দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পূর্ব শত্রুতার জেরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মো. মিনহাজুর রহমান (২৫) নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাজলা এলাকায় দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

মিনহাজের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরে। তবে তিনি রায়েরবাগ পলাশপুর ৪ নম্বর গলি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। নিহতের বাবা হাফেজ কারী রফিকুল ইসলাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ওলামা দলের সেক্রেটারি।

মিনহাজের ভগ্নিপতি খালিদ মাহফুজ জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মিনহাজ দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে মিনহাজ ছিল ছোট। তিনি বিবাহিত ও তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা।

নিহতের বন্ধু মো. শামীম বলেন, দুইদিন আগে কিং মাহফুজ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি তানজিল নামে একজনকে মারধর করে। আজ (মঙ্গলবার) তানজিলের হয়ে বিষয়টি মিটমাট করার জন্য গেলে মিনহাজকে ছুরিকাঘাত করেন কিং মাহফুজ, শাহ আলম, শাওন, সাইফুলসহ বেশ কয়েকজন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিনহাজকে মৃত ঘোষণা করেন।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার হারুনর রশীদ বলেন, কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ।

আওয়ামী লীগের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

আইসিটি ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হত্যা ও অন্যান্য মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং প্রহসনমূলক বিচার বন্ধের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে দলটির ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন।

পোস্টে বলা হয়, ১৯৭১ সালে সুমহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশ আজ ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত জনপদ। অবৈধ ও অসাংবিধানিক জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলদার ইউনূস ও তার দোসরদের সীমাহীন ধ্বংসযজ্ঞ ও তাণ্ডবে ত্রিশ লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগ এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি আজ প্রতিহিংসার দাবানলে দাউ দাউ করে জ্বলছে।

উগ্র-জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক ও তার দোসরদের হটাও ও বাংলাদেশ বাঁচাও। দেশের গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। মানবাধিকার আজ ভূ-লুণ্ঠিত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লুপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ বিসর্জিত। আইনের শাসন অস্তমিত।

ফেসবুকে দেওয়া আওয়ামী লীগের কর্মসূচিগুলো হলো :

১ -৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বিতরণ, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ কর্মসূচি, ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতাল।

দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের এ সব কর্মসূচিতে কোনো প্রকার বাধা প্রদান করা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয় ফেসবুকের দেওয়া ওই পোস্টে।

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে কোটি কোটি টাকার এই ষড়যন্ত্র!

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিশ্চিত করেছে যে, ২০১৮ সালে কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনেছিল, তা অত্যন্ত নিম্নমানের এবং ব্যাপক দুর্নীতির ছাপ রয়েছে।

দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করার ষড়যন্ত্রে এই নিম্নমানের ইভিএম কেনা হয়েছিল। প্রায় ৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ব্যাপক অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।

দুদকের উপ-পরিচালক নূর আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে কেনা দেড় লাখ ইভিএম এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইসির বিভিন্ন গুদামে এই অকেজো ইভিএমগুলো গুটিয়ে রাখা হয়েছে।

দুদকের অভিযানে এই ইভিএমগুলোতে ব্যাপক ত্রুটি ধরা পড়েছে। প্রকল্পের বিস্তারিত: প্রতিটি ইভিএম সেটের দাম ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্প অনুমোদন পায়।

২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ইসিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। নিম্নমানের ইভিএম কেনার মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। ইসির বিভিন্ন গুদামে সংরক্ষিত সব ইভিএম তদন্ত করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ঘটনাটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছে।

এখন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত থাকছে না সাত কলেজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে ২০২৪-২৫ সেশন থেকে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঢাবি থেকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল হচ্ছে। আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিন পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদের কার্যালয় সংলগ্ন সভাকক্ষে সভা শুরু হয়।

জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে এই সভা শুরু হয়। সভায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনা করেন ঢাবি উপাচার্য ও সাত কলেজে অধ্যক্ষরা। এসময় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ছিদ্দিকুর রহমান খান, বিজ্ঞান

