গণমাধ্যমে ঘাপটি মেরে আছে হাসিনার দোসররা, অসাবধানতায় ঝলক দেখালেন ‘বর্ণা’

ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যা চালিয়ে ভারতে পালানোর ঘটনা ৭ মাস পেরিয়েছে। টানা দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে তাকে ফ্যাসিস্ট ও হিংস্র হয়ে ওঠার পেছনে গুরুতরভাবে ভূমিকা রেখেছিল কিছু গণমাধ্যম ও দোসর সাংবাদিকরা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পতন হলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এখনো ঘাপটি মেরে আছে সেসব দোসররা। রয়েছে সুযোগের অপেক্ষায়। এখন টিভির নিউজরুম এডিটর ও টেলিভিশন উপস্থাপিকা জেনিসিয়া বর্ণার আচমকা ফাঁস হওয়া গা‌লি‌কাণ্ডে যেন সেই চিত্রই উন্মোচিত হয়েছে, বলছেন নেটিজেনরা।

জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষনেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলোনের প্রধানমুখ হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলমকে লাইভ অনুষ্ঠানে শুয়োর বলে চাকরী হারিয়েছেন বর্ণা।
সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক ঘটনা, আট বছরের শিশু আছিয়া নিজ বোনের শশুরবাড়িতে গণধর্ষনের স্বীকার হয়ে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করলে। ঘটনার প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমিক ভূমিকায় একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল ‘এখন টিভি’ সংবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে সরাসরি সম্প্রচারে ছিলো।

অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারে থাকা অবস্থায়, কারিগরি ত্রুটির ফলে, স্টুডিও ইসনাইড কনভার্সেশনের একটি অংশ সরাসরি সম্প্রচারে চলে আসে। যেখানে নিউজরুম থেকে একজন জিজ্ঞেস করছিলেন, হাসনাত এবং সারজিস মাগুরায় গিয়েছেন কি না। তার প্রতিউত্তরে এখন টিভির উপস্থাপিকা বর্ণা আনকোট অবস্থায় বলেন, এই শুয়োর গুলো গেলেই কি আর না গেলেই কি।

মুহুর্তের মধ্যে টিভি ফুটেজটি ভাইরাল হয়। সমালোচনার ঝড় শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিতর্কের মুখে এখন টিভির সিইও তুষার আব্দুল্লাহ তড়িঘড়ি করে টিভি উপস্থাপিকা জেনিসিয়া বর্ণাকে চাকরিচ্যুত করেন।

নেটিজেনরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর সাংবা‌দিক‌রা অভ‌্যুত্থা‌নের নায়ক ছাত্রনেতা‌দের কতটা ঘৃণা ক‌রে তা প্রমাণ হ‌য়ে‌ছে আচমকা ফাঁস হওয়া এই গা‌লি‌তে। ছাত্রদের তা‌রাই ঘৃণা ক‌রে, যারা জুলাই গণহত‌্যার সমর্থক। একজন সাংবা‌দিকের অভ‌্যুত্থান ও অভ‌্যুত্থানকারী‌দের এতটা বি‌দ্বেষ থাকলে নির‌পেক্ষ হ‌বেন কী ক‌রে? যা গা‌লিকা‌ন্ডের আসল আলাপ। সাংবা‌দিকতা রাজ‌নৈ‌তিক কর্মীর জন‌্য নয়।

এদিকে, সেই সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজেই।গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত ২টা ২০ মিনিটে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, এখন টিভির সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। আপনার এই গালির স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। শুধু মত প্রকাশ নয়, দ্বিমত প্রকাশও অব্যাহত থাকুক।

ফেসবুক ব্যবহারকারী ইসরাফিল ফরাজী লিখেছেন, গতকাল রাতে ওই গণমাধ্যম যা করেছে সেটা তার অফিস পলিসি। হাসনাতেরও নিজস্ব একটি মতাদর্শ রয়েছে। আমিও মনে করি ওদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। মিডিয়ার ৯৫% ওদেরই লোক। একটা ভয়েস শুধু ভুলে প্রকাশ হয়েছে বলে বুঝা গেছে। এমন কত হাজার গা*লি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন হাউজ দেয় তার কী হবে?

