বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন নিয়ে ট্রাম্প মিথ‍্যাচার করেছেন: ড. ইফতেখারুজ্জামান

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালী করতে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান একে মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেছেন।

ট্রাম্পের বক্তব্যে বলা হয়, মাত্র দুই সদস্যের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালী করতে কাজ করেছে এবং তারা ২৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ পেয়েছে। তবে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে ২৯ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

মুর্শেদ হাসিবের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে বিভিন্ন সূত্র খতিয়ে দেখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে স্ট্রেন্থেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (SPL Bangladesh) নামের একটি প্রকল্পের খোঁজ পাওয়া গেছে। এটি ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (DI) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করছে।

২০১৭ সাল থেকে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সাথে সংলাপ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরও ১০ মাস বাড়ানো হয়েছে।

তবে ট্রাম্পের উল্লেখ করা সংস্থাটি ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাংলাদেশে কাজ করা ৭৬টি এনজিওর গত সাত বছরের আর্থিক লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইউএসএআইডির (USAID) মাধ্যমে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার (২৯ মিলিয়ন ডলার) অনুদান ছাড়ের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এনজিও ব্যুরোর এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো সংস্থা বা প্রকল্পের তথ্য নেই, যেখানে ২৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তহবিলের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা অর্থ কড়া নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে ব্যয় করা হয়,

এবং এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধিত কোনো সংস্থার মাধ্যমে এই অর্থের লেনদেন হয়নি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার, অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন। বাংলাদেশে বিদেশি অর্থায়নের প্রতিটি লেনদেন কঠোরভাবে তদারকি করা হয়। মাত্র দুইজন কর্মী থাকা একটি সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার দাবি অবাস্তব এবং অগ্রহণযোগ্য।”

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দক্ষতা বিষয়ক বিভাগ জানায়, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে এবং এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

‘ভারত কিছু একটা করবে’ এই ভরসায় আ.লীগের নেতাকর্মীরা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল বা নিষিদ্ধ করার দাবি যখন জোরালো হচ্ছে, সেই সময় সারা দেশে প্রবল চাপের মুখে থাকা দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকে ভারত কী ভূমিকা নিচ্ছে সেই অপেক্ষায় আছেন। অনেকের বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা, ভারত কিছু একটা ভূমিকা রাখবে যার মাধ্যমে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াবে এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগ।

আজ শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকালে সেখানে তাকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আলোচনা-বক্তব্য-মন্তব্যে ভারতের ভূমিকা নিয়ে একটা প্রত্যাশা লক্ষ্য করা যায়।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। দলটির বহু নেতা পালিয়ে বা তাদের ভাষায় ‘আত্মগোপন করে’ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছেন।

দেশে ও দেশের বাইরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কর্মী-সমর্থকরা প্রত্যাশা করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারত যে ভূমিকা নিয়েছে এরপর তারা একটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক রাজনৈতিক কর্মী তাদের এই ধারণার কথা জানান।

তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, বিশেষ করে সনাতন বা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-মন্দিরে যেসব হামলা হয়েছে সেটি ভারত ভালো চোখে দেখছে না এবং ভারত তাদের স্বার্থেই এ পরিস্থিতিতে কিছু একটা উদ্যোগ নেবে বলে ‘আভাস’ পেয়েছেন।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের বোঝাপড়ার সারমর্ম হলো, ভারতের একটা ভূমিকা থাকবে।

দেশে অবস্থানরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যমসারির একজন নেতা মনে করেন, ভারত এরই মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার কথায়– ভারতের স্বার্থ এখানে জড়িত।

“ভারত অবশ্যই কিছু একটা করবে। আমার তো মনে হয় ভারত ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকা একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোবে মনে হচ্ছে।”