অনুষদের ডিন আব্দুস সালাম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন রাশেদা ইরশাদ নাসির, প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ আব্দুলাহ আল মামুনসহ বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুন্সী শামস উদ্দীন আহমেদ, হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম, কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) আমজাদ হোসেন শিশির এবং সাত কলেজের অধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের বর্তমান কর্মসূচি নিয়ে যা বললেন ‘সাদ্দাম’

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলমান রয়েছে বলে এক সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম।
আবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকারের পতন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আওয়ামীলীগ কাজ করছে বলেন তিনি।

সাদ্দাম মনে করছেন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পায়ের নিচ থেকে ক্রমান্বয়ে মাটি সরে যাচ্ছে, এই সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ক্রমে সংঘটিত হচ্ছে। তিনি আরো যুক্ত করেন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা একেবারে শূন্যের

কোঠায় নেমে আসছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম বলেন, বিচার বিভাগ প্রহসন শুরু করেছেন।যেই সরকার পুলিশ হত্যার বিচার করতে পারেনা সেই সরকার জনগণের জান মালের নিরাপত্তা কতটুকু দিতে পারবে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন।

তিনি অভিযোগ করেন ,যারা অপরাধী যারা যাদের হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে তারা আজ সরকারে বসেছে। সাদ্দাম বলেন শিক্ষার্থীদের যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতেই হবে এবং আগামী ক্ষমতায় শেখ হাসিনাই এর বিচার করবেন।

সাদ্দাম বলেন আইসিটি ট্রাইবুনালে শেখ হাসিনার বিচার হবে আর বাংলাদেশের মানুষ সেটা চেয়ে দেখবে এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না। তার বিশ্বাস দেশের জনগণ অবশ্যই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

সাদ্দাম বলেন,বাংলাদেশের এক ধরনের সহিংস মৌলবাদী শক্তির উত্থান হয়েছে। সাদ্দাম আরো বলেন বাংলাদেশের তৃণমূলের ছাত্রলীগ নেতা কর্মী ,তৃণমূলের আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

বাংলাদেশে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করেছে, আর তার প্রতিবাদে জনগণ গোটা বাংলার দেয়ালে জয় বাংলা লিখে দিয়েছে। সাদ্দাম বলেন দেশব্যাপী ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের যে সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক সেটি পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছে, বিভিন্ন সময় মিটিং করছে।

আগামী দিনগুলোতে যেন সাংগঠনিকভাবে আন্দোলন সংগ্রামে তারা অবতীর্ণ হতে পারে ,সৃজনশীল এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে প্রতিরোধমূলক আন্দোলন গড়ে সরকারের চূড়ান্ত বিদায় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

এর উত্তরে এক সাক্ষাৎকারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম বলেন শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশের জনগণের এই নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ প্রচন্ডভাবে শেখ হাসিনাকে অনুভব করে বলছেন এই ছাত্রলীগ নেতা।

বলেন, প্রিয় নেত্রীর নেতৃত্ব দক্ষতা সাফল্য বর্তমান সরকারের সাথে তুলনা করেন। বলেন দেশের জনগণ ইতোমধ্যে দেখেছে গত পাঁচ মাসে ফ্যাসিস্ট ইউনুস সরকার কি করেছে আর শেখ হাসিনা কি করেছিল।

তিনি অভিযোগ করেন এ সরকারের বই দেয়ার ক্যাপাসিটি নেই, এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার মতো ক্যাপাসিটি নেই, বাংলাদেশের জনগণের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই।

সাদ্দাম জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাংলাদেশের জনগণ দুবেলা ভাত খাবে সে বাস্তবতাও ধীরে ধীরে দূরে চলে যাচ্ছে।

তিনি জানান,বাংলাদেশের জনগণকে মুক্ত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিবেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কয়েক প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। কিনে সাহস নিয়ে এবং সততার সাথে তিনি এগুলো বাস্তবায়ন করেছেন।

