ডিআইজিসহ পুলিশের ৪ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা আটক

বাংলাদেশ পুলিশের একজন ডিআইজি ও তিনজন পুলিশ সুপারকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে তাদের আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে আনা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানায়, শুক্রবার রাতে নীলফামারীর ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আটক করে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। শনিবার দুপুরের পর তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হয়।

একই দিন রাজশাহী সারদা একাডেমিতে সংযুক্ত থাকা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মোল‍্যা নজরুল ইসলামকে আটক করা হয়। রাজশাহী জেলা পুলিশ একাডেমির সহায়তায় তাকে আটক করে ঢাকার গোয়েন্দা কার্যালয়ে প্রেরণ করে। এ ছাড়া রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও আবুল হাসনাতকে আটক করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানায়, আটক ডিআইজি মোল‍্যা নজরুল ইসলাম গাজীপুর মেট্রোপলিটনের সাবেক কমিশনার ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। একটা সময় তার বিরুদ্ধে খুন-ঘুমসহ অনৈতিকভাবে শক্তি প্রয়োগের অনেক অভিযোগ উঠেছিল।

বিসিএস ২৭ ব্যাচের আবুল হাসনাত বাগেরহাটের পুলিশ সুপার থাকাকালীন ২০২৪ সালের নির্বাচন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন।

আর পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান কুমিল্লা ও সিলেটে এসপি থাকাকালীন নির্বাচন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শক্তি প্রয়োগ করেন। এর আগে সিটি টিসিতে পুলিশ সুপার থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে জঙ্গি নাটক সাজানোর একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে ২৫ ব্যাচের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। নির্বাচন ও পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শক্তি প্রয়োগ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাপক সমালোচিত ছিলেন।

জানা যায়, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর তাদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত রাখা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, নজরুলসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত‍্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ দ্বারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে ?

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার শিগগিরই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে পারে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একটি ঐকমত্য তৈরি হয়েছে,

বিশেষ করে দলের অগণতান্ত্রিক আচরণ এবং একগুঁয়েমি মনোভাবের কারণে। ৫ আগস্টের পর দেশের মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হওয়া যায়, যার ফলে সরকারের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

আসিফ মাহমুদ আরও উল্লেখ করেন যে, সরকার নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চারটি আইন আছে। তিনি জানান, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও, জুলাই এবং আগস্টে গণহত্যায় আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে দলটির নিবন্ধন বাতিল এবং নিষিদ্ধ করার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

তিনি আশ্বস্ত করেন যে, সরকার প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে। জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে তারা এটি বিবেচনা করছে।

তিনি আরও বলেন, যদি কোনো সরকারের প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেন, তবে তাদের সরকার থেকে পদত্যাগ করতে হবে, কারণ বর্তমান সরকার একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং সরকার এসব সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য কাজ করছে।

ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে সবার মতামত চাইলেন ‘সারজিস’

ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছে। এমনকি ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে এবার নিজেই ঘোষণা দিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান সংগঠক সারজিস আলম।

ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল আসছে। এ জন্য জনগণের মতামত চাওয়া হয়েছে পোস্টে।

নিজের ফেরিভায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি লেখেন, ‘ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল আসছে!

আপনি কেমন দল চান আমরা তা জানতে চাই এবং সে আদলেই দলটি গড়তে চাই। কমেন্টে দেয়া ফর্মে আপনার মতামত জানান। ফর্মটি পূরণ করতে মাত্র ৫ মিনিট সময় লাগবে।’

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ৬ মাস, এবার ছাত্রসমাজের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন ‘শেখ হাসিনা’

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ছয় মাস পরে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় ছাত্রসমাজের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন

ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড পেজ থেকে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।

বিবিসির ওই প্রতিবেদেনে আরও বলা হয়, পরদিন বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় ‘দায়মুক্তি’ শিরোনামে অপর এক লাইভ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনবেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক পোস্টে বলা হয়েছে, ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় ‘দায়মুক্তি’ শিরোনামে এক লাইভ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনবেন শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। প্রথমদিকে বেশ কিছুদিন নীরব থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে ভার্চুয়াল যোগাযোগ রাখতে দেখা গেছে তাকে।

