স্কুলের বই বিতরণ অনুষ্ঠানে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, অতঃপর…

রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ অনুষ্ঠানে পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৮ মার্চ) সকাল ১০টায় খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এতে আহত পাঁচ ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ কার্যক্রম পণ্ড হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা বই নিতে এসে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যায়। এ ঘটনায় স্কুল কমিটির পক্ষ থেকে পবা থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কে হবেন? তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নওহাটা পৌর বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এর মধ্যে কয়েক দিন আগে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি মনোনীত হন নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম। নতুন সভাপতি হওয়ায় তাকে নিয়ে শনিবার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণের আয়োজন করেন প্রধান শিক্ষক।

খবর পেয়ে আরেক পক্ষ নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র মকবুল হোসেন গ্রুপের নেতাকর্মীরা গিয়ে স্কুলে জড়ো হন। একপর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে রফিকুল গ্রুপের সঙ্গে মকবুল গ্রুপের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বাগসারা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, নতুন সভাপতিকে নিয়ে বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিতি সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে মারধরের কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

তবে বিদ্যালয়ের নতুন সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পৌরসভার সাবেক মেয়রের লোকজন বই বিতরণে বাধা দিতে এসেছিল। আমরা প্রতিহত করতে গেলে সামান্য ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।’

পবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় একপক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুনেছি বিবদমান গ্রুপের নেতারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নেবেন।’

’তুয়ি কে, আমি কে, আছিয়া আছিয়া’- স্লোগানে উত্তাল রাবি!

দেশে চলমান ধর্ষণ প্রতিরোধ, ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত ও সার্বিক নিরাপত্তার দাবিতে ৮ মার্চ বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় মিছিল শুরু হয়ে ছাত্রী হলগুলোর সামনে দিয়ে অতিক্রম করে। দলে দলে সেখানে ছাত্রীরা যুক্ত হয়। ৮ টার দিকে মিছিলটি জোহা চত্বরে সমবেত হয়।

এসময় শিক্ষার্থীদের স্লোগান ছিল – ‘তুমি কে আমি কে, আছিয়া আছিয়া’ , ধর্ষিতার কান্না, আর না আর না’, ‘ধর্ষকের শাস্তি, মৃত্যু মৃত্যু’, ‘ধর্ষকের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে জবাই কর’, ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’। মিছিলে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকরাও ছিলেন সরব।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘এই দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য উদ্যেশ্য প্রণোদিতভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মা বোনদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

নতুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা বার বার বলতে চাই আপনারা যদি আমার বোনদের ও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে এই দেশের শাসনভার চালানোর অধিকার আপনারা হারিয়ে ফেলেছেন। আপনারা যদি শাসনভারে থাকতে চান তাহলে অতি শীঘ্রই আমার বোনদের ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে বাংলাদেশ থেকে ধর্ষককে বিতাড়িত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’

এবার দীর্ঘ ৪০ বছর পর ভাগ্য খুলছে ইবতেদায়ী শিক্ষকদের!

অবশেষে ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে। এমপিওভুক্তির প্রস্তাবের ফাইলে স্বাক্ষর করে গেছেন বিদায়ি শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এখন প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পেলেই এই শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হবেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিজের শেষ কর্মদিবসে বুধবার (৫ মার্চ) ওই ফাইলে স্বাক্ষর করেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর পর এক হাজার ৫১৯ ইবতেদায়ি মাদরাসার ছয় হাজারের বেশি শিক্ষকের ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে।

এমপিওভুক্ত (বেসরকারি) শিক্ষকদের উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা, বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে বিদায় এবং নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা জানান।