সরকার পতনে দায় কার অজ্ঞাত স্থান থেকে জানালেন আসাদুজ্জামান খান

পতিত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পেছনে দলীয় ভুল সিদ্ধান্ত, গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে না পারাসহ বিভিন্ন ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতে পাড়ি জমান শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও দলের নেতাকর্মীরা। আর দেশে থাকা অনেকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হতে থাকেন। অনেকে আত্মগোপনে দিন কাটাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রায় ছয় মাস পর সাবেক এই মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমটি ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে।

প্রশ্ন : চলমান পরিস্থিতি থেকে আওয়ামী লীগ কোথায় যাবে? দলটির পুনরুত্থান কিভাবে হবে?

উত্তর : আমি ১০ বছর ছয় মাস বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম। এ সময়ের মধ্যে আমি বহু উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছি।

এখন সব কিছু ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উল্টে গেছে। গত বছরের ৩ আগস্ট থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪৬০টি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র লুট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে থাকেন সেই গণভবন থেকে এসএসএফের (ভিভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্বপালনকারী বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী) অস্ত্রও কেড়ে নেওয়া হয়।

আমি নিজে ৫ এবং ৬ আগস্ট ঢাকায় ছিলাম; পরে ৭ আগস্ট আমার বাড়ি ছাড়ি।
প্রশ্ন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। আপনি কি এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না?

উত্তর : যখন থানাগুলো পুড়েছে কার্যত পুলিশ তখন অকার্যকর হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে মৃতদের সাক্ষী করে তাদের মৃতদেহ গণনা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। যেখানে পুলিশ সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা দেয় সেখানে তারা যখন নিজেরাই অকার্যকর হয়ে যায় তাহলে বিষয়টা কেমন হয়? আমি বলব সেখানে যৌথ অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে।

ইসলামী উগ্রবাদ এবং সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থান।

প্রশ্ন : স্পষ্টতই এখানে গোয়েন্দাদের বড় রকমের ব্যর্থতা ছিল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনি কি এ বিষয়টি স্বীকার করেন?

উত্তর : হ্যাঁ, আমি এ বিষয়ে একমত যে ইচ্ছাকৃত হোক বা অন্যভাবেই হোক গোয়েন্দাদের বিশাল ব্যর্থতা ছিল। সেনাবাহিনীর বিশেষ একটি গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে, ডিজিএফআই (ডিরেক্টর জেনারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)। তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। এমনকি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। গোয়েন্দাদের রিপোর্টের সারসংক্ষেপটাই শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আসে।

প্রশ্ন : আপনি কি স্বীকার করেন যে আপনার দল কিছু মৌলিক ভুল করেছে; যার ফলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে?

উত্তর : আমি বিষয়টিকে ভুল বলব না। তবে হ্যাঁ, দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে। এটাই মূল কথা। দুই বছর পর নতুন নেতাদের আসার কথা ছিল। কিন্তু আমরা যথাসময়ে নেতা নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছি।

প্রশ্ন : আপনার দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কি আপনার যোগাযোগ হচ্ছে?

উত্তর : তার সঙ্গে দেখা করতে পারছি না; তবে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়। সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে, তিনি দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ৪ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। পুলিশের প্রধানও ছিলেন সেখানে। সেনাপ্রধানও সেখানে ছিলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে কিছুই হবে না। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন আপনার সুরক্ষার দায়িত্ব আমার জিম্মায়। এ সব কিছুর সাক্ষী আমি নিজে। তখন আমি সেনাপ্রধানকে জিজ্ঞেস করেছি- আপনি কি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন? তিনি জবাবে হ্যাঁ বলেছিলেন। এরপর আমি আমার অধীনে থাকা পুলিশপ্রধানকে সেনাপ্রধানের সঙ্গে স্বাধীনভাবে আলোচনা করার কথা বলেছি। তারা যেন সব স্বাভাবিক করে। কিন্তু আপনি দেখেছেন ৫ আগস্ট কী হয়েছে।

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক আছেন; অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক। তাদের মনোবল ধরে রাখতে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তা কিভাবে মোকাবেলা করবেন?

