সেই নিখোঁজ সুবাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো যে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য পরিবারের সঙ্গে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আরাবি ইসলাম সুবা নামে ১১ বছরের এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছে। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কৃষি মার্কেট এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছে।

আরাবি ইসলাম সুবা বরিশালের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিখোঁজের পর তার বাবা-মা ভেঙে পড়েছেন। পুলিশ বলছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে একজন ছেলের হাত ধরে চলে যায় সুবা। ওই ছেলের মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে মেয়েটিকে উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।

বর্তমানে নওগাঁয় তাদের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুকৌশলে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছেন সুবা। ২০ বছর বয়সী ওই ছেলের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। তাদের ফেসবুকে পরিচয়।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আরাবি ইসলাম সুবার পরিবারের বরাত দিয়ে ওসি এস এম জাকারিয়া বলেন বলেন, যে ছেলেটির সঙ্গে দেখা গেছে সেই ছেলের সঙ্গে সুবার সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের জের ধরে চলে যায়। ছেলেটির যে মোবাইল নম্বর সেই মোবাইল নম্বর দিয়েছে মেয়েটির পরিবার।

মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে মেয়েটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মেয়ে নিখোঁজের বিষয়ে জানতে চাইলে সুবার বাবা ইমরান রাজিব বলেন, সুবা বরিশালের একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রীর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য দুই মাস ধরে ঢাকায় বোনের (সুবার ফুফু) বাড়িতে আছি।

তিনি আও বলেন, রোববার সন্ধ্যায় ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে বাইরে বের হয় সুবা। রাস্তা পার হওয়ার সময় ফুফাতো ভাই কিছুটা আগে চলে যায়। পরে সে পেছনে ফিরে দেখে সুবা নেই। আদাবর থানায় জিডি করেছি। পুলিশ বলেছে তারা চেষ্টা করছে।

নতুন অডিওতে কাঁদতে কাঁদতে যা বললেন শেখ হাসিনা

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে পালান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। সেই থেকে ভারতের মাটিতে রয়েছেন হাসিনা। আওয়ামী লীগের পোস্ট করা নতুন এক অডিও ক্লিপে সেই যন্ত্রণার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সমর্থকদের উদ্দেশে এক অডিও বার্তায় কেঁদে শেখ হাসিনা দাবি করেন, তাঁকে হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছিল। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন। শুক্রবার শেষ রাতের দিকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যান্ডল থেকে হাসিনার একটি ছোট অডিও ক্লিপ পোস্ট করা হয়।

৪৯ সেকেন্ডের ওই অডিও ক্লিপে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার সময়ের কথা বর্ণনা করছিলেন তিনি।

সেখানে হাসিনা জানান, ২০ থেকে ২৫ মিনিটের ব্যবধানে তিনি এবং তাঁর বোন শেখ রেহানা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। অডিও ক্লিপের শেষাংশে দেশছাড়া হওয়ার দুঃখের কথা বলতে গিয়ে হাসিনার গলা ধরে ওঠে। তিনি বলেন, ‘আমার কষ্ট হচ্ছে, আমি আমার দেশছাড়া, ঘরছাড়া। সব কিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হয় গত বছরের আগস্টে। গত ৫ আগস্ট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। চলে যান ভারতে। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সে দেশে হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই অবস্থায় হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে বিচার সম্পন্ন করতে চাইছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য নয়াদিল্লিতে কূটনৈতিক বার্তাও (নোট ভার্বাল) পাঠিয়েছে ঢাকা। কূটনৈতিক বার্তার প্রাপ্তি স্বীকার করলেও হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো দিল্লির তরফে জানানো হয়নি।