আ লীগের লিফলেট বিতরণে আলোচিত শিক্ষক ‘মুকিব মিয়া’ গ্রে’ফতার

অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ চেয়ে ঢাকায় লিফলেট বিতরণ করায় আলোচিত লালমনিরহাটের কলেজ শিক্ষক মুকিব মিয়াকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইলিয়াসুর রহমানের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) রেজাউল করিম মল্লিক জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, শিক্ষক মুকিব মিয়াকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই থানায় একটি মামলা রয়েছে তার নামে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত মুকিব মিয়া বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুকিব ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি।

গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবিতে লিফলেট বিতরণের ছবি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

ঢাকার শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে শিক্ষক মুকিবকে থানায় হস্তান্তর করেছে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলা হয়। পরে শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

মুকিবকে রিমান্ডে আনা হবে বলেও জানান তিনি।

ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিবেন ‘নাহিদ ইসলাম’

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল আসছে চলতি মাসে। দলের নাম ও নাম ঘোষণার তারিখ চূড়ান্ত না হলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এই নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসছেন। এর মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে নাহিদ ইসলামের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে পদত্যাগ ও নতুন দলের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

যদিও নাহিদ ইসলাম সরাসরি এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে নাগরিক কমিটির একটা বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে শুধু নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন।

এক্ষেত্রে আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলামকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সব মত ও পক্ষ একমত হয়েছে। এছাড়া নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করলে ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে নাগরিক কমিটি থেকে আলী আহসান জুনায়েদ কিংবা আখতার হোসেন উপদেষ্টা পদে যোগ দিতে পারেন বলেও আভাস পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের নতুন দলের আত্মপ্রকাশের জন্য দেশের মানুষেরা মুখিয়ে আছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার কারণে নীতিনির্ধারণী নেতারা চাচ্ছেন উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে কেউ একজন দলের হাল ধরুক।

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত হলো তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যেন নতুন দলের আহ্বায়ক হন। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এদিকে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর গত বৃহস্পতিবার নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, রাজনৈতিক দলে অংশ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদ ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেননি।

তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত যদি হয়, রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণ করার মতো পরিস্থিতি হলে, সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য সদস্যসচিব পদে আলোচনায় আছেন নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ।

এর বাইরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব মাহবুব আলম ও অনিক রায় আহ্বায়ক কমিটিতে শীর্ষ নেতৃত্বে আসছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ও সামগ্রিক কাঠামো সম্পর্কে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদের বাড়ি থেকে লংমার্চ শুরু করে চট্টগ্রামের শহিদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত লংমার্চ করে এ দলের ঘোষণা দেয়া হবে।

এক্ষেত্রে সামনে রমজান এবং ঈদ থাকায় চলতি মাসের প্রথমার্ধেই দল ঘোষণা করে দেশব্যাপী ১৫ দিনের লংমার্চ করবে দলটি। এক্ষেত্রে রংপুরে লংমার্চ শুরু করার আগে অথবা চট্টগ্রামে লংমার্চ শেষ করে দল ঘোষণা হতে পারে। দলের নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি এবং ঈদের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে।

আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার পরেই নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য সারাদেশে জেলা ও উপজেলায় প্রয়োজনীয় কাঠামো নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আকরাম হুসাইন বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমাদের প্রতি জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা আমরা লক্ষ্য করেছি। রাজনৈতিক দল গঠনের আগে আমরা সারাদেশে সংগঠন গুছিয়ে নেয়ার কাজ করছি।

ইতোমধ্যে আমরা প্রায় ২৫০টি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেছি। নেতৃবৃন্দ দলের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি প্রণয়নের কাজ করছেন। দলের নেতৃত্বে কারা থাকবেন জানতে চাইলে এ নেতা জানান, জুলাই আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন নতুন দলেও তারা নেতৃত্ব দেবেন।

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে কোটি কোটি টাকার এই ষড়যন্ত্র!

