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। যদি এসব প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে বিশ্বের প্রবণতা আঞ্চলিক শক্তি গোষ্ঠী বা অঞ্চলভিত্তিক শক্তির মধ্যে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এতে ঐক্যবদ্ধ বৈশ্বিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাবে।

সংকটে ইউরোপ

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের অভাবে ইউরোপ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে। ঐতিহাসিকভাবে ইউরোপীয় দেশগুলো মার্কিন সামরিক সুরক্ষার ওপর নির্ভর করত, কিন্তু রাশিয়ার বেড়ে ওঠা হুমকি এবং মার্কিন সমর্থন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে ইউরোপের নেতারা এখন তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা পুনর্বিবেচনা করছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ‘যৌথ কৌশলগত অটোনমি’ প্রস্তাব করেছেন, যেখানে ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর না হয়ে নিজেদের প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাণিজ্য ও জলবায়ু নীতিতে একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক প্লেয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। তবে অভ্যন্তরীণ বিভাজন যেমন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও ব্রেক্সিট, একীভূত অবস্থানে থাকাকে কঠিন করে তুলেছে। যদি ইউরোপ তার প্রতিষ্ঠান ও সামরিক ক্ষমতা শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হয়, তবে বড়-শক্তিগুলোর নজর পড়বে সেখানে। ফলে বৈশ্বিক শাসন স্বাধীনভাবে এগোতে পারবে না।

ইতিহাসের শিক্ষা এবং বিশ্বব্যবস্থার ভবিষ্যৎ

ইতিহাসে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওঠানামা করে। রোমান ও চীনা সাম্রাজ্য একসময় তাদের সামরিক আধিপত্য, অর্থনৈতিক একীকরণ ও সম্মিলিত নিয়মের মাধ্যমে শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল, তাদেরও পতন হয়েছে। বর্তমান আমেরিকা-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থা (১৯৪৫ সাল থেকে স্থিতিশীল ছিল), তা এখন একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

বিশ্ব নেতাদের অবশ্যই এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি সঠিক ভারসাম্য খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য যতটুকু সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতা সম্ভব তা চালিয়ে যাওয়া। বর্তমানে এ অস্থিরতা শুধু আমেরিকা-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার অবসানের প্রতিফলন কিনা, নাকি এটি একটি অস্থায়ী অস্থিরতা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদি ট্রাম্পের মতো আর কোনও জাতীয়তাবাদী নেতা ক্ষমতায় ফিরে আসেন, তবে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল নেতৃত্ব আরও দুর্বল হতে পারে। তবে অন্য কোনও নেতৃত্বে পুনরায় যদি আন্তর্জাতিক জোট ও বহুপাক্ষিকতার প্রতি প্রতিশ্রুতি দৃঢ় হয়, তবে কিছু স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

শুধু তাই নয়, চীনের উত্থান ও রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাব বিশ্বব্যাপী দৃশ্যপট গঠনে প্রভাব ফেলবে। দেশগুলোকে তাদের আঞ্চলিক জোট শক্তিশালী করতে, প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে এবং অর্থনৈতিক অংশীদারত্বে বৈচিত্র্য আনতে হবে। ১৯৪৫ সালের আগেও বিশ্বব্যবস্থা চিরস্থায়ী ছিল না এবং এর স্থায়িত্বও অনিশ্চিত।

বিশ্বব্যবস্থার ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে জাতিগুলো এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে চলবে। ইতিহাসের আলোকে বলা যায়, অসুবিধা ও বিশৃঙ্খলার সময়কাল পেরিয়ে তারপর নতুন স্থিতিশীলতা আসবে।

এবার ট্রাম্পের হু’মকির বিরুদ্ধে ‘কড়া বার্তা’ দিলেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী!