“হতে পারে বাংলাদেশের ব্যাপারে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ানো হবে। এছাড়া বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহায়তার ক্ষেত্রেও ভারত ভূমিকা রাখতে পারে” বলছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্য-মন্তব্যে এবং রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতেও আওয়ামী লীগের ভারত নির্ভরতার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বলেন, রাজনীতিতে ফেরার ক্ষেত্রে ভারতের সাহায্যের বিষয়টি তার ভাষায় ‘আওয়ামী লীগ পুরোদমে বিশ্বাস করে’।

তিনি বলেন, “একদম যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বিভিন্ন টক শো বা আলোচনায় আমরা দেখতে পাই যে তারা আশা করছে ভারত আবার তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে সাহায্য করবে ফিরে আসার ক্ষেত্রে। এটা তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্যে খুব স্পষ্ট।”

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, বাংলাদেশে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে ভারত নির্ভরতার কোনো সম্পর্ক নেই। দলটির যু্গ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম অবশ্য এটি স্বীকার করেন যে বৃহৎ গণতান্ত্রিক এবং প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত কী অবস্থান নেবে সেটার গরুত্ব রয়েছে।

তার ভাষায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও আদর্শিক কার্যক্রম বন্ধ করা সহজ নয়।

তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক চেতনায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে অবশ্যই ভারত এখানে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি এবং এই বিশ্বাসের সাথে বাংলাদেশের জনগণের যেমন শ্রদ্ধা আছে, ভারতের ১৪০ কোটি জনগণের সমৃদ্ধ চিন্তা আছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”

পাঁচই অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা বন্ধ রয়েছে। মেডিকেল ভিসাও ছয় মাসে খুব নগণ্য সংখ্যক দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনার কথাও জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা করেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই বিশ্লেষক বলেন, ভারত চায় একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে।

ভারতের ভূমিকা নিয়ে যে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মাইনরিটি ইস্যু নিয়ে নিশ্চই অনেক আলোচনা হয়েছিল। তো সেইজন্য হয়তো একটা ধারণা কোথাও হয়েছিল যে বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার যে ঘনিষ্ঠতা সেইখানে হঠাৎ একটা ব্রেক হয়েছে।”

“আমার মনে হয় না কোনো সার্বভৌম দেশ কোনোভাবে যতই সে পারস্পারিকভাবে ঘনিষ্ঠ হোক অন্য কাউকে আউটসোর্স করে দেবে। যেটা একটা ধারণার কথা উঠেছিল মাঝখানে। আমরা আশা করছি, ইলেকশন হবে, জিনিসটা আবার স্থিতিশীল হবে এবং নরম্যালসি চলে আসবে।”

ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করে শ্রীরাধা দত্ত বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার যেই আসুক তার সঙ্গে ভারত কাজ করবে। তবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিয়েই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হোক সেটা হয়তো দিল্লির প্রত্যাশা থাকবে বলে যোগ করেন মিজ দত্ত।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না সেরকমভাবে ইন্ডিয়া পার্টিকুলারলি কখনও আওয়ামী লীগের হয়ে কথা বলবে বা বলতে চাইবে। তবে জাতি হিসেবে আমরা দেখতে চাইবো প্রতিবেশী দেশে সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু এবং বহুদলীয় নির্বাচন হোক। সেই হিসেবে চাইবো যে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগও নিশ্চয়ই পার্টিসিপেট করুক নির্বাচনে।”

এদিকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো- সক্রিয় সবগুলো দল আওয়ামী লীগ বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং নির্বাচন করার সুযোগ না দেয়ারও জোরালো দাবি রয়েছে। একই সঙ্গে ভারত বিরোধী অবস্থানও তীব্র হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের ‘পরিশুদ্ধ’ হয়ে রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করা দরকার বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের উচিত হবে ভারতীয় আধিপত্যবাদের যে রাজনীতিটা তারা সবসময় সাথে নিয়ে হেঁটেছে, সেই বলয় থেকে বেরিয়ে নিজস্ব রাজনীতিতে ফেরা।”

