নির্বাচন নিয়ে যে দাবি জানাল নতুন দল ‘এনসিপি’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করার দাবি জানিয়েছে এনসিপি।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবদেন শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।

এর আগে সকাল ৮টার দিকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবদেন শেষে তিনি বলেছেন, পুরোনো সংবিধান এবং শাসন কাঠামো রেখে নতুন বাংলাদেশ সম্ভব নয়।

নতুন প্রজাতন্ত্র গড়ার জন্য গণপরিষদ নির্বাচন এবং নতুন সংবিধান প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করবে নাগরিক পার্টি।

প্রথম কর্মসূচি ‘ঘোষণা’ দিলো জাতীয় নাগরিক পার্টি

জাতীয় নাগরিক পার্টি তাদের প্রথম কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও রায়েরবাজার কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করেছে।

সারজিস আলম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, কর্মসূচির সূচনা হবে সকাল ৭টায়, যেখানে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

পরে সকাল ১০টায়, তারা রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে গিয়ে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করবেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্যদের উক্ত কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মহানগর ও সাভারের নেতৃবৃন্দকেও এতে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এই কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টি তাদের রাজনৈতিক যাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নুরের ‘দলত্যাগ’ নিয়ে হান্নান মাসউদের বিস্ফোরক মন্তব্য: গণঅধিকার পরিষদের প্রতিবাদ

জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের যোগদানের ইচ্ছাপ্রকাশ নিয়ে মন্তব্য করেছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। গতকাল রোববার (২ মার্চ) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে তিনি এ ধরনের তথ্য জানান।

আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, ‘নুরুল হক নুরু ভাই নিজেই তার দল বিলুপ্ত করে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন।’ তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি যাদের নিয়ে নুরুল হক সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাদের অধিকাংশই আমাদের দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং পার্টিতে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কের এই বক্তব্য কেন্দ্র করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে। তবে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নতুন এ রাজনৈতিক দলটিতে যোগ দিচ্ছেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার দলের নেতারা। একইসঙ্গে এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ।

সোমবার (৩ মার্চ) রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদকে নিয়ে দুয়েকটি গণমাধ্যমের তথ্য-উপাত্তবিহীন খবর প্রচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গণঅধিকার পরিষদ দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। আজকে দলের কার্যক্রম জেলা থেকে উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। এই মুহূর্তে তারুণ্যের এক নম্বর রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদ।

সুতরাং গণঅধিকার পরিষদকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকুন। সংবাদ প্রচারের আগে অবশ্যই গণঅধিকার পরিষদের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে নিউজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

আব্দুল হান্নান মাসউদের এই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে অসত্য তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদ ও এর নেতৃবৃন্দ।

গণঅধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এই মুহূর্তে সাংগঠনিক সফরে ইউরোপ অবস্থান করছেন। আর গণঅধিকার পরিষদ ট্রাক প্রতীকে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। গণঅধিকার পরিষদ শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গণতন্ত্র ও গণমানুষের অধিকার আদায়ে রাজপথের ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম মধ্য দিয়ে জনআকাঙ্ক্ষা থেকে গড়ে উঠা বাংলাদেশের একমাত্র অর্গানিক দল। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় গণঅধিকার পরিষদ এদেশের মানুষের নিপীড়িত-শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে গেছে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর শেখ হাসিনার শত কোটি টাকা ও এমপি-মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ প্রত্যাখান করে মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে রাজপথকে বেছে নিয়েছে। যে নুরুল হক নুর ও দেশে-বিদেশে গণঅধিকার পরিষদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হয়রানি, লাঞ্চিত ও নির্যাতিত, এমনকি কারাবরণ করতে হয়েছে। এ দেশের মানুষ জানে শেখ হাসিনার ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদ মোকাবেলায় প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমাগত ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মাধ্যমে উত্থিত বিপ্লবী তরুণ শক্তির আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই গণঅধিকার পরিষদের জন্ম এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রুপকার নুরুল হক নুর এই তরুণ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে জনআকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ বির্নিমানে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তার অর্থ এই নয় যে, তিনি তার দল বিলুপ্ত করে অন্য পার্টিতে যোগদান করবেন। আমরা আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করেছি, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে ও গণঅধিকার পরিষদের ইমেজ ক্ষুন্নকরণে কেউ কেউ তার এই মহৎ আকাঙ্ক্ষাকে বিকৃত ও অসৎ উদ্দেশ্যে প্রচারের চেষ্টা করছেন। গণঅধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ, সকলকে এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার ও প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়।