কানাডাকে নিজেদের অঙ্গরাজ্য করার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ হুমকির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। শপথের পর তিনি এ বার্তা দেন। শনিবার ( ১৫ মার্চ) সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রাজধানী অটোয়ার রিডা হলের বাইরে সমবেত জনতার উদ্দেশে কার্নি বলেন, আমরা কখনই, কোনো আকার বা আকৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হব না। আমরা মৌলিকভাবে একটি ভিন্ন দেশ।

ব্যাংক অফ কানাডা এবং ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের সাবেক এ গভর্নর বলেন, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘সম্মান আশা করে’, একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে তার সরকার ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ‘একসাথে কাজ করার’ উপায় খুঁজে পাবে।

এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, অর্থনৈতিকভাবে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হলে দেশটির জন্য ভালো হবে। এ বিষয়ে কার্নি বলেন, এটা পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়।

এদিকে গত রোববার সদস্যদের ভোটে লিবারেল পার্টির নতুন নেতা বাছাই হয়। এতে মার্ক কার্নি ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিনা ফ্রিল্যান্ড পেয়েছেন ১১ হাজার ১৩৪ ভোট।

টানা ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ট্রুডো। এরপর তার উত্তরাধিকার বাছাইয়ের জন্য ৯ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছিল।

কানাডার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হাউস অব কমন্সের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে যিনি লিবারেল পার্টির প্রধান হবেন, দেশটির প্রধানমন্ত্রীও হন তিনি। এ হিসেবে মার্ক কার্নি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কার্নি এমন সময়ে দায়িত্ব নিয়েছেন যখন কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি কানাডিয়ান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা কানাডার অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। কার্নি এই পরিস্থিতিকে ‘জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণকারী মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ভারতের সেনাপ্রধান শেখ হাসিনার ফেরা নিয়ে কি ‘মন্তব্য’ করেছেন?

সম্প্রতি বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ফিরলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগের মতো হবে শীর্ষক মন্তব্য ভারতীয় সেনাপ্রধান করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে শেখ হাসিনা ফিরলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক ভালো অবস্থানে যাবে। তবে ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ খবর সঠিক নয়। ভারতীয় সেনাপ্রধান এমন মন্তকব্য করেননি।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ফিরলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগের মতো হবে শীর্ষক মন্তব্য করেননি ভারতীয় সেনাপ্রধান বরং, ভারতীয় সেনাপ্রধানের বাংলাদেশে সরকার বদলালে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক পরিবর্তন হতে পারে শীর্ষক মন্তব্যকে আলোচিত ভুল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ফিরলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগের মতো হবে’ শীর্ষক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ভিডিওতে জাতীয় দৈনিকের লোগো লক্ষ করা যায়।

ওই দৈনিকের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে একটি ভিডিওসহ ১০ মার্চ প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সঙ্গে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সরকার বদলালে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক পরিবর্তন হতে পারে: ভারতীয় সেনাপ্রধান’।

এ বিষয়ে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে ৯ মার্চ ‘বাংলাদেশে সরকার বদলালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন হতে পারে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে ভারতের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের পরিবর্তন আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সামরিক সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী এবং উভয় দেশের সামরিক বাহিনী নিয়মিতভাবে নোট বিনিময় করে থাকে।

অর্থাৎ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকেও এটি নিশ্চিত যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ফিরলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগের মতো হবে শীর্ষক মন্তব্য ভারতীয় সেনাপ্রধান করেননি।

সুতরাং ভারতীয় সেনাপ্রধানের বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্তব্যকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসলে সম্পর্ক আগের মতো হবে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৮ মার্চ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের অনুষ্ঠান ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভে’ বক্তব্য দেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। সেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সামরিক সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী এবং উভয় দেশের সামরিক বাহিনী নিয়মিতভাবে নোট বিনিময় করে থাকে।

‘মোদি’ কি এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন?