বিদায়ি উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমি সবাইকে আশ্বাস দিয়েছিলাম, সাধ্যমতো এ বছর এবং আগামী বছরের বাজেটে যতটুকু অর্থ সংকুলন করা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আমরা যত দূর পারি চেষ্টা করব দাবিগুলো মেটাতে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘কিন্তু ১৫-২০ বছরের বঞ্চনা দু-এক বছরের বাজেট দিয়ে তো মেটানো যায় না। এটা বোঝানো খুব কঠিন। আজই বেসরকারি বেতন সরকারি বেতনের সমান করে দিতে হবে— এটা ন্যায্য দাবি বুঝলাম, কিন্তু এক বছরের বাজেট দিয়ে কিভাবে ১৫ বছরের বৈষম্য ঠিক করা যায়? কিন্তু শুরুটা করা দরকার। সেই শুরুটা আমরা করে দিয়ে যাচ্ছি।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘তাঁদের (এমপিওভুক্ত শিক্ষক) উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা—এ বছরের ঈদুল আজহা থেকে শুরু করে আগামী বছরের বাজেট থেকে অন্তত কিছু বাড়াতে পারব, এখানেও আমি ঘোষণা দিচ্ছি না কত বাড়াব। আমি জানি সেটুকু বাজেটের মধ্যে এ বছর এবং আগামী বছরের বাজেটের মধ্যে প্রভিশন রাখা হচ্ছে।

শিক্ষকদের অবসর এবং কল্যাণ ভাতার জন্য একটা তহবিল তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে বিদায়ি উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বছরই কিছুটা তৈরি করা হয়েছে। আগামী বাজেটে আরো রাখা হবে। তবে পুরো ফান্ড টেকসই করতে হলে দু-একটা বাজেটে হবে না, ভবিষ্যতে তিন-চারটা বাজেটে আশা করি এটার সমাধান হয়ে যাবে।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কল্যাণ ভাতা এবং অবসর ভাতা—এটা হলো তাঁদের সবচেয়ে ন্যায্য দাবি। কিন্তু তাঁরা তো সংঘবদ্ধ নন। তাঁরা রাস্তায়ও কোনো দিন নামেননি। কিন্তু আমি তো মনে করেছিলাম তাঁদের ওই দাবিটাই সবচেয়ে আগে মেটানো উচিত।’

তিনি বলেন, ‘দেশের অনেক ইবতেদায়ি মাদরাসা আছে। এর মধ্যে অনেক অনানুষ্ঠানিক। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানের নথি (রেজিস্ট্রেশন) আছে। সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মতো তারা বাংলা, ইংরেজি গণিত পড়াচ্ছে, অবকাঠোমো শিক্ষক থাকার পরও এমপিওভুক্ত করা হয়নি। তাঁদের এমপিওভুক্ত করা সম্ভব। সেই কাজ আমি করে দিয়েছি।’

গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শেষ দিন সেই ফাইলে স্বাক্ষর করে গেছেন বিদায়ি শিক্ষা উপদেষ্টা। সেই ফাইল এখন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। তাঁর সম্মতি মিললে শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি হিসেবে বেতন-ভাতা পাবেন।

এইচএসসির ফরম পূরণ: ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীকে ‘জিম্মি’ করে ৬ মাসের অগ্রিম বেতন আদায়!

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২৬ জুন। পরীক্ষায় অংশ নিতে নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এখন ফরম পূরণে ব্যস্ত। কিন্তু শিক্ষাবোর্ডের ‘দায়সারা’ বিজ্ঞপ্তিকে ঢাল বানিয়ে তাদের কাছ থেকে সাত মাসের বেতনের টাকা একসঙ্গে আদায় করা হচ্ছে। অল্প সময়ে অনেকে একসঙ্গে এত টাকা জোগাড় করতেও চরম বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো সন্তানের ফরম পূরণের সঙ্গে অগ্রিম বেতন পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন আবদারে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

তারা বলছেন, এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর পরও কলেজ থেকে কেন মাসিক বেতন চাওয়া হচ্ছে, তার কারণ বুঝতে পারছেন না তারা। সেটাও একমাসের নয়, তিন মাসের বাড়তি বেতন নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত মাসের বেতনের টাকা একসঙ্গে অগ্রিম আদায় করা হচ্ছে। অগ্রিম বেতন পরিশোধ না করলে আটকে দেওয়া হচ্ছে ফরম পূরণ। এতে চরম আর্থিক চাপে পড়েছেন তারা। ফরম পূরণে বাড়তি ও অগ্রিম বেতনের টাকা নেওয়া বন্ধে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ চান শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সব শিক্ষাবর্ষে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। সেসব বাদ দিয়ে প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন বলে জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। ফলে ১৫ লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরম পূরণের সময় আদায় করা হচ্ছে অগ্রিম বেতন।