“তারা চাইলে হয়তো একেবারে নিজেদের পরিবর্তন করে যে যে ভুলগুলো তারা করেছেন বা তাদের দলের নেতাকর্মীরা করেছেন সেইসব জায়গা থেকে বের হয়ে একেবারে পরিশুদ্ধ হয়ে একটা চেষ্টা চালিয়ে দেখতে পারেন” বলেন তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদন

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল নিয়ে মুখ খুলেছেন ‘ইলিয়াস’

সময়ের আলোচিত প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল নিয়ে কথা বলেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল নিয়ে কথা বলেন ইলিয়াস।

সাংবাদিক ইলিয়াস তার পোস্টে বলেন,কুয়েটের ঘটনায় অনেকেই ছাত্রদলকে ছাত্রলীগের সাথে তুলনা করছেন;

কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখতে হবে ছাত্রলীগের নেত্রী আর ছাত্রদলের নেত্রী/নেতা এক জিনিস না৷

বাংলাদেশ-চীনের নতুন কৌশলে সংকটে ‘ভারত’

চীনের জন্য হোয়াংহো নদী যেমন দুঃখের কারণ, তেমনি বাংলাদেশের জন্য তিস্তা নদীও একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার উৎস। তিস্তা, যা আয়তনে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী, একসময় ছিল এক বিশাল, দ্রুত প্রবাহিত নদী, কিন্তু ভারতের কারণে বর্তমানে সেখানে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে।

ন্যায্য পানি ভাগ পাওয়ার জন্য বহুবার চেষ্টা করেও তিস্তা নদী নিয়ে বাংলাদেশের জন্য কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি, বরং প্রতিশ্রুতির চেয়েও কিছু কমই পাওয়া গেছে। তবে, নদীপাড়ের মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে এবার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।

এরই মধ্যে, চীনকে এই বৃহৎ প্রকল্পে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, এমনটি জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম “দ্যা টেলিগ্রাফ”।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন তিস্তাপাড়ের মানুষের কল্যাণে করা হবে, যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেতৃত্বে চীনা বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় জনগণকে নিয়ে একটি জরিপ পরিচালিত হবে। জরিপের কাজ চলতি বছরের মধ্যে জমা দেওয়া হলে, এরপরই শুরু হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা।

আ.লীগ ও পুলিশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন জাতিসংঘের

দীর্ঘ একদলীয় শাসনের ফলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমান্বয়ে রাজনীতিকীকরণ হয়েছে, যা দেশের সমগ্র নিরাপত্তা খাতকেও গ্রাস করেছে। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ পেশাদারিত্বের পরিবর্তে রাজনৈতিক আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছে বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একটি রাজনৈতিক দলের টানা পনেরো বছরের শাসনের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত রাজনীতিকীকরণ হয়েছে, যা সমগ্র নিরাপত্তা খাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।’

ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, ‘অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে পেশাদারিত্ব, সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থিত সরকারে তাদের আনুগত্য বা সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।’

জেনেভা থেকে গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে ‘নিরাপত্তা খাতের রাজনীতিকীকরণ’ বিষয়ে একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু প্রার্থীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নয়, তাদের আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক দলীয় সংযোগও যাচাই করত।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনারেল (ডিআইজি) বা তার ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ অনুমোদন করতেন এবং আওয়ামী লীগ অনুগত ব্যক্তিদের কৌশলগতভাবে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর নেতৃত্বে বসানো হতো।

ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, তাদের তথ্য অনুসন্ধানকারীদের সঙ্গে কথা বলা ব্যক্তিরা উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশে পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি ব্যবস্থাপনায় স্বাধীন প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে রাজনৈতিক দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তির প্রবণতা আগের সরকারগুলোর আমলেও ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অতীতে সামরিক অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভূমিকা রেখেছে, তবে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর তুলনায় সেনাবাহিনী তুলনামূলকভাবে কম রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।