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিশ্চিত করেছে যে, ২০১৮ সালে কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনেছিল, তা অত্যন্ত নিম্নমানের এবং ব্যাপক দুর্নীতির ছাপ রয়েছে।

দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করার ষড়যন্ত্রে এই নিম্নমানের ইভিএম কেনা হয়েছিল। প্রায় ৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ব্যাপক অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।

দুদকের উপ-পরিচালক নূর আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে কেনা দেড় লাখ ইভিএম এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইসির বিভিন্ন গুদামে এই অকেজো ইভিএমগুলো গুটিয়ে রাখা হয়েছে।

দুদকের অভিযানে এই ইভিএমগুলোতে ব্যাপক ত্রুটি ধরা পড়েছে। প্রকল্পের বিস্তারিত: প্রতিটি ইভিএম সেটের দাম ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্প অনুমোদন পায়।

২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ইসিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। নিম্নমানের ইভিএম কেনার মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। ইসির বিভিন্ন গুদামে সংরক্ষিত সব ইভিএম তদন্ত করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ঘটনাটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছে।

আওয়ামী লীগের বর্তমান কর্মসূচি নিয়ে যা বললেন ‘সাদ্দাম’

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলমান রয়েছে বলে এক সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম।
আবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকারের পতন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আওয়ামীলীগ কাজ করছে বলেন তিনি।

সাদ্দাম মনে করছেন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পায়ের নিচ থেকে ক্রমান্বয়ে মাটি সরে যাচ্ছে, এই সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ক্রমে সংঘটিত হচ্ছে। তিনি আরো যুক্ত করেন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা একেবারে শূন্যের

কোঠায় নেমে আসছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম বলেন, বিচার বিভাগ প্রহসন শুরু করেছেন।যেই সরকার পুলিশ হত্যার বিচার করতে পারেনা সেই সরকার জনগণের জান মালের নিরাপত্তা কতটুকু দিতে পারবে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন।

তিনি অভিযোগ করেন ,যারা অপরাধী যারা যাদের হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে তারা আজ সরকারে বসেছে। সাদ্দাম বলেন শিক্ষার্থীদের যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতেই হবে এবং আগামী ক্ষমতায় শেখ হাসিনাই এর বিচার করবেন।

সাদ্দাম বলেন আইসিটি ট্রাইবুনালে শেখ হাসিনার বিচার হবে আর বাংলাদেশের মানুষ সেটা চেয়ে দেখবে এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না। তার বিশ্বাস দেশের জনগণ অবশ্যই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

সাদ্দাম বলেন,বাংলাদেশের এক ধরনের সহিংস মৌলবাদী শক্তির উত্থান হয়েছে। সাদ্দাম আরো বলেন বাংলাদেশের তৃণমূলের ছাত্রলীগ নেতা কর্মী ,তৃণমূলের আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

বাংলাদেশে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করেছে, আর তার প্রতিবাদে জনগণ গোটা বাংলার দেয়ালে জয় বাংলা লিখে দিয়েছে। সাদ্দাম বলেন দেশব্যাপী ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের যে সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক সেটি পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছে, বিভিন্ন সময় মিটিং করছে।

আগামী দিনগুলোতে যেন সাংগঠনিকভাবে আন্দোলন সংগ্রামে তারা অবতীর্ণ হতে পারে ,সৃজনশীল এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে প্রতিরোধমূলক আন্দোলন গড়ে সরকারের চূড়ান্ত বিদায় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

এর উত্তরে এক সাক্ষাৎকারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম বলেন শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশের জনগণের এই নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ প্রচন্ডভাবে শেখ হাসিনাকে অনুভব করে বলছেন এই ছাত্রলীগ নেতা।