মরলেও আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবো না: কামাল আহমেদ

আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবো না।আমি রাজনীতি থেকে একেবারে অব্যাহতি নিলাম। ৭৬ বছর বয়সের রাজনীতি করা যায়না। ৩ মার্চ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে তিনি এসব কথা বলেন ।

এ সময় তিনি কারাগারে পড়ার জন্য ডিজিটাল কোরআন শরীফ ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধের আর্জি জানান, কামাল আহমেদ মজুমদার। এদিন ছয় জনকে কারাগারথেকে আদালতে হাজির করা হয়।

সকাল দশটার দিকে পুলিশ পাহারায় তাদের হাজতখানা থেকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়। 10 টা ৭ মিনিটে এজলাসে আসেন বিচারক। এরপর কাফরুল থানার মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি শুরু হয়। শুনানির এক পর্যায়ে কামাল আহমেদ মজুমদার কথা বলার জন্য হাত তোলেন

তখন এ মামলায় তাদের বিচারক গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে বিচারক তাকে কথা বলার অনুমতি দিলে কামাল আহমেদ মজুমদার আদালতকে বলেন, আমার বয়স ৭০ বৎসর। আমার চোখের ৭০ শতাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবারের সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর নিতে পারছিনা। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি আর করবো না। রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিলাম। আমি আওয়ামী লীগের কোনপদে ও নেই। এখন থেকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। তিনি আরো বলেন কারাগারে ডায়াবেটিস চেক করার জন্য ডিজিটাল কোন যন্ত্র বা ওষুধ দেয়া হচ্ছে না। এমনকি পবিত্র কোরআন শরীফে দেয়া হয়নি।

একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, একের পর এক নির্যাতন চালানো হচ্ছে এই বয়সে। আমার উপরে জুলুম চালানো হচ্ছে। আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এজন্য আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি ডায়াবেটিসের ওষুধ, ডায়াবেটিস মাপার ডিজিটাল যন্ত্র ও ডিজিটাল কোরআন শরীফ দেয়া হোক।

এসময় বিচারক বলেন আপনার সবগুলো দাবি আইনজীবীর মাধ্যমে করুন। এরপর বিচারক তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

উল্লেখ্য গত ১৮ অক্টোবর রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর একাধিক মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন।

কাল থেকে সারাদেশে নতুন রাজনৈতিক দলের ব্যানার আসছে: সারজিস আলম

দেশে নতুন রাজনৈতিক দল “জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party – NCP)” গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন সমন্বয়ক সারজিস আলম।

আজ এক ফেসবুক পোস্টে তিনি দলের নাম ঘোষণা করেন এবং কমেন্টে উল্লেখ করেন, “আগামীকাল সারা বাংলাদেশ থেকে এই নামে ব্যানার আসবে। এই নামে মুখরিত হোক বাংলাদেশ।”

নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে যে ‘বার্তা’ দিলেন সারজিস

বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, আগামীকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।

‘ভারত কিছু একটা করবে’ এই ভরসায় আ.লীগের নেতাকর্মীরা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল বা নিষিদ্ধ করার দাবি যখন জোরালো হচ্ছে, সেই সময় সারা দেশে প্রবল চাপের মুখে থাকা দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকে ভারত কী ভূমিকা নিচ্ছে সেই অপেক্ষায় আছেন। অনেকের বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা, ভারত কিছু একটা ভূমিকা রাখবে যার মাধ্যমে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াবে এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগ।

আজ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকালে সেখানে তাকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আলোচনা-বক্তব্য-মন্তব্যে ভারতের ভূমিকা নিয়ে একটা প্রত্যাশা লক্ষ্য করা যায়।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। দলটির বহু নেতা পালিয়ে বা তাদের ভাষায় ‘আত্মগোপন করে’ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছেন।

দেশে ও দেশের বাইরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কর্মী-সমর্থকরা প্রত্যাশা করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারত যে ভূমিকা নিয়েছে এরপর তারা একটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক রাজনৈতিক কর্মী তাদের এই ধারণার কথা জানান।

তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, বিশেষ করে সনাতন বা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-মন্দিরে যেসব হামলা হয়েছে সেটি ভারত ভালো চোখে দেখছে না এবং ভারত তাদের স্বার্থেই এ পরিস্থিতিতে কিছু একটা উদ্যোগ নেবে বলে ‘আভাস’ পেয়েছেন।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের বোঝাপড়ার সারমর্ম হলো, ভারতের একটা ভূমিকা থাকবে।

দেশে অবস্থানরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যমসারির একজন নেতা মনে করেন, ভারত এরই মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার কথায়– ভারতের স্বার্থ এখানে জড়িত।