চব্বিশের অভূত্থানকে মিডিয়া ভুলিয়ে দিচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। এটা শুধু পুরনোরা নয় নয়া ফ্যাসিজম যারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারাও বিপ্লবের কেনো ফলোআপ অনুষ্ঠান করছে না। এতে করে মানুষ ভুলতে বসেছে চব্বিশে একটি বিপ্লব বাংলাদেশে হয়েছিল। কয়েক বছর পরই দেখা যাবে এর ফলাফল।

মোস্তফা সারিয়ার রাজিব লিখেছেন, যেসব সাংবাদিক কট্টর আওয়ামীলীগ ও সুবিধাভোগী এরা তো ছাত্রদের ঘৃণা করবে! ফ্যাসিস্টদের সমর্থক এইসব সাংবাদিকদের প্রতি করুনা দেখানো যাবে না! হাসিনার আমলে তো গুম হয়ে যেত। সাংবাদিকদের অনেকেই আমাদের বাচ্চাদের খুন করার সমর্থন দিয়েছে। তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এরা এখনও সক্রিয়। যারা আবারও সুযোগ পেলে আমাদের সন্তানদের খুন করার ন্যারেটিভ তৈরী করবে।

সাংবাদিক গাজী আনোয়ার লিখেছেন, দ্বিমত প্রকাশের ভাষাও শালীন এবং সাবলীল হওয়া উচিত।সাংবাদিকতায় প্রফেশনালিজম এর বাহিরে গেলে চাকরিচ্যুত হবে স্বাভাবিক।সাংবাদিক হিসেবে পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতার মানদণ্ড লঙ্ঘণ করা যায় না।
সাংবাদিকতা কোনো লেবাস না, কিন্তু অনেকে লেবাস নিয়েছেন সাংবাদিকতার। এগুলো আসলে নিচু জাতের এক্টভিস্ট!

সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়যেখানে দেখা যাচ্ছে, দোসর সাংবাদিকরা কিভাবে সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আরো হিংস্র হয়ে উঠতে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। তারা হাসিনার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নগ্ন সমর্থন, দমনপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা ও নির্লজ্জ চাটুকারিতার মাধ্যমে রক্তপিপাসু হাসিনাকে আরও ভয়ঙ্কর, নিপীড়ক ও গণহত্যাকারী হয়ে ওঠতে উৎসাহ জুগিয়েছেন বলে মনে করেন সচেতন মহল।

জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওটি গত বছরের ২৪ জুলাইয়ের। ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চলাকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময়ের নামে তার চাটুকারিতা করেন বাছাইকৃত দোসর সাংবাদিকরা। হাজার হাজার হতাহত ছাত্রজনতার জন্য তাদের বিন্দুমাত্র সমালোচনা করতে দেখা তো যায়নি উল্টো বিটিভি ভবন ও মেট্রোরেলের জন্য মায়া কান্না এবং প্রশাসনরে ক্র্যাকডাউনের প্রশংসা করে নরপিশাচ হাসিনাকে রক্তাক্ত দমনপীড়নে আরও উৎসাহ দেন। ফ্যাসিবাদের দোসর এসব সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা।

গণজাগরণ মঞ্চের আলোচিত সেই লাকি আক্তারের মৃ’ত্যু! যা জানা গেল

দেশজুড়ে বেড়েছে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা, এর প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণী পেশার মানুষ। একই দাবিতে দীর্ঘ ১৩ বছর পর রাজপথে দেখা যাচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চের আলোচিত সেই লাকি আক্তারকে। এরই মাধ্যে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।

এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ খবর ছড়িয়েছে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত হয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের এই নেত্রী। কিন্ত সত্যিই কি তাই নাকি গুজব! ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের সংগ্রামী কণ্ঠ লাকি আক্তার নিহত, ১৩ মার্চ স্বাধীন নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটে শীর্ষক শিরোনামে এমন একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

যেখানে স্বাধীন নিউজ জানায়, বাংলাদেশের অন্যতম সংগঠক ও অধিকারকর্মী ১২ই মার্চ রাত ১২টায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়েছেন। রাজধানীর শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের এক সভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী তাকে ছুরি ও লাঠিসোঁটা দিয়ে আঘাত করে৷ স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এরপরেই লাকি আক্তারের নিহত হওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে, আর এ বিষয়টি নজরে আসে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের।