কিন্তু, এতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীতে কর্মরত কর্মকর্তারা এবং ভেতরের তথ্য জানা ব্যক্তিরা ওএইচসিএইচআর’কে জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীও দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিল, বিশেষ করে সিনিয়র পর্যায়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে সিনিয়র অফিসারদের পদোন্নতি দেওয়া হতো বা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হতো। অন্যদিকে যারা অনুগত নয় বলে বিবেচিত হতো, তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত করা হতো, দূরবর্তী পোস্টিং দেওয়া হতো বা কিছু ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হতো।

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে রাজনীতিকীকরণের ফলে ক্ষমতাসীন দল ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে একটি নেতিবাচক পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতাসীন দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন করার এবং ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের অপরাধে হস্তক্ষেপ না করার বিনিময়ে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিজেদের গুরুতর অপরাধ ও দুর্নীতির জন্য দায়মুক্তির নিশ্চয়তা পেত।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গুরুতর অপরাধের জন্য ফৌজদারি জবাবদিহিতা বিরল ঘটনা ছিল এবং সাধারণভাবে দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশি নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলো ২৫৯৭টি কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ৭০৮টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘র‌্যাব এককভাবে ৮০০টির বেশি কথিত হত্যাকাণ্ড ও প্রায় ২২০টি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিল। কিন্তু র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যার দায়ে মাত্র একটি মামলায় সাজা হয়েছে, যেখানে ভুক্তভোগী ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা।’

নাগরিক সমাজ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ডিজিএফআই কর্মকর্তারা ১৭০টিরও বেশি কথিত গুমের ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তবে কোনো ডিজিএফআই কর্মকর্তাকে এখন পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।

জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন ও ঘুষ আদায়ের ব্যাপক এবং নিয়মিত চর্চা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু (নিষিদ্ধকরণ) আইন’ প্রণয়ন করলেও তারপর থেকে অন্তত ১০৩ জন বন্দি নির্যাতনে নিহত হয়েছেন।

সরকার এখন পর্যন্ত এই আইনের আওতায় মাত্র ২৪টি মামলা নথিভুক্ত করেছে এবং মাত্র একটিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের হেফাজতে নির্যাতনে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি আইন ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।’

কি আর বলব ‘যেই লাউ-সেই কদু’: আদালতে ইনু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী হত্যায় মিরপুর মডেল থানার মামলায় সাবেক মন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ফের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিএম ফারহান ইশতিয়াকের আদালত এ আদেশ দেন।

এদিন সকাল ১০ টার দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্ষমতাশালী এই দুই শরিক দলের নেতাদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় তাদের আদালতে এনে কাঠগড়ায় রাখা হয়। কাঠগড়ায় আসার পরই ইনু ও মেনন তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন।

এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী হত্যায় মিরপুর মডেল থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক নাসির উদ্দিন সরকার তাদের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

এ সময় ইনুর আইনজীবী আদালতে শুনানিতে বলেন, আন্দোলনের সময় আসামি ইনু এমপি ছিলেন না। আন্দোলনের সময় তিনি কোনো হত্যার নির্দেশ দেননি। বরং তিনি যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। আসামি ইনু পাকিস্তান পিরিয়ডে নামকরা ফুটবলার ছিলেন। তিনি গোলরক্ষক ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি খেলা ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন খ্যাতিমান বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ। তার বয়স হয়েছে। তাকে জামিন দেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রিমান্ডের জোর দাবি জানান। শুনানি শেষে বিচারক তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডের আদেশ শুনে হাসেন ইনু। এরপর তাদের হাতে হাতকড়া, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয়।

নিয়ে যাবার সময় সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে কালবেলা থেকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি নাকি খেলোয়াড় ছিলেন। এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘কি আর বলবো, যেই লাউ সেই কদু।’

পরে এ সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন। আপনি কোন পক্ষে? উত্তরে তিনি মুচকি হেসে বলেন, ‘আমি লাউ, কদু দুটিরই বিপক্ষে’।

এরপর তার পাশে আইনজীবী, পুলিশ ও সাংবাদিকের মাঝে হাসির রোল পড়ে যায়। হাসতে থাকেন ইনু ও মেননও। এ সময় মেননের কোনো বক্তব্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আর কি বলব’।

এদিকে মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট মিরপুর গোল চত্বর এলাকায় গুলিতে নিহত হন আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী। এ ঘটনায় তার বাবা আল আমিন পাটোয়ারী মিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

চাপের মুখে ভারত, শেখ হাসিনাকে আর সমর্থন করবে না মিডিয়া!