“ভারত অবশ্যই কিছু একটা করবে। আমার তো মনে হয় ভারত ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকা একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোবে মনে হচ্ছে।”

“হতে পারে বাংলাদেশের ব্যাপারে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ানো হবে। এছাড়া বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহায়তার ক্ষেত্রেও ভারত ভূমিকা রাখতে পারে” বলছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্য-মন্তব্যে এবং রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতেও আওয়ামী লীগের ভারত নির্ভরতার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বলেন, রাজনীতিতে ফেরার ক্ষেত্রে ভারতের সাহায্যের বিষয়টি তার ভাষায় ‘আওয়ামী লীগ পুরোদমে বিশ্বাস করে’।

তিনি বলেন, “একদম যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বিভিন্ন টক শো বা আলোচনায় আমরা দেখতে পাই যে তারা আশা করছে ভারত আবার তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে সাহায্য করবে ফিরে আসার ক্ষেত্রে। এটা তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্যে খুব স্পষ্ট।”

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, বাংলাদেশে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে ভারত নির্ভরতার কোনো সম্পর্ক নেই। দলটির যু্গ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম অবশ্য এটি স্বীকার করেন যে বৃহৎ গণতান্ত্রিক এবং প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত কী অবস্থান নেবে সেটার গরুত্ব রয়েছে।

তার ভাষায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও আদর্শিক কার্যক্রম বন্ধ করা সহজ নয়।

তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক চেতনায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে অবশ্যই ভারত এখানে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি এবং এই বিশ্বাসের সাথে বাংলাদেশের জনগণের যেমন শ্রদ্ধা আছে, ভারতের ১৪০ কোটি জনগণের সমৃদ্ধ চিন্তা আছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”

পাঁচই অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা বন্ধ রয়েছে। মেডিকেল ভিসাও ছয় মাসে খুব নগণ্য সংখ্যক দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনার কথাও জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা করেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই বিশ্লেষক বলেন, ভারত চায় একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে।

ভারতের ভূমিকা নিয়ে যে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মাইনরিটি ইস্যু নিয়ে নিশ্চই অনেক আলোচনা হয়েছিল। তো সেইজন্য হয়তো একটা ধারণা কোথাও হয়েছিল যে বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার যে ঘনিষ্ঠতা সেইখানে হঠাৎ একটা ব্রেক হয়েছে।”

“আমার মনে হয় না কোনো সার্বভৌম দেশ কোনোভাবে যতই সে পারস্পারিকভাবে ঘনিষ্ঠ হোক অন্য কাউকে আউটসোর্স করে দেবে। যেটা একটা ধারণার কথা উঠেছিল মাঝখানে। আমরা আশা করছি, ইলেকশন হবে, জিনিসটা আবার স্থিতিশীল হবে এবং নরম্যালসি চলে আসবে।”

ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করে শ্রীরাধা দত্ত বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার যেই আসুক তার সঙ্গে ভারত কাজ করবে। তবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিয়েই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হোক সেটা হয়তো দিল্লির প্রত্যাশা থাকবে বলে যোগ করেন মিজ দত্ত।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না সেরকমভাবে ইন্ডিয়া পার্টিকুলারলি কখনও আওয়ামী লীগের হয়ে কথা বলবে বা বলতে চাইবে। তবে জাতি হিসেবে আমরা দেখতে চাইবো প্রতিবেশী দেশে সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু এবং বহুদলীয় নির্বাচন হোক। সেই হিসেবে চাইবো যে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগও নিশ্চয়ই পার্টিসিপেট করুক নির্বাচনে।”

এদিকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো- সক্রিয় সবগুলো দল আওয়ামী লীগ বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং নির্বাচন করার সুযোগ না দেয়ারও জোরালো দাবি রয়েছে। একই সঙ্গে ভারত বিরোধী অবস্থানও তীব্র হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের ‘পরিশুদ্ধ’ হয়ে রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করা দরকার বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের উচিত হবে ভারতীয় আধিপত্যবাদের যে রাজনীতিটা তারা সবসময় সাথে নিয়ে হেঁটেছে, সেই বলয় থেকে বেরিয়ে নিজস্ব রাজনীতিতে ফেরা।”

“তারা চাইলে হয়তো একেবারে নিজেদের পরিবর্তন করে যে যে ভুলগুলো তারা করেছেন বা তাদের দলের নেতাকর্মীরা করেছেন সেইসব জায়গা থেকে বের হয়ে একেবারে পরিশুদ্ধ হয়ে একটা চেষ্টা চালিয়ে দেখতে পারেন” বলেন তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদন

চাপের মুখে ভারত, শেখ হাসিনাকে আর সমর্থন করবে না মিডিয়া!