জানা যায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাই এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ২০২৩ সালের জুন মাসে তাদের শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভর্তি করা হয়েছিল ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। আর ক্লাস শুরু হয়েছিল অক্টোবরে। সেসময় তাদের অক্টোবর মাস (২০২৩) থেকে বেতন নেওয়া হয়। একাদশ থেকে দ্বাদশ, সবশেষ নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা এখন এইচএসসির চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ৯টি শিক্ষ বোর্ড এইচএসসির ভর্তি ফরম পূরণের নির্দেশিকা জারি করে। তাতে বলা হয়, ২ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ফি দিতে হবে ২ হাজার ৭৮৫ টাকা। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পরীক্ষার্থীদের ফি দিতে হবে ২ হাজার ২২৫ টাকা।

তবে ফরম পূরণের ফির সঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অগ্রিম বেতন আদায় করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মেনেই তারা মোট ২৪ মাসের (একাদশ-দ্বাদশ) বেতন নিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীসহ সারা দেশের প্রায় সব কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অগ্রিম বেতন আদায় করছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হামদর্দ কলেজসহ বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি কলেজের বিজ্ঞপ্তি জাগো নিউজের হাতে এসেছে। সেখানে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেতন পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করতে দিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ।

ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর হতে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১৭ মাস বেতন আদায় করা হয়েছে। বাকি সাত মাসের (মার্চ-সেপ্টেম্বর) বেতনের টাকা ফরম পূরণের সময় একসঙ্গে দিতে হবে। সম্পূর্ণ ফি পরিশোধ না করা পর্যন্ত ফরম পূরণ করতে দেওয়া হবে না।

ভিকারুননিসার মূল শাখায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীর মা তাহেরা আক্তার রূপা জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষাবর্ষ দেরিতে শুরু করার পেছনে তো আমাদের দায় নেই। তারা দেরিতে একাদশে ভর্তি করিয়েছেন। এখন ১৫-১৬ মাস ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেন। কিন্তু ২৪ মাসেরই বেতন দিতে হবে। তার মধ্যে ৬-৭ মাসের বেতন অগ্রিম নেওয়া হচ্ছে। ভিকারুননিসায় ৭ মাসের বেতন বাবদ আমাদের একসঙ্গে ১৪ হাজার ৭০০ টাকা দিতে হচ্ছে। তার সঙ্গে ফরম পূরণ ফি ২ হাজার ৭৮৫ টাকা। সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা লাগবে। এটা দুই-তিনদিনের মধ্যে পরিশোধ করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। এটা তো এখন বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্য।’

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক সাব্বিন হায়দার বলেন, ‘মেয়ের ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেখি সাত মাসের বেতন আগাম চাইছে। বললাম হঠাৎ এত টাকা আমরা দেবো কীভাবে? শিক্ষকরা উল্টো রাগ দেখিয়ে বলেছেন, তাহলে এ কলেজে ভর্তি করছেন কেন?’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমাদের মতো যাদের আয়, তাদের পক্ষে মাসে মাসে দুই হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়তো সম্ভব। কিন্তু একসঙ্গে ৭ মাসের বেতনের ১৪ হাজার টাকা এবং ফরম ফিলআপের ফি পরিশোধ করতে গেলে তো ধারদেনা করা ছাড়া উপায় নেই। রমজান মাস, সামনে ঈদ। আবার ফরম পূরণ না করলে তো মেয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে না। বাধ্য হয়ে সব টাকা দিয়েছি। এটা তো একরকম জিম্মি করা। এত আন্দোলন, বৈষম্য নিয়ে কথা; তারপরও দেশে সেই শিক্ষার বাণিজ্য তো চলছেই।’