দিল্লির আকাশে তখন ঝলসানো দুপুর, জানালার ওপারে গাঢ় রোদ, কিন্তু ঘরের ভেতর শীতল বাতাস বইছে। সোফার কোণে হেলান দিয়ে বসে আছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, হাতে ভারতের একটি সংবাদপত্র। বড় করে ছাপানো হেডলাইনটি পড়তে গিয়ে তার চোখে অস্বস্তি ফুটে উঠছে—”বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড় বদলের সময় এসেছে হাসিনাকে সমর্থন করা কি ভারতের জন্য ক্ষতিকর?”

শেখ হাসিনা কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়লেন, তার ঠোঁট কামড়ে ধরে আরো মনোযোগ দিয়ে সংবাদটি পড়তে শুরু করলেন। সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে তার অস্বস্তি আরও বেড়ে গেছে। দ্যা প্রিন্ট, হিন্দুস্থান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে—সব জায়গাতেই এখন প্রশ্ন উঠছে হাসিনার সম্পর্কে।

একসময় যেসব সংবাদমাধ্যম ছিল তার পক্ষে, তারা এখন প্রশ্ন তুলছে, কেউ সরাসরি বলছে, “বাংলাদেশের জনগণের কাছে হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা নেই,” আর কেউ পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারতকে নতুন কৌশল নিতে হবে।

এক সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে শেখ হাসিনার প্রতি ছিল গভীর সমর্থন, এমনকি বলা হতো হাসিনাই ভারতের একমাত্র নির্ভরযোগ্য মিত্র। তবে বর্তমানে ভারতের কূটনৈতিক মহলে হাসিনাকে নিয়ে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তা তলানিতে পৌঁছেছে এবং ভারতীয় নীতি এখন বিপদে পড়তে পারে। দ্যা প্রিন্টের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, “শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে ভারত নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে, বাংলাদেশের জনগণের ক্ষোভ তীব্র হয়ে উঠছে, এবং ভারতের স্বার্থ এখন হুমকির মুখে।”

ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে বিজেপি বাংলাদেশী জনগণকে পাকিস্তানের সমর্থক হিসেবে চিত্রিত করছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি সতর্কবার্তা উঠে এসেছে, “দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে হারানো ভারতের জন্য কৌশলগত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে।”

বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ক্ষোভ শুধু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, বরং ভারতীয় নীতির বিরুদ্ধেও প্রকাশিত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত বিরোধী মন্তব্যের সুনামি দেখা যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এমনকি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, ভারত তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রকে বাঁচাতে গিয়ে পুরো বাংলাদেশকেই হারাতে বসেছে।

এখন ভারতের কূটনৈতিক মহলে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। এক পক্ষ বলছে, “হাসিনাকে সমর্থন অব্যাহত রাখা উচিত,” অন্য পক্ষ বলছে, “এখনই সরে যাওয়ার সময়।” একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, “শেখ হাসিনার ভারত নির্ভরতা এখন তার রাজনৈতিক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের সমর্থন তাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না, বরং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ডেকে আনবে।”

এখন প্রশ্ন উঠছে, “নরেন্দ্র মোদি সরকার কি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ছেড়ে দেবে, নাকি তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নতুন কোন কৌশল গ্রহণ করবে?” ভারতের সামনে দুটি পথ রয়েছে: এক, হাসিনাকে ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা, এবং দুই, হাসিনাকে বাঁচাতে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়া—যা ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বড় ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে।

এই সংকটপূর্ণ সময়ে ভারতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। শেখ হাসিনা জানেন, তার কপালের ভাঁজ আরও গভীর হতে চলেছে। প্রশ্ন একটাই—দিল্লি কি সত্যিই তার বিশ্বস্ত হাসিনাকে ছাড়তে চলেছে?