উত্তর : আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনোবল অনেক উঁচু। শেখ হাসিনা ছাড়া তারা ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারেন না। তিনিই বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি অর্থনীতির পরিবর্তন করেছেন, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলার পরিবর্তন করেছেন।

প্রশ্ন : আপনি ভারতের কাছ থেকে কী আশা করছেন? ভারত কিভাবে সাহায্য করতে পারে?

উত্তর : আমি মুক্তিযোদ্ধাদের একজন কমান্ডার ছিলাম, তাই আমি জানি ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের জন্য কী করেছে। আমি স্বীকার করি যে, ভারত সব সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য সেখানে ছিল। এখন ভারত কূটনৈতিকভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারছেন না। নতুন করে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমত, আদালত যাতে পুনরায় কাজ শুরু করতে পারে, সে জন্য কূটনৈতিক চাপ এবং এর পক্ষে আওয়াজ উত্থাপন করা উচিত। আমি মনে করি ভারত এভাবে সাহায্য করতে পারে।

প্রশ্ন : আপনার পরিবার এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ কী?

উত্তর : আমার একমাত্র ছেলে বর্তমানে জেলে…আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনও ভালো অবস্থায় নেই। আমার ছেলে কাশিমপুরের একটি কারাগারে রয়েছে; যেখানে আমরা একসময় সন্ত্রাসীদের আটক রাখতাম। কয়েক দিন পরপরই ছেলের কাছে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কেউ না কেউ আমার অবস্থান জানতে চায়। এ ছাড়া আমার ওপর একের পর এক মামলা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে প্রায় ২৯০টি খুনের মামলা হয়েছে। এটি নিশ্চয়ই একটি রেকর্ড, হয়তো আন্তর্জাতিক রেকর্ডও। ৫৪টি মামলায় যাকে খুন করার কথা বলা হয়েছে তিনি জীবিত ফিরে এসেছেন…সেই মামলাগুলোতে, আমার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে।

প্রশ্ন : আপনি কি বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে আইনের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত? এ ছাড়া আওয়ামী লীগ কি নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুত?

উত্তর : আমি ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছি না। তবে তা কেবল তখনই সম্ভব যখন আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করা হবে, বিচারকরা অবাধে এবং নির্ভয়ে মামলার শুনানি করতে পারবেন এবং আমাদের আইনজীবীরা আমাদের পক্ষে উপস্থিত হতে পারবেন। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি, আমরা অবশ্যই নির্বাচনে লড়ব যদি আমরা সবাই সেখানে যেতে পারি…।

প্রশ্ন : শেখ হাসিনা নির্বাসিত। দলের বেশির ভাগ নেতাও এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে। এমন পরিস্থিতিতে দলকে শক্তিশালী করাটা কতটা চ্যালেঞ্জের বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর : এটা অসম্ভব নয়। আমি বিশ্বাস করি, এটা সম্ভব। আমার বিশ্বাস, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা বদলে যাবে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমি সেখানকার পরিস্থিতি দেখেছি। সেখানকার জনগণকে দেখেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা শিগগিরই চলমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। যদিও অনেক নেতার সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো খোঁজ নেই…। তবে যদি লড়াই শুরু করি তারা পুনরায় ফিরে আসবেন। আমার বয়স ৭৫ হতে চলেছে, আমি বিশ্বাস করি যে, আমি এখন বোনাস জীবনে আছি। সে জন্য আমি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। আওয়ামী লীগের তরুণ নেতারাও এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। তরুণদের এগিয়ে আসার সময় এসেছে।

প্রশ্ন : চলমান পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা কী?