পুলিশের চাকরি হারিয়ে হয়েছেন ছি’নতাইকারী, ছি’নতাই করতে গিয়ে হলেন গ্রে’ফতার

রাজধানীর হাতিরঝিল থানা এলাকায় পুলিশের ইউনিফর্ম পরে পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সোমবার রাতে হাতিরঝিলের চৌধুরী পাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে পুলিশের ইউনিফর্মের ১টি শার্ট, একটি প্যান্ট, একটি জোড়া অক্সফোর্ড স্যু, একটি পুলিশের ট্র্যাকসুট, একটি পুলিশের রিফ্লেকটিং ভেস্ট, ইউনিফর্মের বিভিন্ন উপকরণ, একটি পিস্তল কভার ও সাতটি মোবাইল ফোনসহ ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত দুইটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য মো.হাকিম উদ্দিন (৩০), মো. শহিদ (৩৫) ও আল আমিন মাতুব্বর (২২)।

উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, তিনজন লোক হাতিরঝিলের চৌধুরী পাড়ার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পুলিশের পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের মুখে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ছিনতাই এমন খবর পাওয়া যায়।

এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় থানার একটি টিম। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হাকিম জানায় তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক সদস্য। ২০২২ সালে চাকুরিচ্যুত হন তিনি।

চাকরি চলে যাওয়ার পর গ্রেপ্তারদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ পরিচয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতেন। গ্রেপ্তার হাকিমের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।

দু’র্ঘটনা থেকে বাঁচতে অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেছে ‘পেটগো’

প্রায় প্রতিদিনই সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য কুকুর-বিড়াল। আর এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন গাড়ির চালক-আরোহীরাও।

এ ধরণের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করেছে অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার প্ল্যাটফর্ম ‘পেটগো’। অন্ধকার রাস্তায় সহজেই প্রাণীদের দৃশ্যমান করতে তাদের গলায় পড়ানো হচ্ছে রিফ্লেক্টিং বেল্ট।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) মোহাম্মদপুর এলাকায় থেকে তাদের এ কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথম দিনে অন্তত ২০০ কুকুরের গলায় এই বেল্ট পড়ানো হয় বলে জানা গেছে।

পেটগোর প্রতিষ্ঠাতা সাকিব মেহেদী বলেন, জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় মানুষের পাশাপাশি সমাজে প্রাণীদেরও জীবনের মূল্য অপরিসীম। আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে, এই প্রাণীদের জন্য আমাদের সমাজকে নিরাপদ আভাসভূমি হিসেবে তৈরী করে দেয়া।

রিফ্লেক্টিং বেল্ট পড়ানোর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এই বেল্ট পড়া থাকলে দূর থেকে গাড়ি বা বাইকের চালক বুঝতে পারবেন সামনে কোনো কুকুর বা বিড়াল আছে। চালক সহজেই তার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন। ফলে এটা উভয়পক্ষের জন্যই কল্যাণকর।

তিনি বলেন, প্রথম দিনে প্রাথমিকভাবে আমরা ২’শর মতো বেল্ট পড়িয়েছি। আমাদের আপাতত লক্ষ্য ঢাকা শহরের সব কুকুরকে এই বেল্ট পড়ানো। আমাদের এ কার্যক্রম চলতে থাকবে।

আদাবরের স্থানীয় বাসিন্দা তমাল আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে রাতে এলাকায় ফিরে দেখলাম প্রায় সব কুকুরের গলায় বেল্ট। আমার বাসার গলির দৃশ্যই যেন বদলে গেছে। আমি প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে জেনে খুব ভালো লেগেছে। তাদের এ ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

পেটগোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোবাশ্শির ফাহাদ বলেন, শুধু গাড়ির দুর্ঘটনা নয়, বেল্ট পড়া কুকুর-বিড়াল দেখলে আমরা ধরে নিই- এই প্রাণী প্রভুহীন নয়।

সেক্ষেত্রে নির্যাতনের পরিবর্তে তাদের সমীহ করি অনেক ক্ষেত্রেই। পেটগোর এই কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজে এ বার্তা দেবে, বেল্ট পড়ানো এ প্রাণীগুলোর দেখভাল করছে কেউ। ফলে সমাজে অ্যানিম্যাল এবিউজ কমবে।

এক সেনা সদস্যকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে জীবন্ত ক’বর!