বলেন, প্রিয় নেত্রীর নেতৃত্ব দক্ষতা সাফল্য বর্তমান সরকারের সাথে তুলনা করেন। বলেন দেশের জনগণ ইতোমধ্যে দেখেছে গত পাঁচ মাসে ফ্যাসিস্ট ইউনুস সরকার কি করেছে আর শেখ হাসিনা কি করেছিল।

তিনি অভিযোগ করেন এ সরকারের বই দেয়ার ক্যাপাসিটি নেই, এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার মতো ক্যাপাসিটি নেই, বাংলাদেশের জনগণের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই।

সাদ্দাম জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাংলাদেশের জনগণ দুবেলা ভাত খাবে সে বাস্তবতাও ধীরে ধীরে দূরে চলে যাচ্ছে।

তিনি জানান,বাংলাদেশের জনগণকে মুক্ত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিবেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কয়েক প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। কিনে সাহস নিয়ে এবং সততার সাথে তিনি এগুলো বাস্তবায়ন করেছেন।

সরকার পতনে দায় কার অজ্ঞাত স্থান থেকে জানালেন আসাদুজ্জামান খান

পতিত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পেছনে দলীয় ভুল সিদ্ধান্ত, গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে না পারাসহ বিভিন্ন ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতে পাড়ি জমান শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও দলের নেতাকর্মীরা। আর দেশে থাকা অনেকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হতে থাকেন। অনেকে আত্মগোপনে দিন কাটাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রায় ছয় মাস পর সাবেক এই মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমটি ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে।

প্রশ্ন : চলমান পরিস্থিতি থেকে আওয়ামী লীগ কোথায় যাবে? দলটির পুনরুত্থান কিভাবে হবে?

উত্তর : আমি ১০ বছর ছয় মাস বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম। এ সময়ের মধ্যে আমি বহু উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছি।

এখন সব কিছু ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উল্টে গেছে। গত বছরের ৩ আগস্ট থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪৬০টি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র লুট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে থাকেন সেই গণভবন থেকে এসএসএফের (ভিভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্বপালনকারী বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী) অস্ত্রও কেড়ে নেওয়া হয়।

আমি নিজে ৫ এবং ৬ আগস্ট ঢাকায় ছিলাম; পরে ৭ আগস্ট আমার বাড়ি ছাড়ি।
প্রশ্ন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। আপনি কি এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না?

উত্তর : যখন থানাগুলো পুড়েছে কার্যত পুলিশ তখন অকার্যকর হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে মৃতদের সাক্ষী করে তাদের মৃতদেহ গণনা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। যেখানে পুলিশ সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা দেয় সেখানে তারা যখন নিজেরাই অকার্যকর হয়ে যায় তাহলে বিষয়টা কেমন হয়? আমি বলব সেখানে যৌথ অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে।

ইসলামী উগ্রবাদ এবং সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থান।

প্রশ্ন : স্পষ্টতই এখানে গোয়েন্দাদের বড় রকমের ব্যর্থতা ছিল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনি কি এ বিষয়টি স্বীকার করেন?

উত্তর : হ্যাঁ, আমি এ বিষয়ে একমত যে ইচ্ছাকৃত হোক বা অন্যভাবেই হোক গোয়েন্দাদের বিশাল ব্যর্থতা ছিল। সেনাবাহিনীর বিশেষ একটি গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে, ডিজিএফআই (ডিরেক্টর জেনারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)। তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। এমনকি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। গোয়েন্দাদের রিপোর্টের সারসংক্ষেপটাই শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আসে।

প্রশ্ন : আপনি কি স্বীকার করেন যে আপনার দল কিছু মৌলিক ভুল করেছে; যার ফলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে?

উত্তর : আমি বিষয়টিকে ভুল বলব না। তবে হ্যাঁ, দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে। এটাই মূল কথা। দুই বছর পর নতুন নেতাদের আসার কথা ছিল। কিন্তু আমরা যথাসময়ে নেতা নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছি।

প্রশ্ন : আপনার দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কি আপনার যোগাযোগ হচ্ছে?