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীন নিউজের ওই প্রতিবেদনটিতে চিকিৎসক ও পুলিশের কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। এমনকি কোন হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল বা কোন স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল সে বিষয়েও উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া স্বাধীন নিউজ ওয়েবসাইটটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ওই ওয়েবসাইটটি একটি ব্লগিং ওয়েবসাইট।

রিউমার স্ক্যানার আরো জানায়, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনকারীর লাকি আক্তারের মৃত্যুর দাবিটি সঠিক নয়। বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কী ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সূত্রে এই সংক্রান্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সুতরাং ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনকারী লাকি আক্তার মারা যাওয়ার সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

সূত্রঃ https://youtu.be/8B0ZJ9cgRhU?si=nAlLMF1GKSVZjW30

ভারতের সেনাপ্রধান শেখ হাসিনার ফেরা নিয়ে কি ‘মন্তব্য’ করেছেন?

সম্প্রতি বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ফিরলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগের মতো হবে শীর্ষক মন্তব্য ভারতীয় সেনাপ্রধান করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে শেখ হাসিনা ফিরলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক ভালো অবস্থানে যাবে। তবে ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ খবর সঠিক নয়। ভারতীয় সেনাপ্রধান এমন মন্তকব্য করেননি।

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ফিরলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগের মতো হবে শীর্ষক মন্তব্য করেননি ভারতীয় সেনাপ্রধান বরং, ভারতীয় সেনাপ্রধানের বাংলাদেশে সরকার বদলালে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক পরিবর্তন হতে পারে শীর্ষক মন্তব্যকে আলোচিত ভুল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ফিরলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগের মতো হবে’ শীর্ষক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ভিডিওতে জাতীয় দৈনিকের লোগো লক্ষ করা যায়।

ওই দৈনিকের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে একটি ভিডিওসহ ১০ মার্চ প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সঙ্গে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সরকার বদলালে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক পরিবর্তন হতে পারে: ভারতীয় সেনাপ্রধান’।

এ বিষয়ে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে ৯ মার্চ ‘বাংলাদেশে সরকার বদলালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন হতে পারে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে ভারতের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের পরিবর্তন আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সামরিক সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী এবং উভয় দেশের সামরিক বাহিনী নিয়মিতভাবে নোট বিনিময় করে থাকে।

অর্থাৎ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকেও এটি নিশ্চিত যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ফিরলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক আগের মতো হবে শীর্ষক মন্তব্য ভারতীয় সেনাপ্রধান করেননি।

সুতরাং ভারতীয় সেনাপ্রধানের বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্তব্যকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসলে সম্পর্ক আগের মতো হবে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৮ মার্চ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের অনুষ্ঠান ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভে’ বক্তব্য দেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। সেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সামরিক সম্পর্ক খুবই শক্তিশালী এবং উভয় দেশের সামরিক বাহিনী নিয়মিতভাবে নোট বিনিময় করে থাকে।

মাগুরায় সেই ‘শয়তানের বাড়ি’ গুঁড়িয়ে দিল এলাকাবাসী!

মাগুরার শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত হিটু শেখের বাড়িকে ‘শয়তানের বাড়ি’ আখ্যা দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয়রা। শুক্রবার ওই বাড়ির ইট-কাঠ, দরজা-জানালা থেকে শুরু করে সবকিছু ভেঙে খুলে নিয়ে যায় তারা। বাড়ির গাছপালাও কেটে নেয় অনেকে। এর আগে বৃহস্পতিবার বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়েছিল।

জানা যায়, মাগুরার শহরতলি নিজনান্দুয়ালী গ্রামের মাঠপাড়ায় হিটু শেখের বাড়ি। এ বাড়িতেই বেড়াতে এসে ৫ মার্চ রাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল শিশুটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। সন্ধ্যা ৭টায় মাগুরা শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির প্রথম জানাজা শেষে বিক্ষুব্ধ লোকজন হিটু শেখের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়।

শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় তার বাড়িতে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বিকাল ৩টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শত শত লোক ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে বাড়িটি ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে হাতুড়ি-শাবল নিয়ে বাড়ির দেওয়াল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। কেউ দরজা-জানালাসহ ঘরের বিভিন্ন জিনিস নিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে সকাল থেকে বাড়ির গাছপালাও কেটে নিয়ে যান কেউ কেউ।