চুয়াডাঙ্গা শহরের জান্নাতুল মাওলা কবরস্থান থেকে শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় এক সেনা সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। অচেতন অবস্থায় উদ্ধারকৃত সেনা সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া সেনা সদস্যের নাম শরিফুল ইসলাম শান্ত। তিনি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ভিলিজার গ্রামের বাসিন্দা।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ৬ তলার ৬০৫ নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি, ফলে তিনি সেনাবাহিনীর কোন ইউনিটে কর্মরত ছিলেন তা জানা সম্ভব হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান জানিয়েছেন, সেনা সদস্য শরিফুল ইসলাম শান্ত ১৫ দিন আগে ট্রেনিংয়ের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন।

কীভাবে তিনি চুয়াডাঙ্গায় এলেন এবং অচেতন অবস্থায় কবরস্থানে পাওয়া গেল, তা তদন্তের বিষয়। তার গ্রামের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা এলে তার পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। পুলিশের ধারণা, এটি একটি পরিকল্পিত হ’ত্যাচেষ্টা হতে পারে।

তাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার উদ্দেশ্যে হাত-পা ও মুখ বাঁধা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অচেতন অবস্থায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জ্ঞান ফিরলে তার কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ নেওয়া হবে।

ভূমিকম্প নিয়ে এবার বাংলাদেশের জন্য এলো বড় ‘দুঃসংবাদ’

চলতি (জানুয়ারি) মাসের প্রথম সাত দিনে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গত দুই বছরে এমন অনেকগুলো ছোটো-মাঝারি ভূমিকম্প দেখেছে বাংলাদেশ। ছোটো ছোটো ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে রয়েছে ঢাকা। অথচ এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি কমাতে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি কোনো সরকার। ভূমিকম্পপ্রবণ বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত তিন মাসে বাংলাদেশের আশপাশে মৃদু ও তীব্র মাত্রার অর্ধশতাধিকের বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। গত ১৫ বছরে ছোটো-বড় ভূমিকম্প হয়েছে দেড় শতাধিকের বেশি, যা আশঙ্কাজনক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃদু মাত্রার এসব ভূমিকম্প ইঙ্গিত দেয়, সামনে বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের চেয়ে সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। সবার আগে ভূমিকম্পে সচেতনতা জরুরি। ঢাকা শহরে বেশিরভাগ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য ভবনগুলো ভূমিকম্প নিরোধক কিংবা মজবুত করা প্রয়োজন। ভূমিকম্পের সময় নিজেকে নিরাপদ রাখার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শুকনো খাবার, পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসাসমগ্রী সংগ্রহ করা দরকার।- ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ৭ জানুয়ারি সকালে অনুভূত হওয়া রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে তিব্বতে নিহত শতাধিক। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের বেশ কিছু অংশেও একই সময় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। প্রধান ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনে অবস্থানের কারণে এ অঞ্চলে ভূমিকম্প বেশ সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৭৫ বছরে বড় ভূমিকম্প হয়নি, শিগগির হওয়ার আশঙ্কা
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ভূকম্পনের সক্রিয় এলাকায় অবস্থিত। দুর্যোগ সূচক অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে রয়েছে ঢাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছোটোখাটো কম্পন দেশের আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা নির্দেশ করে। ঐতিহাসিকভাবে ১৮৬৯ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে রিখটার স্কেলে ৭-এর বেশি মাত্রার পাঁচটি ভূমিকম্পে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৮৮৫ সালের ভূমিকম্প এবং ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্পের প্রতিটিরই কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশের মধ্যে এবং যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছিল। এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্প প্রায় ৭৫ বছর ধরে ঘটেনি, তাই শিগগির একটি বড় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