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=y0WzQYC3Qsk&ab_channel=NTVNews

উপদেষ্টা পরিষদে বদল আসছে!

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম কয়েকটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই নিজেসহ উপদেষ্টা পরিষদে থাকা শিক্ষার্থীরা পদ ছাড়তে পারেন। বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আর এ মাসের শেষেই ঘোষণা আসছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের।

অধ্যাদেশ নয় বরং বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আর সেটা হতে পারে নির্বাচনের আগেই। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করায় সরকারের সাথে দূরত্ব কমেছে বলেও মনে করেন নাহিদ ইসলাম।

কোটা বাতিল আন্দোলন থেকে সরকার পতনের ঘোষণা। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন। তারপর, এরইমধ্যে চলে গেছে ছয় মাসের বেশি সময়। দেশ পুনর্গঠনে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থীরা গঠন করেন জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাদের পক্ষ থেকেই গঠিত হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল।

আর, এই নতুন দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে এ মাসেই। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ আরো জানান, দলের কার্যক্রমে যোগ দিতে তিনিসহ উপদেষ্টা হিসেব দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন কয়েকদিনের মধ্যেই।

ছাত্রদের নেতৃত্বে একটা নতুন রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনা বা আলোচনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, সে দলে অংশগ্রহণ করতে হলে সরকারে থেকে সেটি সম্ভব নয়। সেই দলে আমি যদি যেতে চাই তাহলে সরকার থেকে আমি পদত্যাগ করবো।

তিনি বলেন, আমরা চিন্তাভাবনা করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও চিন্তাভাবনা করছি। যদি মনে করি, সরকারের থেকে আমার মাঠে যাওয়া, জনগণের সাথে কাজ করা বেশি জরুরি। মনে হয় আমি সরকার ছেড়ে দেবো এবং সে দলের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবো।

ঘোষণা এসেছে দলটি এ মাসেই হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আর কয়েকদিনের ভেতরে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সবাই জানতে পারবেন।

বিকট শব্দে ভারতে ডুবলো বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ, অতঃপর…

মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আবারো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীতে ডুবে গেল বাংলাদেশি একটি জাহাজ। শুক্রবার ভোরে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার হুগলি নদীর ঘোড়ামারা দ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় ডুবে যায় একটি ছাইবোঝাই বাংলাদেশি জাহাজ। জাহাজটির নাম এমভি সি ওয়ার্ল্ড, যা কিং ওশান শিপিং লাইন্স নামে একটি বাংলাদেশি শিপিং কোম্পানির মালিকানাধীন।

জাহাজটি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট থার্মাল পাওয়ার স্টেশন থেকে ছাই বোঝাই করে বাংলাদেশে ফিরছিল। পথের মধ্যে হঠাৎ করে জাহাজের তলায় একটি বিকট শব্দ হয়। এরপরেই জাহাজে পানি ঢুকতে শুরু করে, এবং ধীরে ধীরে এটি নদীতে তলিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে জাহাজটি সম্পূর্ণরূপে নদীতে ডুবে গেছে।

তবে, অত্যন্ত সৌভাগ্যবশত, জাহাজটির ১৬ সদস্য বিশিষ্ট ক্রুদের সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত ক্রু সদস্যদের সকলেই সাগর থানার পুলিশের আশ্রয়ে আছেন। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্থানীয় রুদ্রনগর গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, এবং সকলেই সুস্থ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

জাহাজের মালিক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, এবং তাদের নির্দেশনা পাওয়ার পরেই উদ্ধার কাজ শুরু হবে। হুগলি নদীর এই অংশটি জাহাজ চলাচলের এক গুরুত্বপূর্ণ রুট হওয়ায় দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছে।