উত্তর : তার সঙ্গে দেখা করতে পারছি না; তবে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়। সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে, তিনি দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ৪ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। পুলিশের প্রধানও ছিলেন সেখানে। সেনাপ্রধানও সেখানে ছিলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে কিছুই হবে না। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন আপনার সুরক্ষার দায়িত্ব আমার জিম্মায়। এ সব কিছুর সাক্ষী আমি নিজে। তখন আমি সেনাপ্রধানকে জিজ্ঞেস করেছি- আপনি কি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন? তিনি জবাবে হ্যাঁ বলেছিলেন। এরপর আমি আমার অধীনে থাকা পুলিশপ্রধানকে সেনাপ্রধানের সঙ্গে স্বাধীনভাবে আলোচনা করার কথা বলেছি। তারা যেন সব স্বাভাবিক করে। কিন্তু আপনি দেখেছেন ৫ আগস্ট কী হয়েছে।

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক আছেন; অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক। তাদের মনোবল ধরে রাখতে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তা কিভাবে মোকাবেলা করবেন?

উত্তর : আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনোবল অনেক উঁচু। শেখ হাসিনা ছাড়া তারা ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারেন না। তিনিই বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি অর্থনীতির পরিবর্তন করেছেন, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলার পরিবর্তন করেছেন।

প্রশ্ন : আপনি ভারতের কাছ থেকে কী আশা করছেন? ভারত কিভাবে সাহায্য করতে পারে?

উত্তর : আমি মুক্তিযোদ্ধাদের একজন কমান্ডার ছিলাম, তাই আমি জানি ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের জন্য কী করেছে। আমি স্বীকার করি যে, ভারত সব সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য সেখানে ছিল। এখন ভারত কূটনৈতিকভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারছেন না। নতুন করে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমত, আদালত যাতে পুনরায় কাজ শুরু করতে পারে, সে জন্য কূটনৈতিক চাপ এবং এর পক্ষে আওয়াজ উত্থাপন করা উচিত। আমি মনে করি ভারত এভাবে সাহায্য করতে পারে।

প্রশ্ন : আপনার পরিবার এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ কী?

উত্তর : আমার একমাত্র ছেলে বর্তমানে জেলে…আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনও ভালো অবস্থায় নেই। আমার ছেলে কাশিমপুরের একটি কারাগারে রয়েছে; যেখানে আমরা একসময় সন্ত্রাসীদের আটক রাখতাম। কয়েক দিন পরপরই ছেলের কাছে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কেউ না কেউ আমার অবস্থান জানতে চায়। এ ছাড়া আমার ওপর একের পর এক মামলা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে প্রায় ২৯০টি খুনের মামলা হয়েছে। এটি নিশ্চয়ই একটি রেকর্ড, হয়তো আন্তর্জাতিক রেকর্ডও। ৫৪টি মামলায় যাকে খুন করার কথা বলা হয়েছে তিনি জীবিত ফিরে এসেছেন…সেই মামলাগুলোতে, আমার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে।

প্রশ্ন : আপনি কি বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে আইনের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত? এ ছাড়া আওয়ামী লীগ কি নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুত?

উত্তর : আমি ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছি না। তবে তা কেবল তখনই সম্ভব যখন আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করা হবে, বিচারকরা অবাধে এবং নির্ভয়ে মামলার শুনানি করতে পারবেন এবং আমাদের আইনজীবীরা আমাদের পক্ষে উপস্থিত হতে পারবেন। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি, আমরা অবশ্যই নির্বাচনে লড়ব যদি আমরা সবাই সেখানে যেতে পারি…।

প্রশ্ন : শেখ হাসিনা নির্বাসিত। দলের বেশির ভাগ নেতাও এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে। এমন পরিস্থিতিতে দলকে শক্তিশালী করাটা কতটা চ্যালেঞ্জের বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর : এটা অসম্ভব নয়। আমি বিশ্বাস করি, এটা সম্ভব। আমার বিশ্বাস, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা বদলে যাবে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমি সেখানকার পরিস্থিতি দেখেছি। সেখানকার জনগণকে দেখেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা শিগগিরই চলমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। যদিও অনেক নেতার সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো খোঁজ নেই…। তবে যদি লড়াই শুরু করি তারা পুনরায় ফিরে আসবেন। আমার বয়স ৭৫ হতে চলেছে, আমি বিশ্বাস করি যে, আমি এখন বোনাস জীবনে আছি। সে জন্য আমি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। আওয়ামী লীগের তরুণ নেতারাও এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। তরুণদের এগিয়ে আসার সময় এসেছে।

প্রশ্ন : চলমান পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা কী?