ফরম পূরণে অগ্রিম ৭ মাসের বেতন আদায়কে শিক্ষার নীতিহীন ব্যবসা বলে মনে করেন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কলেজের শিক্ষাবর্ষ শেষ হয় ৩০ জুন। এবার পরীক্ষা শুরু হবে ২৬ জুনে। তাহলে পরীক্ষার পর কলেজে কি ক্লাস চলবে? যদি ক্লাস না চলে তাহলে শিক্ষার্থীরা বেতন কেন দেবে? স্কুল-কলেজের এ ব্যবসা আর কতদিন এ দেশে চলবে? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরও এমন শিক্ষার বাণিজ্য কেন? আমরা পরীক্ষা শুরুর পর বেতন আদায়ের অন্যায় আবদারের প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষাপ্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছি।’

‘কলেজেরও তো আয় দরকার’
ভর্তি নির্দেশিকায় থাকা নির্দেশনা মেনে বেতন আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কলেজের অধ্যক্ষরা। আর শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, একাদম-দ্বাদশ দুই বছরের। সেই হিসাবে ২৪ মাসে শিক্ষাবর্ষ। ২৪ মাসের বেতনের টাকা না পেলে কলেজগুলো বিপদে পড়বে। তাদের ভাষ্য, ‘কলেজগুলোরও তো আয়ের দরকার আছে।’ জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা বোর্ড যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে ২৪ মাসের বেতন নিতে বলা হয়েছে। আমরা নিয়মের বাইরে কিছু করছি না।’

একসঙ্গে অগ্রিম ৭ মাসের বেতন আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফরম পূরণের পর শিক্ষার্থীরা আর কলেজে আসে না। এখন বেতন না নিয়ে নিলে সেটা তোলা কষ্টকর। সেজন্য ফরম পূরণের সঙ্গে সব নিয়ে রাখা হচ্ছে।’ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, ‘একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি দুই বছরের। সেজন্য ২৪ মাসের বেতন নিতে বলা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব জায়গায়ই তো এমন হয়।’

শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেছে এবং পরীক্ষা দিয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তাহলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেতন আদায়ের যৌক্তিকতা কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তো আগের নিয়ম। বরাবরই ২৪ মাসের বেতন নেওয়া হয়। কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় চলে। তাদেরও আয়ের প্রয়োজন আছে। তাদের তো বছরের ১২ মাসই শিক্ষকদের বেতন দিতে হয়। সেজন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও পুরো দুই বছরের (১২+১২ মাস) বেতনের টাকা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছি আমরা।’ ক্লাস বন্ধ এবং পরীক্ষার পরও বেতন আদায়ে শিক্ষা বোর্ডের এমন অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ড যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে কিছুটা কনসিডার (ছাড়) দেওয়ার সুযোগ আছে কি না, তা কথা বলে দেখবো। সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে।’

সমালোচনার ফলে স্কুল ভর্তিতে ৫ শতাংশ কোটার সেই আদেশ বাতিল!

সমালোচনার ফলে স্কুল ভর্তিতে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবারের সন্তানদের সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটার সেই আদেশ বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে কোটার স্থলে নতুন করে প্রতি শ্রেণিতে একটি করে আসন বেশি রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সোমবার আগের আদেশ বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করেছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব (মাধ্যমিক-১) মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সরকারি স্কুলের ভর্তিতে লটারির জন্য নির্ধারিত আসন সংখ্যার অতিরিক্ত প্রতি শ্রেণিতে ১ জন করে ভর্তির জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে।

এতে আরও বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ এ আহত/ শহীদ পরিবারের সদস্যদের আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র/গ্যাজেটের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে এবং ভর্তির সময় মূল কপি প্রদর্শন করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে ইস্যুকৃত জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এ শহীদদের গেজেট যথাযথভাবে যাচাই করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ এ আহত/ শহীদ পরিবারের সদস্যদের পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে উক্ত আসনে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না।

এর আগে গত ২রা মার্চ একটি আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটার মতো ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবারের সন্তানদের সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটা পাবে।