দিল্লির আকাশে তখন ঝলসানো দুপুর, জানালার ওপারে গাঢ় রোদ, কিন্তু ঘরের ভেতর শীতল বাতাস বইছে। সোফার কোণে হেলান দিয়ে বসে আছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, হাতে ভারতের একটি সংবাদপত্র। বড় করে ছাপানো হেডলাইনটি পড়তে গিয়ে তার চোখে অস্বস্তি ফুটে উঠছে—”বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড় বদলের সময় এসেছে হাসিনাকে সমর্থন করা কি ভারতের জন্য ক্ষতিকর?”

শেখ হাসিনা কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়লেন, তার ঠোঁট কামড়ে ধরে আরো মনোযোগ দিয়ে সংবাদটি পড়তে শুরু করলেন। সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে তার অস্বস্তি আরও বেড়ে গেছে। দ্যা প্রিন্ট, হিন্দুস্থান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে—সব জায়গাতেই এখন প্রশ্ন উঠছে হাসিনার সম্পর্কে।

একসময় যেসব সংবাদমাধ্যম ছিল তার পক্ষে, তারা এখন প্রশ্ন তুলছে, কেউ সরাসরি বলছে, “বাংলাদেশের জনগণের কাছে হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা নেই,” আর কেউ পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারতকে নতুন কৌশল নিতে হবে।

এক সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে শেখ হাসিনার প্রতি ছিল গভীর সমর্থন, এমনকি বলা হতো হাসিনাই ভারতের একমাত্র নির্ভরযোগ্য মিত্র। তবে বর্তমানে ভারতের কূটনৈতিক মহলে হাসিনাকে নিয়ে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছেছে এবং ভারতীয় নীতি এখন বিপদে পড়তে পারে। দ্যা প্রিন্টের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, “শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে ভারত নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে, বাংলাদেশের জনগণের ক্ষোভ তীব্র হয়ে উঠছে, এবং ভারতের স্বার্থ এখন হুমকির মুখে।”

ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে বিজেপি বাংলাদেশী জনগণকে পাকিস্তানের সমর্থক হিসেবে চিত্রিত করছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি সতর্কবার্তা উঠে এসেছে, “দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে হারানো ভারতের জন্য কৌশলগত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে।”

বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ক্ষোভ শুধু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, বরং ভারতীয় নীতির বিরুদ্ধেও প্রকাশিত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত বিরোধী মন্তব্যের সুনামি দেখা যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এমনকি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, ভারত তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রকে বাঁচাতে গিয়ে পুরো বাংলাদেশকেই হারাতে বসেছে।

এখন ভারতের কূটনৈতিক মহলে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। এক পক্ষ বলছে, “হাসিনাকে সমর্থন অব্যাহত রাখা উচিত,” অন্য পক্ষ বলছে, “এখনই সরে যাওয়ার সময়।” একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, “শেখ হাসিনার ভারত নির্ভরতা এখন তার রাজনৈতিক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের সমর্থন তাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না, বরং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ডেকে আনবে।”

এখন প্রশ্ন উঠছে, “নরেন্দ্র মোদি সরকার কি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ছেড়ে দেবে, নাকি তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নতুন কোন কৌশল গ্রহণ করবে?” ভারতের সামনে দুটি পথ রয়েছে: এক, হাসিনাকে ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা, এবং দুই, হাসিনাকে বাঁচাতে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়া—যা ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বড় ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে।

এই সংকটপূর্ণ সময়ে ভারতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। শেখ হাসিনা জানেন, তার কপালের ভাঁজ আরও গভীর হতে চলেছে। প্রশ্ন একটাই—দিল্লি কি সত্যিই তার বিশ্বস্ত হাসিনাকে ছাড়তে চলেছে?

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=y0WzQYC3Qsk&ab_channel=NTVNews

উপদেষ্টা পরিষদে বদল আসছে!