হাতুড়ি হাতে বাড়িটির দেওয়াল ভাঙার কাজে যোগ দেওয়া নিজনান্দুয়ালী গ্রামের মোস্তাক হোসেন বলেন, হিটুর এ বাড়িটি শয়তানের বাড়ি। এ বাড়িতে শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাই বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়াই ভালো।

ধর্ষণের ঘটনায় ৮ মার্চ হিটু শেখের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে সদর থানায় মামলা করেন শিশুটির মা। ওই মামলায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ এনে আসামি করা হয়েছে হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা, দুই ছেলে রাতুল ও সজিবকে। চার আসামিকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারা বর্তমানে মাগুরা কারাগারে আছে।

শিশুটির কবর ঘিরে শোকাহত সহপাঠীরা
শিশুটির সহপাঠীরা শুক্রবার তার কবরে গিয়ে শোক প্রকাশ করেছে। দুপুর ৩টায় শিশুর দাদাবাড়ির ওই কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, একই বয়সি কয়েকটি শিশু কবর ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখে পানি টলমল করছে। শোকাহত হাসিবুল জানায়, শিশুটি তার সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে পড়ত। সে অনেক ভালো ছাত্রী ছিল। একসঙ্গেই তারা স্কুলে যাওয়া-আসা করত। তার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।

এদিকে সকালে শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে শিশুটির বাড়িতে যান জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মাগুরার সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সংসদ-সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলি, মাগুরা জেলা বিএনপি সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রেজাউল হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা শিশুটির পরিবারের খোঁজখবর নেন। আগামী দিনে অসচ্ছল এ পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তারা।

মাগুরা কারাগার ঘেরাও শিক্ষার্থীদের
ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার দুপুরে মাগুরা কারাগার ঘেরাও করেন মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। জুমার নামাজের পর শিক্ষার্থীরা কারাগারের সামনে মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়ে। পরে তারা সড়ক ছেড়ে কারাগারের মূল ফটকের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন।

স্ত্রীকে ধ’র্ষণের অভিযোগে কারাগারে স্বামী, সুযোগ কাজে লাগালো ‘পুলিশ’

স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২২ দিন জেল খেটেছেন স্বামী আনোয়ার হোসেন। এমনকি নিজেকে ধর্ষিতা প্রমাণ করতে ডাক্তারি পরীক্ষাও করেছেন স্ত্রী ইসমত আরা যিনি ঢাকা মেডিকেলে তিন দিন ভর্তি থেকেছেন। ২২ দিন পর জামিনে বেরিয়ে আবার সেই স্ত্রীর সাথে বসবাস করছেন আনোয়ার হোসেন।

মামলার কি হবে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে কিসমত আরো বলেন আমি মামলা প্রত্যাহার করে নেব। তবে স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন আমি এই মামলা চালিয়ে যেতে চাই। স্বামী আনোয়ার হোসেন একটি সাক্ষাৎকারে বলেন অপহরণকারী এবং ধর্ষক নামে আমাকে এখন সবাই চিনছে।

ফ্ল্যাটটি আমার স্থায়ী ঠিকানা, কিন্তু সেখানে আমি এখন মুখ দেখাতে পারছি না। অনুসন্ধানে নিজের স্বামীকে ধর্ষক প্রমাণ করতে যাওয়া ইসমত আরা ইতির প্রতারণার সকল কৌশল ধরা পড়েছে। কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং ইতির বড় বোন যূথির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় এই ঘটনায়।

এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন হাতিরঝিল থানা পুলিশের বাহিরের অজ্ঞাত এক ব্যক্তি অথচ তিনি ক্যামেরায় নিজেকে অসহায় বলে দাবী করেন। পুলিশকে সাহায্য করতে ইতি নিজেই দরজা খুলে নিজের প্রথম ঘরের সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর আবার ঘরে ঢুকে নিজেকে ধর্ষিতা বানানো নাটক করেন। তখন সেটি ভিডিও করতে সাহায্য করেন হাতিরঝিল থানার এক পুলিশ সদস্য।

হাতিরঝিল থানায় যোগাযোগ করলে জানা যায় এই পুলিশ সদস্য ইতি পরিবারেরই সদস্য। তবে ইতির পরিবার এই ব্যাপারটি সম্পুর্ন অস্বীকার করেছেন, এমনকি তার নাম সাক্ষীতেও রাখা হয়নি।