এমপিওভুক্ত নিয়ে শিক্ষকদের জন্য আসলো বিশাল ‘সুখবর’

দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজে নতুন নিয়োগ পাওয়া তিন হাজার ২০৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)।

তাদের মধ্যে স্কুলে দুই হাজার ৫৭৯ জন এবং কলেজের ৬২৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। একই সঙ্গে ২ হাজার ৮৪২ জনকে উচ্চতর স্কেল ও ১৩০ জন স্কুল শিক্ষককে বিএড স্কেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাউশির এমপিও কমিটি। রোববার (১২ জানুয়ারি) মাউশির জানুয়ারি মাসের এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পদাধিকার বলে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম। এ সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, মাউশি অধিদপ্তরের ৯ আঞ্চলিক পরিচালক ও উপ-পরিচালক এবং অধিদপ্তরের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কোন অঞ্চলের কতজন এমপিওভুক্ত
সভায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানান, স্কুলের ৩ হাজার ২০৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের ১৩০, চট্টগ্রামের ১২৭, কুমিল্লার ১৪৮, ঢাকার ৭২৬, খুলনার ৩৭৭, ময়মনসিংহের ১৬৪, রাজশাহীর ৬৬৮, রংপুরের ১৭৫ এবং সিলেটের ৬৪ জন তালিকায় রয়েছেন।

অন্যদিকে কলেজের ৬২৭ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের ৪৫, চট্টগ্রামের ৪৩, কুমিল্লার ৫২, ঢাকার ১০১, খুলনার ৭৭, ময়মনসিংহের ৬৭, রাজশাহীর ৭৬, রংপুরের ১১০ এবং সিলেট অঞ্চলের ৫৬ জন রয়েছেন।

উচ্চতর স্কেল পাচ্ছেন ২৮৪২ জন
এদিকে বেসরকারি স্কুল-কলেজের ২ হাজার ৮৪২ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমপিও কমিটি। তাদের মধ্যে স্কুলের ২ হাজার ৩৫৯ জন এবং কলেজের ৪৮৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। সভায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানান, উচ্চতর গ্রেড পাওয়া স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের ৩৩১,

চট্টগ্রামের ১২৩, কুমিল্লার ৯৭, ঢাকার ৫০২, খুলনার ৪২৫, ময়মনসিংহের ১৪৯, রাজশাহীর ৪৬৯, রংপুরের ১৭৩ এবং সিলেটের ৯০ জন রয়েছেন। অন্যদিকে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের ৩৯, চট্টগ্রামের ১৭, কুমিল্লার ৪১, ঢাকার ৪৮, খুলনার ২৬, ময়মনসিংহের ৯, রাজশাহীর ২৪৭, রংপুরের ৩৯ ও সিলেট অঞ্চলের ১৭ জন রয়েছেন।

বিএড স্কেল পাচ্ছেন ১৩০ জন
বেসরকারি স্কুলে কর্মরত ১৩০ জন শিক্ষককে বিএড স্কেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএড স্কেল পাওয়া স্কুল শিক্ষকের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের ৬ জন,

চট্টগ্রামের ৫, কুমিল্লার ৯, ঢাকার ৬৪, খুলনার ১৫, ময়মনসিংহের ৫, রাজশাহীর ১৪, রংপুরের ১১ এবং সিলেট অঞ্চলের ১ জন শিক্ষক আছেন।

এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় ও রুটিন নিয়ে যা জানা গেলো

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আগামী জুনের শেষ সপ্তাহে শুরু হবে। এ জন্য পরীক্ষার রুটিন প্রস্তুতের কাজ চলছে। মঙ্গলবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার এ তথ্য জানিয়েছেন।

আবুল বাশার বলেন, জুনের শেষ সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য সূচির (রুটিন) খসড়া প্রস্তুতের কাজ চলছে। আশা করছি, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সম্ভাব্য পরীক্ষা সূচি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হবে ২ মার্চ থেকে। আর ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এইচএসসির নির্বাচনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে কলেজগুলোকে। এরপর ফরম পূরণ শুরু হবে।