রমজান এলেই ব্যবসায়িক চাঙা ভাব দেখা যায় বাংলাদেশ ও কলকাতার নিউ মার্কেটে। একসময় রমজান মাসে নিউ মার্কেটের দোকানগুলো থাকত সরগরম, পা ফেলার জায়গা মিলত না। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলত বেচাকেনা।

কিন্তু এবার দৃশ্যপট পুরোপুরি ভিন্ন। নিউ মার্কেটের অলিগলিতে যেন নীরবতা নেমে এসেছে, কোথাও কোনো কোলাহল নেই। এর পেছনে বড় কারণ ভারত সরকারের নেওয়া কঠোর ভিসানীতি। প্রতিবেশী বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে মোদি প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেয়।

পর্যটন ও মেডিকেল ভিসাতেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ফলশ্রুতিতে কলকাতার ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। নিউ মার্কেট, ট্রেজার আইল্যান্ড, সিম্পার মল—সব জায়গায় বাংলাদেশি ক্রেতার অভাবে বেচাকেনা স্থবির।

ব্যবসায়ীদের মতে, নিউ মার্কেটের মোট ব্যবসার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ নির্ভর করত বাংলাদেশি ক্রেতাদের ওপর, যা রমজানে আরও বেড়ে যেত। এবার সেই চিত্র উল্টো—হোটেল খালি, দোকান বন্ধ, পরিবহন ব্যবসাও ঝুঁকির মুখে।

কলকাতার প্রায় ১০০টির বেশি হোটেল এবং ৩,০০০ দোকান বাংলাদেশি ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল। অনেকে দোকান ভাড়া চালাতে পারছেন না, কেউ কেউ দোকান বন্ধ করতেও বাধ্য হচ্ছেন। ক্ষোভ জমছে ব্যবসায়ীদের মনে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে এই পরিস্থিতি তৈরি করায় মোদি প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ অনেকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদি প্রশাসন বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের আশায় এই কৌশল নিয়েছে, কিন্তু এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে বড় আঘাত এসেছে।

এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মোদি সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত সমাধান চান, কিন্তু মোদি প্রশাসন তাদের অভিযোগ শুনবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এবার পাল্টা হুমকি দিয়ে যা বললেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অ্যালকোহলজাত পণ্যের ওপর ২০০% শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, যদি ইইউ মার্কিন হুইস্কির ওপর আরোপিত ৫০% শুল্ক অবিলম্বে না সরায়, তবে তিনি ফ্রান্সসহ ইইউভুক্ত দেশগুলোর ওয়াইন, শ্যাম্পেন এবং অন্যান্য অ্যালকোহলজাত পণ্যের ওপর এই কঠোর শুল্ক আরোপ করবেন।

ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম “ট্রুথ সোশ্যাল”-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “এটি আমেরিকার ওয়াইন ও শ্যাম্পেন ব্যবসার জন্য দারুণ হবে! তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, “ইইউ যদি মার্কিন হুইস্কির ওপর আরোপিত ৫০% শুল্ক অবিলম্বে না সরায়,

তাহলে আমরাও ইইউ থেকে আমদানি করা সব ধরনের ওয়াইন ও অ্যালকোহল পণ্যের ওপর ২০০% শুল্ক বসাব। ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে মার্কিন-ইইউ বাণিজ্য সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন বাণিজ্য ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে,

এবং এই পদক্ষেপ তার নীতি অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই নতুন শুল্কের হুমকি বাস্তবায়িত হলে ফ্রান্সসহ ইউরোপের মদ রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে, অন্যদিকে মার্কিন মদ প্রস্তুতকারীরা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারে।

সূত্রঃ https://www.bbc.com/news/live/cx2gprz84rlt?post=asset%3A521e079d-35ab-48c8-9d9e-faf4faf730ce#post

বিশ্ববাসী এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হতে যাচ্ছে! এই রমজানেই যে দিন দেখা যাবে ’ব্লাড মুন’