তাদের অভিযোগ, প্রথম স্বামীর জমি সংক্রান্ত মামলায় এসআই রাজিব এর সাথে পরিচয় হয় ইতির। ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন তারা রাজিবের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা ঠেকাতে স্বামী এবং স্ত্রীর কলহের সুযোগ নিয়ে স্বামীকেই ধর্ষক বানানোর নাটক সাজিয়েছে পুলিশ। তবে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই রাজিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেন ইতি বারবার তাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

এক দশকের মধ্যে পঞ্চগড়ের একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন: সারজিস আলম

আগামী এক দশকের মধ্যে পঞ্চগড়ের একজন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। শুক্রবার (১৪ মার্চ) ঢাকায় পঞ্চগড় জেলা সমিতির ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পঞ্চগড়ের উন্নয়নের জন্য সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, “পঞ্চগড়কে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই বিষয়ে আমরা একটি কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করব এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব।”

তিনি আরও বলেন, “পঞ্চগড়ে যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসাধু কার্যকলাপের অভিযোগ থাকে, তবে তা জানালে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের বদলি করব।”

পঞ্চগড়বাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আমরা যদিও বিভিন্ন দল ও মতের অনুসারী, তবে যদি একত্রিত হয়ে কাজ করি, তবে পঞ্চগড়ের উন্নয়ন সম্ভব হবে।”

সেনাবাহিনীর ৭ মিনিটের ‘আল্টিমেটাম’

গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকার ইস্মোগ সোয়েটার নামক কারখানায় ঈদ বোনাস, ২৫ ভাগ উৎপাদন বোনাস, নাইট বিল, টিফিন বিলসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এই অসন্তোষের কারণে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

দীর্ঘ সময় ধরে সড়ক অবরোধ থাকার পর, সেনাবাহিনী শ্রমিকদের ৭ মিনিটের আল্টিমেটাম দেয়। সেনাবাহিনীর হুঁশিয়ারির পর ২ মিনিটের মধ্যে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান।

হ্যান্ড মাইকে এক সেনা কর্মকর্তা ঘোষণা করেন, “আপনারা দাবিগুলো নিয়ে নেগোসিয়েশন চলছে এবং তা চলবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। যদি ফ্যাক্টরির ভেতরে মালিক ও শ্রমিকের কোনো অমিল থাকে, তবে সেটা নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সমাধান হবে।

তবে গতকালই শ্রম মন্ত্রণালয় এবং আইজিপি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, এখন থেকে কোনো রোড ব্লক গ্রাহ্য করা হবে না। রোড ব্লক এবং জনভোগান্তি এক পানিশেবল ক্রাইম। এর জন্য যে কেউ সাজাপ্রাপ্ত হতে পারেন।

এদিকে, ওই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, “আপনার জন্য সময় দেওয়া হচ্ছে ৭ মিনিট। ৭ মিনিটের মধ্যে আপনাদের সাইডে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। যদি সড়ক না ছাড়েন, তাহলে আপনার দাবির ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তবে আগে রাস্তা ক্লিয়ার করতে হবে। আমি পরিষ্কার বলছি, ৭ মিনিটের মধ্যে রাস্তা না ছাড়লে তা আদেশ ভঙ্গ হবে এবং জনভোগান্তি সৃষ্টি করার জন্য আপনাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সেনাবাহিনীর এই কঠোর বক্তব্যের পর, মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে সরে যান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে এবং শ্রমিকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে তারা মহাসড়ক ছেড়ে দেন। এ ঘটনায় সড়ক অবরোধ তুলে নেয়ার পর, এলাকার পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয় এবং শ্রমিকদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তাদের দাবির কিছু সমাধানও হয়েছে বলে জানা গেছে।

এবার ৯ বছরের শিশু ধ’র্ষ’ণের ঘটনায় থানা ঘেরাও

মেহেরপুরে ৯ বছর বয়সী শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি জামিন পেয়ে বাদীকে ব্ল্যাকমেইল করেন। এর প্রতিকার চেয়ে বাদী থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) অভিযুক্ত ধর্ষককে বাঁচাতে পক্ষপাতিত্ব করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে অভিযোগের ভিত্তিতে মেহেরপুর সদর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্র-জনতা।

জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসকারী ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে মদনাডাঙ্গা গ্রামের বায়েজিদ নামের যুবক। ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ধারণ করে বায়েজিদের সঙ্গী আলামিন হোসন।

এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদি হয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ, আলামিন ও বরকত আলী নামের তিন জনের নামে আদালতে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। আসামিরা গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক মাস হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হন।

ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের হুমকি দিয়ে বাদীকে মামলা তুলে নিতে বলে আসামিরা। ব্ল্যাকমেইল করে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছে তারা। এরপর এক পর্যায়ে এ ভিডিও তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়।

এ ঘটনায় ধর্ষণ মামলার বাদী প্রতিকার চেয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি মীমাংসা জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর থানার এসআই সুজয় কুমার উভয়পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেন। এ সময় এসআই সুজয় কুমার ধর্ষণ মামলার আসামিদের পক্ষ থেকে বাদীকে চাপ দিতে থাকেন।

ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে খবর পেয়ে থানায় থানায় গিয়ে প্রতিবাদ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী তুষার ও সিয়াম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই সুজয় কুমার থানার মধ্যেই তুষার ও সিয়ামকে মারধর করেন।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ করেন। এসআই সুজয় কুমার ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে থানা ও থানার আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র জনতা।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেনাবাহিনীর একটি দল থানায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকছুদা খানম বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিয়ে পুলিশ সুপারের বক্তব্য প্রত্যাখান করেন। তবে শেষ পর্যন্ত ছাত্ররা তিনটি শর্তের মধ্যে এক ঘণ্টা সময় বেধে দেয়।

রাত সাড়ে ১২টার সময় পুলিশ সুপার এসআই সুজয়কে ক্লোজ করার ঘোষণা দিলে ছাত্ররা থানা চত্বর ত্যাগ করে। পুলিশ সুপার মাকসুদা আখতার খানম বলেন, ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী উপরিদর্শক (এসআই) সুজয় কুমার মল্লিককে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত অন্য দুজনকে আটক করতে সেনাবাহিনীসহ পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

যা জানা গেল জামায়াত আমির ও নাহিদ ইসলামের সেই ‘ভাইরাল ছবি’ সম্পর্কে

সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের চুম্বনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ছবির এ দৃশ্য এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে বলে ‘রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ গ্রুপ’ থেকে দাবি করা হয়েছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে ওই দৃশ্যের মতো কোনো কিছু ঘটেনি। এছাড়াও, নাহিদ ইসলামের হাতে ওই অনুষ্ঠানে ঘড়ি না থাকলেও এই ছবিতে ঘড়ি দেখা যায়, তার পাঞ্জাবির কাফ-এ এমব্রয়ডারি করা থাকলেও ওই ছবিতে সেটি নেই।

রিউমর স্ক্যানার টিমের দাবি
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এনসিপির ইফতার মাহফিলে নাহিদ ইসলাম ও শফিকুর রহমানের চুম্বনের ভাইরাল দৃশ্যটি বাস্তব নয়। বরং, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই দৃশ্যতে এআই-জনিত একাধিক অসংগতি পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া, সেদিনের অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি পর্যালোচনায়ও এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ মেলেনি।

বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে রিউমর স্ক্যানার টিম এনসিপির আয়োজিত ইফতার মাহফিলের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও প্রতিবেদন ছাড়াও, মাহফিলে উপস্থিত ব্যক্তিদের ফেসবুকে শেয়ার করা ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করা হয়। তবে কোথাও এমন কোনো দৃশ্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এমন দৃশ্যের প্রমাণ না পাওয়ায় রিউমর স্ক্যানার টিম ভাইরাল ছবিটি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে। পর্যবেক্ষণে বেশ কিছু অসংগতি ধরা পড়ে, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা তৈরি ছবির ক্ষেত্রে দেখা যায়।

প্রথমত, ছবিতে নাহিদ ইসলাম ও শফিকুর রহমান—দুজনের হাতেই ঘড়ি দেখা যায়। তবে সেদিনের একাধিক ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নাহিদ ইসলামের হাতে কোনো ঘড়ি ছিল না। দ্বিতীয়ত, ছবিতে শফিকুর রহমানের বাম হাতে একটি আংটি দেখা গেলেও ইফতার মাহফিলের ছবি পর্যবেক্ষণে তার হাতে কোনো আংটির অস্তিত্ব মেলেনি।