সাধারণত, এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারির শুরুতে ও এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলের শুরুতে হতো। কিন্তু করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে পুরো শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে।

২০২৪ সালের ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। তবে আন্দোলনের জেরে মাঝপথে এসে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বাকি পরীক্ষাগুলো নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলো না দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করেন পরীক্ষার্থীরা। পরে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার নম্বর বিবেচনায় নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ১৫ অক্টোবর ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে পাস করে ৭৭.৭৮% শিক্ষার্থী।

নতুন বছরে বই উৎসব নিয়ে এনসিটিবির সব পরিকল্পনা ব্যর্থ!

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নতুন বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিন দু-তিনটি বই তুলে দিতে নানা পরিকল্পনা করেছিল এনসিটিবি। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনাও সফল হয়নি। কোন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কবে বই পাবে, তা জানাতে পারছে না স্কুলগুলো। এত দিন বছরের প্রথম দিন বই উৎসব অনেকটা সর্বজনীন উৎসবের মতো ছিল। এ বছর বই ছাপতে দেরি হওয়ায় হচ্ছে না সেই উৎসব।

আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে এনসিটিবি সব বইয়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা শেষ করতে ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করবেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তবে এই অনলাইন বই ডাউনলোড করে শিক্ষার্থীদের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বেশির ভাগ বই এরই মধ্যে ছাপা হয়েছে এবং তা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ফলে এই তিন শ্রেণির বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বছরের প্রথম দিন বই পাবে। তবে অন্যান্য শ্রেণির কত শতাংশ বই ছাপা হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির বই বেশির ভাগ স্কুলই পায়নি। তবে রাজধানী, বিভাগীয় ও জেলা শহরের কিছু স্কুলে কয়েকটি শ্রেণির তিনটি বিষয়ের স্বল্পসংখ্যক বই তারা পেয়েছে। কিন্তু এভাবে বিক্ষিপ্তভাবে পাঠানো বই কিভাবে স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে দেবে, তা তারা বুঝতে পারছে না। তারা আরো বই পাওয়ার অপেক্ষা করছে। মফস্বল ও দূরের স্কুলগুলো চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির কোনো বই পায়নি।

এতে স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের জানাতে পারছে না কবে তারা তাদের হাতে বই তুলে দিতে পারবে। জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ প্রায় শেষ এবং উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেও গেছে। অন্যান্য শ্রেণির কিছু না কিছু বই আমরা প্রতিটি উপজেলায় পাঠাতে চেষ্টা করেছি। ১ জানুয়ারি আমরা ৪৫৫টি বইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করছি। আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে আমরা সব বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।’

সূত্র জানায়, সংগত কারণেই এ বছরের বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়নে দেরি হয়েছে। তারপর আবার দরপত্রসহ নানা প্রক্রিয়া শেষ করতেও দেরি হয়েছে। ফলে আগে থেকে সংশ্লিষ্ট সবাই আশঙ্কা করেন, এবার বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। এ জন্য শিক্ষার্থীরা যাতে অন্তত তিনটি করে বই পায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বলা হয়। কিন্তু এনসিটিবি সেসব কথায় গুরুত্ব না দিয়ে তাদের মতো চলতে থাকে। যদিও শেষের দিকে এসে তিনটি করে বই দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এমনকি প্রেস মালিকদের চাপ দিতে থাকে। কিন্তু বছরের শেষ দিনে এসে এনসিটিবির সব পরিকল্পনাই ব্যর্থ হয়।