ছোটো-মাঝারি ভূমিকম্পে তীব্র ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেবার আতঙ্কেই মারা যান ছয়জন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়া ভারত ও মিয়ানমার টেকটোনিক প্লেটে গত শত বছরেও বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। তাই এই প্লেটে সঞ্চিত হয়েছে দীর্ঘদিনের শক্তি। এটি যে কোনো মুহূর্তে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে হাজির হওয়ার আশঙ্কা আছে। এমন মাত্রার ভূমিকম্প হলে সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে না ঢাকা। মৃত্যু হতে পারে কয়েক লাখ মানুষের।

২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল বান্দরবান ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। তখন রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল। এর আগে ২০২৩ সালের ২ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। তখন রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে তিনবার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত। এছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের কাছাড় এলাকা। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে দুই দফায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে একটি অনুভূত হয় ২৯ আগস্ট। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট। এর আগে ১৪ আগস্ট আরেকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। আগস্টের দুটি ভূমিকম্পের উৎসস্থল ডাউকি চ্যুতির মধ্যে ছিল।

২০২৩ সালের গত ৫ জুন ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম লাইভ মিন্ট জানায়, এদিন সকালে বঙ্গোপসাগরে ৩ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের কাছে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে। বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ৮টার দিকে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। বুয়েট ও সরকারের একটি যৌথ সমীক্ষায় দেখা যায়, সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। যেখানে তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ।

টেকটোনিক প্লেট ও ভূমিকম্প
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, প্লেট টেকটোনিক্স (Plate Tectonics) ভূতাত্ত্বিক মতবাদ অনুসারে ভূত্বক প্রধানত সাতটি বড় ও কয়েকটি ক্ষুদ্র গতিশীল কঠিন প্লেট দ্বারা গঠিত, যেগুলো নিম্নস্থ ভ্রাম্যমাণ উষ্ণ গুরুমণ্ডলীয় পদার্থের ওপর ভাসছে। প্লেটের বিচলন (movement) ও পারস্পরিক ক্রিয়া ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, পর্বত সৃষ্টি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ভূতাত্ত্বিক ঘটনাবলির নিয়ন্ত্রক বলে ধারণা করা হয়।

টেকটোনিক প্লেট যেভাবে ভূমিকম্পের অনুঘটক
তিন ধরনের পারস্পরিক প্লেট সীমানার কথা জানা যায়। সমকেন্দ্রাভিমুখী সীমা, অপসারী সীমা ও পরিবর্তক চ্যুতি সীমা। পরিবর্তক চ্যুতি সীমা যখন দুটি প্লেট একে অপরকে অতিক্রম করে যায়, তখন তাকে পরিবর্তক চ্যুতি সীমা বলে। তিন ধরনের প্লেট বিচলনেই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

বঙ্গীয় অববাহিকার অধিকাংশই পড়েছে বাংলাদেশে। ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এর উৎপত্তি। ক্রিটেসিয়াস যুগের পূর্বে (সাড়ে বারো কোটি বছর আগে) বাংলাদেশের অংশবিশেষসহ (বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল) ভারতীয় প্লেট, অ্যান্টার্কটিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত থেকে গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে একটি বৃহৎ মহাদেশ গড়ে তোলে। বাংলাদেশের অবশিষ্টাংশের তখন অস্তিত্ব ছিল না। অতঃপর গন্ডোয়ানাল্যান্ডে ফাটলের ফলে ভারতীয় প্লেটের উত্তরমুখী সঞ্চরণ ও সর্বশেষ এশীয় প্লেটের সঙ্গে এর সংঘর্ষের ফলে হিমালয় পর্বতমালা ও বাংলাদেশের ব-দ্বীপীয় সমভূমির সৃষ্টি হয়।