উত্তর : গণমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে এখন তাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের) নিয়ন্ত্রণে। গণমাধ্যম কোনো বিষয়ে স্বাধীনভাবে মন্তব্য করতে পারছে না। তারা সব কিছুর জন্য আওয়াজ তুলতে পারে না। তারা এখন নীরব। আমি বিশ্বাস করি, যদি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে এগিয়ে আসতে বলেন, তাহলে অবশ্যই সেটা ঘটবে।

প্রশ্ন : শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার সময় তার কাছ থেকে কী নির্দেশনা পেয়েছেন?

উত্তর : তিন দিন আগে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। তার নির্দেশনা হচ্ছে- সকল নেতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে; যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যায়।

প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আপনার বার্তা কী?

উত্তর : তার চেয়ারে বসার কোনো অধিকার নেই। তিনি কোনো নেতা নন। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিও নন। দেশে খুব অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ এক অদ্ভুত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. ইউনূসের উচিত তার পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে লড়তে দেওয়া এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার সুযোগ করে দেওয়া। কেননা, এটাই একমাত্র উপায়।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফ্যাক্ট চেক এক বার্তায় জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিরোধী প্রপাগান্ডার অংশ হিসেবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক দিনে একাধিক মিথ্যা বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রচার করেছে। গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের মনগড়া বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। তাদের দাবি করা তথ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কারো কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়নি।

ভারতের অস্ত্র কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, কেঁপে ওঠে ৫ কিমি এলাকা

সকাল সকাল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের অস্ত্র কারখানা ও আশপাশের এলাকা। এতে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে মহারাষ্ট্রের ভান্ডারা জেলায় এই ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের শব্দ এতোটাই তীব্র ছিল যে তা পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে শোনা গেছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শুক্রবার সকালে নাগপুরের কাছে একটি অস্ত্র কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের ভান্ডারা জেলার এই কারখানায়

সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে এই বিস্ফোরণটি ঘটে বলে জেলা কালেক্টর সঞ্জয় কোলতে জানিয়েছেন। বিস্ফোরণের পর উদ্ধারকারী ও চিকিৎসা কর্মীরা জীবিতদের সন্ধান করছেন এবং দমকলকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন বলে জানানো হয়েছে।

ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ নাগপুরের কাছে জওহর নগরের ওই অস্ত্র কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের জেরে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা এবং কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারদিক। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের এলাকাতেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ভান্ডারার জেলা প্রশাসক সঞ্জয় কোলতে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধারকারী দল সেখানে পৌঁছায়। পরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিতদের খোঁজে কাজ শুরু করেন তারা। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ধসে পড়েছে কারখানার একটি ছাদ। আর সেটির নিচে চাপা পড়ে যান অন্তত ১২ জন কর্মী।

তিনি আরও বলেন, এখনও পর্যন্ত তাদের মধ্যে দু’জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদেরও ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনার চেষ্টা চলছে। তবে তাদের মধ্যে কত জন বেঁচে আছেন, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

এনডিটিভি বলছে, বিস্ফোরণটি এতোটাই তীব্র ছিল যে, এর আওয়াজ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে শোনা গেছে। দূর থেকে ধারণ করা ভিডিওতে বিস্ফোরণের পর কারখানা থেকে ঘন ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।

নতুন অডিওতে কাঁদতে কাঁদতে যা বললেন শেখ হাসিনা

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে পালান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। সেই থেকে ভারতের মাটিতে রয়েছেন হাসিনা। আওয়ামী লীগের পোস্ট করা নতুন এক অডিও ক্লিপে সেই যন্ত্রণার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সমর্থকদের উদ্দেশে এক অডিও বার্তায় কেঁদে শেখ হাসিনা দাবি করেন, তাঁকে হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছিল। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন। শুক্রবার শেষ রাতের দিকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যান্ডল থেকে হাসিনার একটি ছোট অডিও ক্লিপ পোস্ট করা হয়।

৪৯ সেকেন্ডের ওই অডিও ক্লিপে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার সময়ের কথা বর্ণনা করছিলেন তিনি।