শিক্ষকরা বলছেন, গত দুই বছর নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ালেখা করেছে শিক্ষার্থীরা। সেখানে ভিন্নধর্মী পড়ালেখায় শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো চাপ নিতে হয়নি। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যেতে হয়েছে। এতে এমনিতেই বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী তাল মেলাতে পারছে না। তারা এ বছরের বার্ষিক পরীক্ষায় খুব খারাপ করেছে। এখন যদি আবার বই পেতে পেতে আরো দুই মাস চলে যায়, তাহলে বড় ধরনের শিখন ঘাটতিতে পড়বে শিক্ষার্থীরা।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীসংখ্যা চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩। তাদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা ছাপা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ বেশ আগেই শুরু হয়েছে। এই বইয়ের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। এরপর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কার্যাদেশ ও চুক্তিপত্র শেষে দুই সপ্তাহ আগে তা ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। এই বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। গত সপ্তাহের শেষ দিকে চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের ছাপা শুরু হয়েছে। এ সপ্তাহে নবম ও দশম শ্রেণির বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। তবে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এক বছর বই পড়ে এসএসসি পরীক্ষায় বসবে বলে তাদের বইয়ের কাজ আগে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রেস মালিকরা বলছেন, আমাদের প্রেসের প্রতিদিন দুই লাখ বই ছাপার সক্ষমতা। আমরা শত চেষ্টা করেও এর বেশি বই ছাপতে পারব না। কিন্তু এনসিটিবি একসঙ্গে সব বইয়ের কার্যাদেশ দিয়ে সব বইয়ের ছাপার কাজ শেষ করতে বলছে। তারা ব্যাপারটি বুঝেও না বোঝার ভান করছে। আগে প্রতিটি শ্রেণির বইয়ের কার্যাদেশ পর্যায়ক্রমে দেওয়া হতো। এতে একটি শ্রেণির বইয়ের কাজ শেষ করে আরেকটি ধরা যেত। কিন্তু এবার তা না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বই দিতে দেরি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবছর সাধারণত জুলাই-আগস্ট থেকে পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর পরও ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বই দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এনসিটিবিতে অনেক পরিবর্তন আসে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, সদস্য ও অন্য কর্মকর্তারা পরিবর্তন হন। এরপর আবার আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়া হয়। পাঠ্যক্রমেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে পাণ্ডুলিপি পরিমার্জনেও বেশ সময় লাগে। এরপর আবার এনসিটিবির নতুন কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও পরিকল্পনার অভাবে পাঠ্যবইয়ের কাজ বেশ কিছুটা পিছিয়ে যায়।

২২ দিন সব কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ!

সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ১ জানুয়ারি থেকে

আগামী ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যক্তি বা

প্রতিষ্ঠান পরিচালিত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যারা এই সিদ্ধান্ত অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৭ জানুয়ারি (শুক্রবার সকাল ১০টায় শুরু হবে পরীক্ষা) অনুষ্ঠিত হবে। ১৯টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে এ পরীক্ষা।

যেসব পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এবারের নতুন পাঠ্যবই!

শিক্ষাপঞ্জি মেনে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হচ্ছে। এবার ৪০ কোটির বেশি বই ছাপানো হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, নতুন পাঠ্যবইয়ে সাহিত্যের পাশাপাশি ইতিহাস বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষণা, শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানসহ বেশ কিছু বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। জানা গেছে, নতুন ৪০ কোটি বই এর মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৯ কোটি ৬৪ লাখের মতো। আর মাধ্যমিকে (মাদরাসার ইবতেদায়িসহ) মোট বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখের মতো।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকার এক যুগ আগে তৈরি পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে জন্য এনসিটিবি ৪১ বিশেষজ্ঞ দিয়ে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছে। এতে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা। পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ের নতুন বইয়ে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক অধ্যায়ের প্রথম অংশে প্রথমে রয়েছে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি।

পাশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। জাতীয় চার নেতার ছবিও রয়েছে। পুরোনো বইয়ে একই স্থানে শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ছবি ছিল। নতুন বইয়ে একই অধ্যায়ের ‘পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা’ শীর্ষক লেখায় বলা হয়েছে, ‘…পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল “অপারেশন সার্চলাইট”। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। ২৬শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারো স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।’ একই বিষয়ের পুরোনো বইয়ে এই অংশে ছিল, ‘…পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল “অপারেশন সার্চলাইট”।

ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।…’ চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়েও স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি রয়েছে। নতুন বইয়ে এই অধ্যায়ের ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক লেখায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবির পাশাপাশি মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার ছবি স্থান পেয়েছে। এখানে বিষয়বস্তু হিসেবে বলা হয়েছে, ‘…এ রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ২৬শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারো স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’

পুরোনো বইয়ে এ–সংক্রান্ত লেখায় শুধু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি ছিল। আর স্বাধীনতার ঘোষণা–সংক্রান্ত স্থানে লেখা ছিল, ‘এ কালরাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগে অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ওয়্যারলেস বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এর ভিত্তিতে ২৬ মার্চ শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

এছাড়া পাঠ্যবই থেকে ইতিহাসবিষয়ক আরো কিছু বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। এতদিন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও পতাকা নির্মাণের নিয়মাবলি এবং জাতীয় সংগীত বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদের ঠিক পরের পৃষ্ঠায় ছিল। কিন্তু নতুন বাংলা বইয়ে তা পুনর্বিন্যাস করে বইয়ের শেষ প্রচ্ছদের আগের পৃষ্ঠায় নেয়া হয়েছে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ছয়টি প্রবন্ধ, কবিতা বা ছড়া নতুন করে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক প্রবন্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবিসহ এই গণ-অভ্যুত্থানে সব শহিদকে স্মরণ করে লেখা যুক্ত হয়েছে।

এই প্রবন্ধে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহিদ মীর নিসার আলী তিতুমীর থেকে শুরু করে এ বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থান পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শহিদদের স্মরণ করা হয়েছে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তনের বিষয়ে জানান, জুলাই বিপ্লবের পর বিপ্লবের গ্রাফিতিসহ বিষয়গুলোকে স্থান দেওয়ার একটি গণদাবি ছিল। এবার ইতিহাসের বইয়ে না দিয়ে বাংলা–ইংরেজি বইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধে অন্য নায়কদের আগে অবহেলা করা হয়েছে। এবার তাদেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অতিবন্দনা পরিহার করা হয়েছে। পাঠ্যবইকে রাজনৈতিক দলের প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বন্ধ করা হয়েছে। তবে গতবারের মতো এবারো থাকছে পাঠ্যবইয়ের ঘাটতি। বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে ৪০ কোটি ১৬ লাখ পাঠ্যবই প্রয়োজন। ছাপাখানার মালিক, মুদ্রণ শিল্প সমিতি ও এনসিটিবি সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৭ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ কোটি বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানোর জন্য ছাড়পত্র বা পিডিআই হয়েছে। এখনো ৩৩ কোটি বই ছাপানোই বাকি। ফলে এবার নতুন বছরের প্রথম দিনে সারা দেশে সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে না।

ছাপাখানাগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১১৬টি ছাপাখানায় ২৪ ঘণ্টা বিরামহীন পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। তবে ছয় মাসের কাজ এক মাসে শেষ করতে সরগরম ছাপাখানাগুলো। কোনো ফুরসত নেই শ্রমিকদের। মিনিটে মিনিটে বেরিয়ে আসছে ছাপা কাগজ। অন্যপাশে চলছে বাঁধাইয়ের কাজ। ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু হয়েছিল।

তারপরও সবার হাতে সব বই পৌঁছাতে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এবার মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপাতে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ (নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড বা নোয়া) দেওয়া হয় ১০ ডিসেম্বর থেকে। কাগজসংকট না থাকলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০ লাখ কপি পাঠ্যবই পাঠানোর সক্ষমতা আছে ছাপাখানাগুলোর। ছাপাখানার মালিক, মুদ্রণ শিল্প সমিতি ও এনসিটিবি কর্মকর্তারা বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জন, আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া, দেরি করে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা, বিলম্বে নোয়া (নোট অব অ্যাওয়ার্ড) দেওয়াসহ ছাপাসংক্রান্ত কাজে বিলম্বের কারণে এবার এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখনো বেশ কিছু পরিমাণ বই ছাপার জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তিপত্র সইয়ের কাজটিও শেষ হয়নি। ফলে আগামী মার্চ মাসের আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছানো কঠিন হবে।