যখন তখন ভূমিকম্প, বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?
ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যে পর্যায়ক্রমিক সংঘর্ষ ইয়োসিন যুগে (৫ কোটি থেকে সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে) হিমালয়ের প্রারম্ভিক উত্থানের সময় প্রথম সংঘটিত হয়। নবীন ইয়োসিন যুগে (সাড়ে তিন কোটি থেকে ৪ কোটি) ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যবর্তী টেথিস সাগরের সর্বশেষ চিহ্ন সম্ভবত বিলীন হয়ে যায়। এই সময়েই ভারতীয় প্লেটের অভিসরণ দিক দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষসহ উত্তর থেকে উত্তর পূর্ব দিকে পরিবর্তিত হয়ে যায়। ওলিগোসিন যুগ থেকে (সাড়ে তিন কোটি বছর আগে) প্লেট সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে এবং বিশাল নদীমালার জলরাশিতে দক্ষিণে আদি বঙ্গীয় অববাহিকা ভরে উঠলে উত্থিত হিমালয়ের অবক্ষেপ নেমে আসতে শুরু করে। মায়োসিন পরবর্তী সময় থেকে (আড়াই কোটি বছর তৎপরবর্তী) অববাহিকায় দ্রুত অবনমনের সঙ্গে হিমালয় পবর্তমালার দ্রুত উত্থানের ফলে বিপুল অবক্ষেপের সুতপের পাশাপাশি বৃহদাকৃতির বদ্বীপ গড়ে ওঠে।

৭ মাত্রার ভূমিকম্প যদি সীমান্ত এলাকায় হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হবে। ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হবে কারণ ঢাকার ভবনগুলো বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ।-অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ নামের এই সুবৃহৎ বদ্বীপের গঠন প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত আছে। এদিকে ভারতীয় প্লেটের এশীয় প্লেটের নিচে অধোগমন হিমালয়ের উত্তরাঞ্চলে একটি সন্ধি রেখা অঞ্চল সৃষ্টি করেছে। আর পূর্বে ইন্দো-বার্মান পর্বতসারি পূর্বাঞ্চলীয় প্লেট সংঘর্ষের অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। এশীয় প্লেটের সঙ্গে ভারতীয় প্লেটের সংঘর্ষ আজও অব্যাহত আছে। মাঝে মধ্যেই প্লেট সংলগ্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প এ কথাই প্রমাণ করে।

সক্রিয় তিনটি টেকটোনিক প্লেট
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আশপাশ দিয়ে তিনটি টেকটোনিক প্লেট গেছে। এর সংযোগস্থল সীমান্তের আশপাশে। যেমন আমাদের উত্তরে হিমালয় পড়েছে ইউরেশিয়ান প্লেটে। আমাদের অবস্থান ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটে। আর আমাদের পূর্বে হচ্ছে মিয়ানমার মাইক্রো প্লেট। এ তিনটি প্লেটই আমাদের কানেক্টেড এবং সক্রিয়। প্লেটগুলোর মুভমেন্ট আছে। এগুলো প্রতি বছর পাঁচ সেন্টিমিটার বা ৫০ মিলিমিটার মুভমেন্ট করে। তার মানে, প্রতি বছর আমরা পাঁচ সেন্টিমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মুভমেন্ট করছি। একইভাবে পুরো পৃথিবীও মুভ করছে।’

অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে সরকার ইক্যুইপমেন্টস কিনে দিয়েছে। শুধু ইক্যুইপমেন্টস দিয়ে হবে না। কারণ ভবন মেরামত না করলে ভবন চাপা পড়ে মানুষ মারা যাবেই। ঢাকা শহরে এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের অপরিকল্পিত লাইন ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।’

ঢাকা শহরের বেশিরভাগ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবার আগে ভূমিকম্পে সচেতনতা জরুরি। ঢাকা শহরের বেশিরভাগ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য ভবনগুলো ভূমিকম্প নিরোধক কিংবা মজবুত করা প্রয়োজন। ভূমিকম্পের সময় নিজেকে নিরাপদ রাখার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শুকনো খাবার, পানি ও প্রাথমিক চিকিৎসাসমগ্রী সংগ্রহ করা দরকার।’