সেখানে হাসিনা জানান, ২০ থেকে ২৫ মিনিটের ব্যবধানে তিনি এবং তাঁর বোন শেখ রেহানা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। অডিও ক্লিপের শেষাংশে দেশছাড়া হওয়ার দুঃখের কথা বলতে গিয়ে হাসিনার গলা ধরে ওঠে। তিনি বলেন, ‘আমার কষ্ট হচ্ছে, আমি আমার দেশছাড়া, ঘরছাড়া। সব কিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হয় গত বছরের আগস্টে। গত ৫ আগস্ট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। চলে যান ভারতে। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সে দেশে হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই অবস্থায় হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে বিচার সম্পন্ন করতে চাইছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য নয়াদিল্লিতে কূটনৈতিক বার্তাও (নোট ভার্বাল) পাঠিয়েছে ঢাকা। কূটনৈতিক বার্তার প্রাপ্তি স্বীকার করলেও হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো দিল্লির তরফে জানানো হয়নি।

আমার স্বামী পরপারে আমার জন্য অপেক্ষা করবে: তনি

সম্প্রতি আলোচিত নারী উদ্যোক্তা ও ইনফ্লুয়েন্সার রোবাইয়াত ফাতিমা তনির স্বামী শাহাদাৎ হোসাইন মারা গেছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে চলছিল নানা আলোচনা। এবার নেটিজেনদের উদ্দেশে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দিয়েছেন তনি।

গতকাল শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রোবাইয়াত ফাতিমা তনি ওই পোস্টের সঙ্গে স্বামীর হাসপাতালের ছবি জুড়ে দিয়ে লেখেন, ‘মিশন সাকসেসফুল- এই ছবিটা পোস্ট করে যারা এইসব লিখেছেন। আমি জানতে চাই মিশন সাকসেসফুল কি! একটা প্রমাণ দেখাতে পারলে ফেসবুকে আর চেহারা দেখাব না।’

তনিতিনি আরো লেখেন, ‘যারা আমার নেক্সট বিয়ে নিয়ে চিন্তা করে মরে যাচ্ছেন তাদেরকে বলতে চাই, আমাকে নিয়ে যত ভাবেন যদি নিজেকে নিয়ে যদি এর ৫০% ও ভাবতেন তাহলে আমাকে নিয়ে ভাবার সময় পেতেন না। আমি অনেক ভাগ্যবতী এমন একজন মানুষকে আমার হাসব্যান্ড হিসেবে পেয়েছি যার ভালোবাসা আমাকে সারাজীবন বাঁচিয়ে রাখবে ইনশাল্লাহ। আমার জীবন চলার জন্য আল্লাহর রহমত আর সাহায্য ছাড়া অন্য কারো প্রয়োজন নেই, আমি যথেষ্ট কেপাবল আলহামদুলিল্লাহ।

ছেলে-মেয়ে দুইটাকে আমার হাসব্যান্ডের আদর্শে বড় করতে চাই, আমি বিশ্বাস করি আমার হাসব্যান্ড পরপারে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। তাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সাদাদ রহমানের ওয়াইফ এই পরিচয়টা প্রাউডলি বহন করতে চাই। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারী। নিজের ওপর অগাধ বিশ্বাস আর অনেক কন্ট্রোল আছে আমার, তাই আমাকে নিয়ে বেকার চিন্তা করা থামান।