এছাড়া, ছবিতে থাকা দুই ব্যক্তির হাতের গঠনে লক্ষণীয় অসংগতি রয়েছে। তুলনা করে দেখা গেছে, হাতের কিছু বৈশিষ্ট্য নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আংশিক মিলে গেলেও ৬৬ বছর বয়সী শফিকুর রহমানের হাতের সঙ্গে ছবির হাতের কোনো মিল নেই। বরং, ছবিতে থাকা হাত তুলনামূলকভাবে মসৃণ, বলিরেখাহীন এবং তরুণদের হাতের মতো দেখাচ্ছে। সাধারণত ৬৬ বছর বয়সে হাতের চামড়ায় ভাঁজ ও বলিরেখা দেখা যায়, যা সেদিনের ছবি পর্যালোচনায় শফিকুর রহমানের হাতেও প্রতীয়মান হয়েছে।

এসব অসংগতি দেখে রিউমর স্ক্যানার নিশ্চিত হয় যে ছবিটি আলোচিত ইফতার মাহফিলের কোনো ভিডিওর ওপর এআই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে তৈরি করা হয়েছে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে, ‘Chemical Ali’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একই চুম্বনরত দৃশ্যের একটি ভিডিও পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে, ‘Muhammad Ferdous Pramanik’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১১ মার্চ প্রকাশিত মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। মূল ভিডিওটিতে দেখা যায়, নাহিদ ইসলাম ও শফিকুর রহমান কেবল চেয়ার বদল করছিলেন। একই ভিডিও সেদিন দৈনিক ইত্তেফাকের ফেসবুক পেজ থেকেও প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়া, সেদিন নাহিদ ইসলাম ও শফিকুর রহমানের চেয়ার বদলের পুরো ঘটনার ভিডিও পর্যালোচনা করেও তাদের চুম্বনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, ওই ইফতার মাহফিলের একটি ভিডিও সংগ্রহ করে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করা হয়েছে এবং সেটিই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

সুতরাং, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ছবি এনসিপির ইফতার মাহফিলে নাহিদ ইসলাম ও শফিকুর রহমানের চুম্বনরত বাস্তব দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

‘মোদি’ কি এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন?

রমজান এলেই ব্যবসায়িক চাঙা ভাব দেখা যায় বাংলাদেশ ও কলকাতার নিউ মার্কেটে। একসময় রমজান মাসে নিউ মার্কেটের দোকানগুলো থাকত সরগরম, পা ফেলার জায়গা মিলত না। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলত বেচাকেনা।

কিন্তু এবার দৃশ্যপট পুরোপুরি ভিন্ন। নিউ মার্কেটের অলিগলিতে যেন নীরবতা নেমে এসেছে, কোথাও কোনো কোলাহল নেই। এর পেছনে বড় কারণ ভারত সরকারের নেওয়া কঠোর ভিসানীতি। প্রতিবেশী বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে মোদি প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেয়।

পর্যটন ও মেডিকেল ভিসাতেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ফলশ্রুতিতে কলকাতার ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। নিউ মার্কেট, ট্রেজার আইল্যান্ড, সিম্পার মল—সব জায়গায় বাংলাদেশি ক্রেতার অভাবে বেচাকেনা স্থবির।

ব্যবসায়ীদের মতে, নিউ মার্কেটের মোট ব্যবসার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ নির্ভর করত বাংলাদেশি ক্রেতাদের ওপর, যা রমজানে আরও বেড়ে যেত। এবার সেই চিত্র উল্টো—হোটেল খালি, দোকান বন্ধ, পরিবহন ব্যবসাও ঝুঁকির মুখে।

কলকাতার প্রায় ১০০টির বেশি হোটেল এবং ৩,০০০ দোকান বাংলাদেশি ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল। অনেকে দোকান ভাড়া চালাতে পারছেন না, কেউ কেউ দোকান বন্ধ করতেও বাধ্য হচ্ছেন। ক্ষোভ জমছে ব্যবসায়ীদের মনে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে এই পরিস্থিতি তৈরি করায় মোদি প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ অনেকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদি প্রশাসন বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের আশায় এই কৌশল নিয়েছে, কিন্তু এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে বড় আঘাত এসেছে।

এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মোদি সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত সমাধান চান, কিন্তু মোদি প্রশাসন তাদের অভিযোগ শুনবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।