এক মাসের মধ্যে আবার একটি বাংলাদেশি জাহাজ পশ্চিমবঙ্গের নদীতে ডুবলো। এর আগে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বাঁশবাড়িয়া সংলগ্ন গঙ্গায় ডুবে যায় বাংলাদেশি একটি জাহাজ, যার নাম ছিল এডি বছিরউদ্দিন কাজি। এটি ত্রিবেণী ব্যান্ডেল থার্মাল পাওয়ার স্টেশন থেকে ছাই নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ফিরছিল।

এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এমন একাধিক দুর্ঘটনা একে অপরকে অনুসরণ করেছে, যা উদ্বেগজনক এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেয়।

গোপন নথি ফাঁস: ২০১৮ সাল থেকেই হাসিনাকে সরাতে চলছিলো মার্কিন নীল নকশা

একটি অনলাইন সংবাদপত্রের প্রকাশিত গোপন নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য মার্কিন সরকার সক্রিয়ভাবে পরিকল্পনা করে আসছিল।

‘দ্য গ্রেট জোন’ নামের সংবাদপত্রটি জানায়, শেখ হাসিনার সরকার পতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট’ (আইআরআই)-এর মাধ্যমে গোপনে বিশাল কর্মীবাহিনী গঠন করে।

এই ষড়যন্ত্রের আওতায় বিভিন্ন শ্রেণির কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যার মধ্যে র‍্যাপার, এলজিবিটিকিউ কর্মী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ফাঁস হওয়া নথিতে উল্লেখ রয়েছে যে, সরকারবিরোধী আন্দোলন উসকে দিতে সাংস্কৃতিক কৌশল ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়। আন্দোলনকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও তরুণদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে গণজমায়েত, সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং এমনকি হিজড়াদের নাচের পারফরম্যান্সের মতো কর্মসূচিও আয়োজন করা হয়।

আইআরআই-এর মিশন ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ক্রমাগত অস্থিতিশীল করে তোলা এবং বিদ্যমান সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা। নথিতে বলা হয়, “এই পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করা এবং তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য একটি সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করা।”

প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করেছিল, তবে তারা দ্রুত বুঝতে পারে যে বিএনপির জনসমর্থন নেই এবং দলটি রাজনৈতিকভাবে অযোগ্য।

নথিতে আরও বলা হয়, “বিএনপি ছিল মার্কিন সরকারের প্রথম পছন্দ, তবে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জনগণের স্বল্প সমর্থনের কারণে এই পরিকল্পনা সফল হয়নি।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র তাদের কৌশল পরিবর্তন করে তরুণদের টার্গেট করে এবং সামাজিকভাবে তাদের মাধ্যমে সরকারবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়। ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ত্বরান্বিত

করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।এই পরিকল্পনার অধীনে বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের গোপনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়,তরুণদের মাধ্যমে সরকারবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়,বিদেশি মিডিয়ার নজর আকর্ষণ করতে বিক্ষোভের বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করা হয়।

নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ‘প্রতিবাদী শিল্পী’ ও সৃজনশীল কর্মীদের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলে।নথি অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের কার্যক্রম ভিডিও আকারে রেকর্ড করে তা দ্রুত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল-বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটকে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করা,পশ্চিমা মিডিয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নেগেটিভ প্রচারণা চালানো এবং সরকারবিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালানো।

নথিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী বিএনপির জনপ্রিয়তা এতটাই কম ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন ছাড়া তারা ক্ষমতায় আসতে পারত না। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,বিএনপির জনপ্রিয়তার অভাব,

নেতৃত্বের অযোগ্যতা এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। বিএনপি সহিংসতা ও নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করলেও জনগণের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে।

তাই যুক্তরাষ্ট্র তাদের মূল কৌশল পরিবর্তন করে তরুণদের মাধ্যমে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি করতে শুরু করে এবং শিল্পীদের ব্যবহার করে আন্দোলনকে আরও গতিশীল করে।

সূত্র:https://tinyurl.com/3jmxx73w