হিংসুটে লোকদের কাজ হচ্ছে অন্যের পেছনে পরে থাকা উল্লেখ করে এই উদ্যোক্তা লেখেন, ‘আমার হাসব্যান্ড ১০১ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল। প্রথমদিকে আমি বেশিরভাগ সময় ব্যাংককে থাকতাম, কিন্তু হাসপাতালে প্রতিদিন ১০-১২ লক্ষ টাকা বিল দিতে গিয়ে আমার অর্থনৈতিক অবস্থান কি হতে পারে এটা যেকোনো শিক্ষিত মানুষকে মনে হয় না বোঝাতে হবে। এর পর হসপিটালে আমার হাসব্যান্ডের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা থাকার জন্য স্পেশাল আইসিইউ নার্স আলাদা করে অ্যাপোয়েন্ট করে প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ-ব্যাংকক আসা যাওয়া শুরু করি, কারণ আমাকে সবকিছু ঠিক রাখতে হবে। এ ছাড়া এত বড় অংকের বিল মেটানো সম্ভব নয়। এর মধ্যে ফেসবুকে মানুষের নানা রকম উপদেশ, ভুয়া নিউজ, ট্রল এইসব কিছু তো আছেই—অনেকে আমাকে ডিরেক্টলি পর্যন্ত বলছে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন! কত বড় অসভ্য হলে এই সব তারা করতে/ বলতে পারছে!’

ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ আমি সানভী এবং সারফারাজকে ব্যাংকক নিয়ে যান জানিয়ে তনি লেখেন, ‘তারা যেন বছরের প্রথম দিনটা তাদের ড্যাডির সঙ্গে কাটাতে পারে।

সকালে উঠে রেডি হয়ে প্রথমে হাসপাতালে তাদের ড্যাডিকে দেখে ওদের ঘুরতে নিয়ে যাই। আমি যখন একা ব্যাংককে একা থাকতাম তখন বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকতাম, কিন্তু বাচ্চাদের তো সারাক্ষণ আইসিইউতে রাখা যায় না, আবার ওদের সামনে কান্নাও করা যায় না। ওরা অনেক ছোট আর সারফারাজ তো কিছুই বুঝে না—ওদেরকে সব কিছু নরমাল বোঝাতে হয়। এ ছাড়া আমি যে প্রফেশনে আছি আমাকে অনেক প্রেজেন্টেবল হয়ে ক্যামেরার সামনে আসতে হয়, শুধুমাত্র লিপস্টিক দেওয়া একটা ছবি দেখে এত কিছু জাজ করে ফেললেন!’

আলোচিত এই নারী উদ্যোক্তা আরো লেখেন, ‘আপনাদের কোনো ধারণা আছে ব্যাংককে ট্রিটমেন্ট করতে কত টাকা খরচ হয়! আর মেন্টালি ফিজিক্যালি কতটা স্ট্রাগল করতে হয়েছে আমাকে! আজকে ঢাকা তো কালকে ব্যাংকক, যেটা অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো, হাসব্যান্ড, হাসপাতেলের বিল, বাচ্চা, পরিবার, বিজনেস—সব টেনশন আমাকে একা নিতে হয়েছে, আপনাদেরকে নয়। নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেন তো আপনার হাসব্যান্ড বা ওয়াইফ কোমাতে চলে গেলে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করে কোনো মিরাক্কেলের আশায় আমার মতো এমন স্টেপ নিতে পারবেন তো! তাও আবার ওয়ার্ল্ডের বেস্ট হসপিটাল গুলোর একটাতে!’

অঢেল টাকা থাকলেও অনেকে এত সাহস দেখায় না, মানুষটার ভালোবাসার গভীরতা এত বেশি ছিল প্রয়োজনে নিজের জীবনটাই দিতে পারতাম উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘সেই শুরু থেকেই সামাজিক মাধ্যমে অনেক যুদ্ধ করে নিজের অবস্থান তৈরি করতে হয়েছে। আমি লোভী এই কথা বলে হয়ত সারাজীবন কিছু অকর্মা লোক নিজের মনের জ্বালায় নিজেই জ্বলে পুড়ে মরবে, আমাকে আটকাতে পারেনি আর পারবেও না ইনশাল্লাহ। হয়ত আগামী ১/২ দিনের মধ্যে আমাকে কাজ শুরু করতে হবে। কিছু ফালতু মানুষ নিজের মনের বিষ মেটাতে অনেক কথা বলবে অনেক ফতোয়া দেবে, কিন্তু আমার এতে কিছুই আসে যায় না। বিগত বছরে আমি যে পরিমাণ ধাক্কা খেয়েছি, এখন সব সামলে উঠতে হবে, অনেক অনেক রেসপন্সিবিলিটি আমার, শত শত মানুষের দায়িত্ব আমার। আমার ছেলে-মেয়ে, মা, ভাই-বোন সবাইকে ভালো রাখতে হবে, আল্লাহ জানেন আমি কি কি করেছি, আর আমার মনের মধ্যে কি চলছে, আর যারা এইসব বলে তারা আমার সামনে এসে একটা কথা বলার যোগ্যতা রাখে না, অথবা নিজের মনে মনে নিজের থেকে আমাকে অনেক বড় কিছু মনে করে, তাই এত গভীরভাবে আমাকে ফলো করে।