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম কয়েকটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই নিজেসহ উপদেষ্টা পরিষদে থাকা শিক্ষার্থীরা পদ ছাড়তে পারেন। বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আর এ মাসের শেষেই ঘোষণা আসছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের।

অধ্যাদেশ নয় বরং বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আর সেটা হতে পারে নির্বাচনের আগেই। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করায় সরকারের সাথে দূরত্ব কমেছে বলেও মনে করেন নাহিদ ইসলাম।

কোটা বাতিল আন্দোলন থেকে সরকার পতনের ঘোষণা। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন। তারপর, এরইমধ্যে চলে গেছে ছয় মাসের বেশি সময়। দেশ পুনর্গঠনে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থীরা গঠন করেন জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাদের পক্ষ থেকেই গঠিত হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল।

আর, এই নতুন দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে এ মাসেই। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ আরো জানান, দলের কার্যক্রমে যোগ দিতে তিনিসহ উপদেষ্টা হিসেব দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন কয়েকদিনের মধ্যেই।

ছাত্রদের নেতৃত্বে একটা নতুন রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনা বা আলোচনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, সে দলে অংশগ্রহণ করতে হলে সরকারে থেকে সেটি সম্ভব নয়। সেই দলে আমি যদি যেতে চাই তাহলে সরকার থেকে আমি পদত্যাগ করবো।

তিনি বলেন, আমরা চিন্তাভাবনা করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও চিন্তাভাবনা করছি। যদি মনে করি, সরকারের থেকে আমার মাঠে যাওয়া, জনগণের সাথে কাজ করা বেশি জরুরি। মনে হয় আমি সরকার ছেড়ে দেবো এবং সে দলের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবো।

ঘোষণা এসেছে দলটি এ মাসেই হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আর কয়েকদিনের ভেতরে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সবাই জানতে পারবেন।

গোপন নথি ফাঁস: ২০১৮ সাল থেকেই হাসিনাকে সরাতে চলছিলো মার্কিন নীল নকশা

একটি অনলাইন সংবাদপত্রের প্রকাশিত গোপন নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য মার্কিন সরকার সক্রিয়ভাবে পরিকল্পনা করে আসছিল।

‘দ্য গ্রেট জোন’ নামের সংবাদপত্রটি জানায়, শেখ হাসিনার সরকার পতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট’ (আইআরআই)-এর মাধ্যমে গোপনে বিশাল কর্মীবাহিনী গঠন করে।

এই ষড়যন্ত্রের আওতায় বিভিন্ন শ্রেণির কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যার মধ্যে র‍্যাপার, এলজিবিটিকিউ কর্মী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ফাঁস হওয়া নথিতে উল্লেখ রয়েছে যে, সরকারবিরোধী আন্দোলন উসকে দিতে সাংস্কৃতিক কৌশল ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়। আন্দোলনকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও তরুণদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে গণজমায়েত, সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং এমনকি হিজড়াদের নাচের পারফরম্যান্সের মতো কর্মসূচিও আয়োজন করা হয়।

আইআরআই-এর মিশন ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ক্রমাগত অস্থিতিশীল করে তোলা এবং বিদ্যমান সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা। নথিতে বলা হয়, “এই পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করা এবং তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য একটি সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করা।”

প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করেছিল, তবে তারা দ্রুত বুঝতে পারে যে বিএনপির জনসমর্থন নেই এবং দলটি রাজনৈতিকভাবে অযোগ্য।

নথিতে আরও বলা হয়, “বিএনপি ছিল মার্কিন সরকারের প্রথম পছন্দ, তবে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জনগণের স্বল্প সমর্থনের কারণে এই পরিকল্পনা সফল হয়নি।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র তাদের কৌশল পরিবর্তন করে তরুণদের টার্গেট করে এবং সামাজিকভাবে তাদের মাধ্যমে সরকারবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়। ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ত্বরান্বিত

করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।এই পরিকল্পনার অধীনে বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের গোপনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়,তরুণদের মাধ্যমে সরকারবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়,বিদেশি মিডিয়ার নজর আকর্ষণ করতে বিক্ষোভের বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করা হয়।

নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ‘প্রতিবাদী শিল্পী’ ও সৃজনশীল কর্মীদের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলে।নথি অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের কার্যক্রম ভিডিও আকারে রেকর্ড করে তা দ্রুত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল-বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটকে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করা,পশ্চিমা মিডিয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নেগেটিভ প্রচারণা চালানো এবং সরকারবিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালানো।

নথিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী বিএনপির জনপ্রিয়তা এতটাই কম ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন ছাড়া তারা ক্ষমতায় আসতে পারত না। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,বিএনপির জনপ্রিয়তার অভাব,

নেতৃত্বের অযোগ্যতা এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। বিএনপি সহিংসতা ও নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করলেও জনগণের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে।

তাই যুক্তরাষ্ট্র তাদের মূল কৌশল পরিবর্তন করে তরুণদের মাধ্যমে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি করতে শুরু করে এবং শিল্পীদের ব্যবহার করে আন্দোলনকে আরও গতিশীল করে।

সূত্র:https://tinyurl.com/3jmxx73w