উত্তর : গণমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে এখন তাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের) নিয়ন্ত্রণে। গণমাধ্যম কোনো বিষয়ে স্বাধীনভাবে মন্তব্য করতে পারছে না। তারা সব কিছুর জন্য আওয়াজ তুলতে পারে না। তারা এখন নীরব। আমি বিশ্বাস করি, যদি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে এগিয়ে আসতে বলেন, তাহলে অবশ্যই সেটা ঘটবে।

প্রশ্ন : শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার সময় তার কাছ থেকে কী নির্দেশনা পেয়েছেন?

উত্তর : তিন দিন আগে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। তার নির্দেশনা হচ্ছে- সকল নেতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে; যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যায়।

প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আপনার বার্তা কী?

উত্তর : তার চেয়ারে বসার কোনো অধিকার নেই। তিনি কোনো নেতা নন। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিও নন। দেশে খুব অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ এক অদ্ভুত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. ইউনূসের উচিত তার পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে লড়তে দেওয়া এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার সুযোগ করে দেওয়া। কেননা, এটাই একমাত্র উপায়।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক এক বার্তায় জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিরোধী প্রপাগান্ডার অংশ হিসেবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক দিনে একাধিক মিথ্যা বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রচার করেছে। গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের মনগড়া বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। তাদের দাবি করা তথ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কারো কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়নি।

ভারতে পালিয়েও সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় আওয়ামী লীগের এই নেতা

চোরাইপথে পালিয়ে ভারতের কলকাতায় গিয়ে দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড ও অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র হিসেবে আজ শনিবার সন্ধ্যার পর ভারতের কলকাতার নিউ টাউন

এলাকার ‘কলকাতা নিউ টাউন অ্যাক্সিস মহলে’ একটি সভা করেন আলাউদ্দিন নাসিম। সেখানে তিনি শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে সকলকে বর্তমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।আওয়ামী লীগ নেতাসহ সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে নাসিমের মাস্তি করার একটি ভিডিও এর আগে ভাইরাল হয়েছে।

হাসিনার পতনের পর বিদেশে বসে যারা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে তাদের মধ্যে অন্যতম রেহানার ফান্ড ম্যানেজারখ্যাত ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

আলাউদ্দিন নাসিম এক সময় ছিলেন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। এর বাইরে শেখ রেহানার ফান্ড ম্যানেজার হিসেবে গত দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ মাদক ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঘুষ-চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে- কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করেছেন এই সাবেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্য। নাসিমের হাত ধরেই পরিচালিত হতো দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। ঢাকায় মদের ব্যবসা এবং ফেনীতে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে স্বর্গরাজ্য গড়েন।

তার নানান অপকর্ম ও দুর্নীতির খবর প্রচারিত হওয়ায় নড়ে চড়ে বসে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় ২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপপরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলি করে ১৩ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। আলাউদ্দিন নাসিমের নির্দেশেই ফেনীতে ছাত্র-জনতাকে গুলিতে হত্যা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের নির্দেশে জুলাই ও আগস্ট মাসে ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে চলে ছাত্র হত্যা।

২০০৯ সালে হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর কোনো পদে না থেকেও জনপ্রশাসনে পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন নাসিম। হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম গড়ে ছিলেন অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। বিভিন্ন সময় দুর্নীতির কারণে অনেকেই ধরা পড়লেও সব সময় অন্তরালে থেকে যেতেন আলাউদ্দিন নাসিম।