আমার প্রফেশন, আমার পোশাক, আমার লাইফস্টাইল সর্বোপরি আমার কর্মের জবাব আমি আল্লাহকে দেবো, ধর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে মানুষকে হ্যারাসমেন্ট করা বন্ধ করেন, আর আমাকে কিছু বলতে ইচ্ছে করলে সাহস করে আমার সামনে আইসেন হাতে কলমে বুঝিয়ে দেবো। আমি ভণ্ডামি কর‍তে পারি না, আজকে বোরখা, কালকে হিজাব তার পরদিন ওয়েস্টার্ন এইসব আমি পারি না, বাস্তব জীবনে আমি যেমন ক্যামেরার সামনেও তাই। আর সব মানুষকে খুশি করা আমার কাজ না, আমি যেমন অমনি যাদের আমাকে ভালো লাগে আলহামদুলিল্লাহ, যাদের লাগে না তারা আমাকে বা আমার পেইজ আনফলো বা ব্লক করে দিতে পারেন, আপনাদের কেউ দাওয়াত দেয়নি আমাকে দেখার জন্য, দেখবেন আবার হিংসাও করবেন, আমার তো কিছু করার নেই।

আমার জীবনটা আয়নার মতো পরিষ্কার, আমি যেমন অমনি থাকব ইনশাল্লাহ। জীবনে আমার খারাপ সময় গুলো আমাকেই পার কর‍তে হয়েছে, তাই আমি মানসিকভাবে অসম্ভব শক্তিশালী একজন মানুষ, সময় সবকিছুর উচিত জবাব দিয়ে দেবে ইনশাল্লাহ। জীবন অনেক ছোট, আল্লার রহমতে ছোট্ট এই জীবনে অনেক ভালোবাসার মানুষ, অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়েছি, আপনাদের দোয়ায় আমার জীবন চলে যাবে ইনশাল্লাহ।’

তনির দ্বিতীয় স্বামী শাহাদাৎ হোসাইন। প্রথম স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ভালোবেসে বিয়ে করেন শাহাদাৎকে। গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে স্বামীর মৃত্যুর কথা জানিয়ে তনি লেখেন, ‘সে আর নাই। ব্যাংকক সময় রাত ৩.০৩ মিনিটে আমাকে সারাজীবনের মতো একা করে চলে গেছে।’

মারা গেছেন আসামি ধরতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া সেই পুলিশ সদস্য

বরিশালে আসামি ধরতে গিয়ে ইটভাটার আগুনে দগ্ধ মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান মারা গেছেন। বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকির শিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মেহেদী হাসান পুলিশের ৩৮তম ব্যাচের সদস্য ছিলেন। চার বছর আগে পুলিশে যোগদান করেন এবং সর্বশেষ বরিশাল বিমানবন্দর থানায় কর্তব্যরত ছিলেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর থানার রহমতপুর এলাকায় ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামি ধরতে যান। এ সময় অসাবধানতাবশত ইট ভাটায় পড়ে গিয়ে শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায় তার।

পরে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় প্রেরণ করেন। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির শিকদার বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে পুড়ে যান এসআই মেহেদী। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। শুক্রবার তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি বরগুনায় দাফন করা হবে।