আশপাশে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি দুটি ভূমিকম্পে বাংলাদেশও কেঁপে উঠেছে। এগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল, কারণ প্লেট বাউন্ডারি। প্লেট বাউন্ডারি বরাবর এরকম প্রতিদিনই প্রচুর হয়, যেগুলো ছোটো ছোটো ভূমিকম্প, তবে মাঝে মধ্যে বড় ভূমিকম্পও হয়। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প যদি সীমান্ত এলাকায় হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হবে। ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি হবে কারণ ঢাকার ভবনগুলো বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ।’ বাংলাদেশে যত্রতত্র এবং অনুমোদনহীন বহুতল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বৈধ করতে রিয়েল এস্টেটের চাপে সরকার ইতোমধ্যে নমনীয়। ভূমিকম্প হলে যে আশ্রয়স্থলে দাঁড়াবেন সেই জায়গাগুলোতে মেগা প্রকল্প হচ্ছে। দিনশেষে ভূমিকম্পের বিষয়ে ভালো সংবাদ কমই পাচ্ছি আমরা।- আদিল মুহাম্মদ খান

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্লেট বাউন্ডারির কাছাকাছি আছে, আগেও এখানে বড় ভূমিকম্প হয়েছে এবং আগামীতেও হতে পারে। ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ দেশ। সেই ঝুঁকি অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভবনের নকশা করা নেই। পুরাতন ভবনগুলো নাজুক এবং নতুন ভবনগুলো গ্রাউন্ড প্যারামিটার অনুযায়ী করা হয়নি। এ কারণে ঝুঁকি অনেক বেশি। ভূমিকম্প সহায়ক ভবন বাংলাদেশেও করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ উন্নত দেশগুলো করেছে।’

কম্পন অ্যালার্মিং, বিল্ডিং কোড মানতে কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা ভয়ংকর
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প বাংলাদেশের জন্য অ্যালার্মিং। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে কিছু কিছু ভূমিকম্প বেশ কয়েক বছর ধরে হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী যেন ভবনগুলো বানোনো হয়। যে ভবনগুলো বানানো হচ্ছে সেগুলো সঠিক জায়গায় করা। বিল্ডিং কোড মানার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা ভয়ংকার।

সরেজমিনে তদন্ত করার ক্ষেত্রে দক্ষতা ও আগ্রহ কোনোটাই এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেনি তারা। বিপরীতে নিচু ভূমি ও জলাভূমি ভরাট করে বহুতল ভবন বানানোর যে প্রবণতা সেটা ১০ বছরে মহামারি আকারে বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জলাভূমি ভরাট করে ভবন হচ্ছে, যা অধিকাংশ আইন অমান্য করে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। কয়েক বছর পরে যখন মাস্টার সংশোধন হয় তখন বলে যেহেতু হয়ে গেছে তখন অনুমোদন না দিয়ে কী করার…। এই প্রবণতা যদি চলে বড় ভূমিকম্প লাগবে না, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকায় ৫ কিংবা সাড়ে ৫ মাত্রার হলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হবে।’

‘বাংলাদেশে যত্রতত্র এবং অনুমোদনহীন বহুতল ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো বৈধ করতে রিয়েল এস্টেটের চাপে সরকার ইতোমধ্যে নমনীয়। ভূমিকম্প হলে যে আশ্রয়স্থলে দাঁড়াবেন সেই জায়গাগুলোতে মেগা প্রকল্প হচ্ছে। দিনশেষে ভূমিকম্পের বিষয়ে ভালো সংবাদ কমই পাচ্ছি আমরা।’ কর্তৃপক্ষ বারবার লোকবল কম আছে দোহাই দিয়ে মূল কাজটি পালন করে না উল্লেখ করে অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘এখানে কর্তৃপক্ষ বলতে রাষ্ট্র। কারণ রাষ্ট্রের মন্ত্রণালয়গুলো সঠিক কাজটি করে না। কেউ আইন অমান্য করে সেটা দেখার ক্ষমতায় যদি না থাকে তবে কর্তৃপক্ষের থাকারই দরকার কী! রাষ্ট্রের অনেক সংস্কার হচ্ছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখলাম না কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংস্কার। কর্তৃপক্ষের অনাচারের পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের ধরার ইতিহাস নেই।’