২০২৫ সালের ১৩ বা ১৪ মার্চ, রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে, বিশ্ববাসী এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী হতে যাচ্ছে। এই দিনে আকাশে দেখা যাবে একটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ, যা ‘ব্লাড মুন’ বা রক্তিম চাঁদ নামে পরিচিত। এটি ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো একটি সম্পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হবে, যেখানে চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় সম্পূর্ণভাবে ঢেকে গিয়ে রক্তিম বর্ণ ধারণ করবে।

পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ কী?
যখন পৃথিবী সূর্যকে আংশিকভাবে ঢেকে দেয়, তখন পৃথিবী থেকে চাঁদ আংশিকভাবে দৃশ্যমান হয়, এবং একে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়। আর যখন পৃথিবী সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে, তখন পৃথিবী থেকে চাঁদ সম্পূর্ণভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়, এবং একে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মহাজাগতিক দৃশ্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে দৃশ্যমান হবে।

উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা: যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং চিলি থেকে সম্পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ উপভোগ করা যাবে।
ইউরোপ: যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন এবং জার্মানির মতো কিছু দেশে চন্দ্রগ্রহণের আংশিক পর্যায় দেখা যাবে, তবে গ্রহণ চলাকালীন সময়েই চাঁদ অস্ত যাবে।

আফ্রিকা: মরক্কো, মিশর, আলজেরিয়া এবং তিউনিসিয়া মতো দেশগুলোতে গ্রহণের প্রথম অংশ দৃশ্যমান হবে, তবে চাঁদ অস্ত যাওয়ার কারণে সম্পূর্ণ গ্রহণ দেখা যাবে না।

অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর-পূর্ব এশিয়া: জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং পূর্ব চীনে চন্দ্রোদয়ের সময় গ্রহণের শেষ অংশ দেখা যাবে।

মধ্যপ্রাচ্য: সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং ইরাকের মতো দেশগুলোতে পূর্ণগ্রহণ দেখা যাবে না। এসব অঞ্চলে শুধুমাত্র গ্রহণের প্রাথমিক পর্যায় কিছুটা দৃশ্যমান হতে পারে।

এই বিরল মহাজাগতিক দৃশ্যটি, বিশেষ করে রমজান মাসে, আকাশপ্রেমীদের জন্য এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।
এই ‘ব্লাড মুন’ চন্দ্রগ্রহণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুসারে, চাঁদ যখন সম্পূর্ণরূপে পৃথিবীর ছায়ার মধ্যে প্রবেশ করে, তখন সূর্যালোক পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দিয়ে ছেঁকে গিয়ে লালচে আভায় প্রতিফলিত হয়।

এই প্রক্রিয়াকে Rayleigh Scattering বলা হয়, যা সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয়ের সময় আকাশকে লালচে দেখানোর কারণের মতোই কাজ করে।রমজান মাস মুসলমানদের জন্য বিশেষ পবিত্র ও আত্মশুদ্ধির সময়। ইসলামি ঐতিহ্য অনুসারে, চন্দ্রগ্রহণ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এসময় ইসলামে সালাতুল খুসুফ বা চন্দ্রগ্রহণের বিশেষ নামাজ আদায়ের বিশেষ এক গুরুত্ব রয়েছে।

এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করতে কোনো বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। এটি খালি চোখেই নিরাপদে দেখা যাবে। বিশেষ করে আমেরিকার দর্শকদের জন্য ০৬:২৬ থেকে ০৭:৩১ UTC সময়ের মধ্যে চাঁদের লালচে রঙ সবচেয়ে স্পষ্ট দেখা যাবে।

যেসব অঞ্চলে এ গ্রহণ দৃশ্যমান হবে না, তারা অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে এটি উপভোগ করতে পারবেন। নাসা জানাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরবর্তী পূর্ণগ্রাহী চন্দ্রগ্রহণ ২০২৬ সালের মার্চে হবে, তাই এটি একটি বিশেষ দৃষ্টিনন্দন মুহূর্ত যা আকাশপ্রেমীদের জন্য এক অপরিহার্য অভিজ্ঞতা।