৩ বিভাগে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, জাঁকিয়ে নামবে শীত- আবহাওয়া অফিস

দেশের তিন বিভাগে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এর প্রভাবে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

তবে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এতে আরও বলা হয়, আজ মধ্যরাত থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে এবং এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। গতকাল সোমবার (০৬ জানুয়ারি) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো সীতাকুণ্ডে ৩২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নতুন ৬ দিনের কর্মসূচি দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের দাবিতে দেশব্যাপী যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

আজ শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর বাংলা মটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

তিনি বলেন, প্রোক্লেমেশন অব রিভ্যুলেশনের পক্ষে ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বলেন, আমরা মানুষের কাছে ছুটে যেতে চাই। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, পেশাজীবী মানুষের মাঝে জনসংযোগ চালাব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথভাবে এই কাজটি করবে। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সরকার ঘোষণাপত্র নিয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেয়নি।

অভ্যুত্থানে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। আমাদের আহ্বান থাকবে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার শিগগির কাজ শুরু করবে।

আমরা চাই, সরকারকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ফ্যাসিবাদ সরকার সব মানুষের টুটি চেপে ধরেছিল। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে ছুটে যেতে চাই বলে জানান হাসনাত আবদুল্লাহ।

পবিত্র ‘শবে মেরাজ’ কবে তারিখ জানা গেল

আজ বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) থেকে পবিত্র রজব মাস গণনা করা হবে। সে হিসাবে আগামী ২৭ জানুয়ারি দিনগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে। বুধবার (০১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়,

আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এতে বলা হয়, এমতাবস্থায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাস গণনা শুরু হবে।

এ ছাড়া আগামী ২৭ জানুয়ারি দিনগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে। উল্লেখ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাতে পবিত্র রজব আজ থেকে শুরু হয়েছে। সেখানে আগামী ২৬ জানুয়ারি (২৬ রজব) দিবাগত রাতে ও ২৭ জানুয়ারি (২৭ রজব) দিনে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে।

শবে মেরাজ মুসলমানদের কাছে বিশেষ মর্যাদার। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে এ মূল্যবান রাত কাটান। এই দিন অনেকে নফল রোজাও রাখেন। ‘শবে মেরাজ’ অর্থ ঊর্ধ্ব গমনের রাত।

মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী, ২৬ রজব দিনগত রাতে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহতায়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। রজব হিজরি সনের বিশেষ ও মহিমান্বিত একটি মাস। এ মাস আসে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে।

তাই এই রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ মাসের বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এ মাস আল্লাহ প্রদত্ত ৪টি সম্মানিত মাসের (আশহুরে হুরুমের) একটি।

বাংলাদেশে হিন্দু রক্ষায় ভারতীয় সেনা পাঠানোর দাবি

ভারতের একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন দাবি করেছে যে, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে সেখানে সেনাবাহিনী পাঠানোর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দিল্লির জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। রাষ্ট্রবাদী সনাতনী হিন্দু সংগঠনের সভাপতি অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, “ভারত শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠিয়েছিল, তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে হিন্দুদের রক্ষা করতে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাঠানো উচিত।

এছাড়া, সংগঠনটি আরও দাবি করে যে, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়ন ও অত্যাচারের মাত্রা বর্তমানে অত্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং দেশটির পুলিশ ও প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ভারতকে “সামরিক পদক্ষেপ” গ্রহণ করাই একমাত্র সমাধান হতে পারে।

এর আগে, ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দিল্লিতে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন একই দাবিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দিকে পদযাত্রা করেছিল। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে দিল্লি পুলিশ তাদের দূতাবাস ভবন পর্যন্ত যেতে দেয়নি।

এই ধরনের বিতর্কিত দাবি এবং ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর ওপর ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।